Published : 29 Jan 2025, 06:53 PM
ট্রাক চালককে আটকের পর পায়ে গুলি ও নির্যাতনের অভিযোগে সিরাজগঞ্জের দুই থানার ১৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী গোলাম হাফিজ কিরণ বুধবার বলেন, ভুক্তভোগী ট্রাক চালক রোকন মোল্লা বাদী হয়ে মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা আমলি আদালতে মামলাটি করেন। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও নয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
আইনজীবী বলেন, আদালত নিয়মিত মামলা হিসেবে তা নথিভুক্ত করে তদন্তের জন্য জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদী রোকন মোল্লা (৩৬) পাবনার ফরিদপুর উপজেলার নেছরাপাড়া এলাকার রহমত মোল্লার ছেলে।
মামলার আসামিরা হলেন- সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম, সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক, সলঙ্গা থানার সাবেক পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ তাজউদ্দিন আহমেদ, উল্লাপাড়া থানার সাবেক এসআই আব্দুস সালাম, সলঙ্গা থানার সাবেক এসআই মনসুর রহমান ও এএসআই আব্দুল কুদ্দুস।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ মে রাত ১টার দিকে ট্রাক চালক রোকন মোল্লা বগুড়া থেকে পাবনা যাচ্ছিলেন। পথে পাবনা-নগরবাড়ি মহাসড়কের উল্লাপাড়ার কাওয়াক মোড়ে রাত্রিকালীন ডিউটিরত পুলিশের একটি পিকআপের সঙ্গে ওই ট্রাকের ধাক্কা লাগে।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানার তৎকালীন ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম ট্রাক চালক রোকন মোল্লার দিকে রিভলভার তাক করেন। ওই সময় ভয়ে চালক ট্রাকটি ঘুরিয়ে সিরাজগঞ্জ রোড হাটিকুমরুলের দিকে যেতে থাকেন। পুলিশের পিকআপও তার পিছু নেয়।
সংবাদ পেয়ে সলঙ্গা থানার তৎকালীন ওসি এনামুল হকও ট্রাাকটি ধরতে পিছু নেয়। একপর্যায়ে নাটোর-বনপাড়া মহাসড়কের হরিণচড়া এলাকায় ট্রাকসহ চালক রোকন মোল্লাকে আটক করা হয়। পরে বেধড়ক মারধর করে চালক রোকন মোল্লার ডান পায়ে গুলি করা হয়।
মামলায় বলা হয়, পাশাপাশি রোকন মোল্লার বিরুদ্ধে একই দিনে সলঙ্গা থানায় অস্ত্র আইনে এবং পুলিশের কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে দুইটি এবং উল্লাপাড়ায় থানায় ডাকাতির অভিযোগে একটিসহ মোট তিনটি মামলা করে পুলিশ।
এরপর পুলিশ হেফাজতে তাকে প্রথমে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে ঢাকার অর্থোপেডিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় চালক রোকন মোল্লার ডান পায়ের হাঁটুর ওপর পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়।
আইনজীবী গোলাম হাফিজ কিরণ বলেন, পুলিশের দায়ের করা তিনটি মামলায় সাত মাস হাজতবাসের পর জামিন পেয়ে ১৯ ডিসেম্বর চালক রোকন মোল্লা কারাগার থেকে বের হয়েছেন। মেডিকেল সনদে তাকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছে বলে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন বলেন, “পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা পেয়েছি। পরবর্তীতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ বিষয়ে মামলার আসামি উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি (বর্তমানে রাজবাড়ি জেলায় রেলওয়ে পুলিশে কর্মরত) আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, “মামলার বিষয়টি শুনেছি। বাদী নিজেই একজন আন্তঃজেলা ডাকাত দলের নেতা। তার বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছয় জেলায় কমপক্ষে ২৮টি মামলা রয়েছে। ঘটনার দিন ডাকাতির অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করার সময় পায়ে গুলি করা হয়েছিল।”
আরেক আসামি সলঙ্গা থানার তৎকালীন ওসি (বর্তমানে পাবনার সিআইডিতে কর্মরত) এনামুল হক বলেন, “রোকন মোল্লা একজন দুর্ধর্ষ ডাকাত। ঘটনার দিন সে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ডাকাতি করতে এসেছিল। পালিয়ে যাওয়ার সময় সে কর্তব্যরত একদল পুলিশকে ট্রাকের নিচে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। পরে বাধ্য হয়ে তাকে পায়ে গুলি করা হয়েছিল।”