কৃষি বিভাগের দাবি হাওড়ের ৯২ শতাংশের বেশি জমির ধান ঘরে তুলেছেন কৃষক।
Published : 29 Apr 2023, 05:42 PM
সুনামগঞ্জ হাওর থেকে এবার ১০০ কোটি টাকার বেশি খড় সংগ্রহের আশা করছে কৃষি বিভাগ। এদিকে এখন পর্যন্ত হাওড়ের ৯২ শতাংশের বেশি জমির ধান ঘরে তুলেছেন কৃষক।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানকাটা, মাড়াই ও খড় শুকানোর কাজ সাচ্ছন্দে করেছেন কৃষকরা।
সুনামগঞ্জ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “হাওরাঞ্চলে ধানের মতোই মূল্যবাদ সম্পদ খড়। হাওরের ধান কাটা শেষে প্রায় চার লাখ টন খড় উৎপাদন হয়। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকার উপরে।
“তবে প্রসেসিং না জানায় কৃষকরা খড়ের সিকিভাগও সংগ্রহ করতে পারেন না। তাছাড়া এবার হার্ভেস্টারে ধান কাটার কারণে খড় কিছুটা নষ্ট হয়েছে। তবে খড় সংগ্রহের জন্য কৃষকদের মধ্যে প্রচার চালানোর কথা চিন্তা করছি আমরা।”
তিনি আরও জানান, এবার হাওরে কেবল কৃষকরাই ধান তুলে খুশি নন; ধান কেটে যারা বছরের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোরাকি সংগ্রহ করেন তারাও খুশি। অন্তত চার থেকে ছয় মাসের খোরাকি সংগ্রহ করেছেন অনেক শ্রমিক।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার আলমপুর গ্রামের শ্রমিক আল আমিন মিয়া বলেন, “আমি ১৫-২০ দিন ধান কেটে প্রায় ছয় মাসের খোরাকি সংগ্রহ করেছি। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় সহজে ধান কাটতে পেরেছি। ধান ও খড় শুকানো নিয়ে এবার কৃষককে তেমন কষ্ট করতে হচ্ছে না।”
শাল্লা উপজেলার আঙ্গারুয়া গ্রামের কৃষক দূরন্ত দাস বলেন, “ইবার দিনমাদান কুব বালা আছিল। এর লাগি আমরা তাড়াতাড়ি ধান কাটা, হুকানো খেড় তোলতাম পারছি। ইবার আমরার কুন্তা নষ্ট অইছে না।
“অন্যবার ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে যুদ্ধ কইরা কোনোমতে ধান কাটলেও গরুর খেড় সবতা নষ্ট অইযায়। ধান গ্যারা আইয়াও পইচ্যা যায়। ইবার আমরা খুশি। তবে ধানের দাম আরেকটু বেশি অইলে আমরার লাভ অইতো।”
একই উপজেলার বাহাড়া গ্রামের কৃষক ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রবীন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, “বাক্কা বছর পর আমরা বালা দিন পাইয়া বৈশাখী ঠামাইলিছি। ইবার শুধু ধানই তুলছি না খেড়ও পুইচ্যা তুলছি। গরিব শ্রমিকরাও ধান কাইট্যা খুশি, বালা খোরাকি ফাইছে।”
তবে মেশিনে ধান কাটায় খড় এবার কিছু কম হয়েছে বলে তিনি জানান।
উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র জানান, এবার প্রায় চার লাখ কৃষক পরিবার ১৪২টি ছোট বড়ো হাওরে বোরো আবাদ করেছিলেন। শুক্রবার পর্যন্ত ১২টি উপজেলায় ৯০ ভাগের বেশি ধান কাটা হয়েছে। এর মধ্যে হাওরে ধান কাটা হয়েছে ৯২ শতাংশ। হাওর ও হাওরের বাইরে মিলিয়ে ধান কাটা হয়েছে ৭৭ শতাংশ।
“এবার হাওরে ও হাওরের বাইরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর। এর মধ্যে হাওরে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর। এখন পর্যন্ত হাওরে ধান কাটা হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৮৪৬ হেক্টর।
“জেলায় এবার সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে উফশী ধান। প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার উফশী আবাদ হয়েছে। হাইব্রিড ৬০ হাজার ৮০০ হেক্টর এবং দেশি ১ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “এবার উফশীতে হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে পৌনে ৬ টন, হাইব্রিডে ফলন হয়েছে ৭ টন। উৎপাদিত ধানের পরিমাণ প্রায় ১৩ লাখ ৫৩ হাজার টন।
“উৎপাদিত ধান থেকে প্রায় ৯ লাখ টন চাল পাওয়া যাবে। যা স্থানীয় চাহিদার ৬ লাখ টন মিটিয়ে আরও ৩ লাখ টনের বেশি চাল উদ্ধৃত্ত থাকবে। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রায় কোনো প্রভাব পড়েনি। হাওরে উৎপাদিত ধানের মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি।”
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলমদ মোহাম্মদ মকসুদ চৌধুরী জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় স্বস্তিতে ধান কাটতে পেরেছে কৃষক। কোনো শ্রমিক সংকট ছিল না। প্রায় ১ হাজার হার্ভেস্টারের পাশাপাশি দুই শতাধিক রিপার যন্ত্রে ধান কাটা ও মাড়াই হয়েছে।
“ধান কাটার উদ্দেশে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে প্রায় ১১ হাজার শ্রমিক আনা হয়েছিল। স্থানীয় আরও প্রায় ৩ লাখ শ্রমিকে ধান কাটতে হাওরে পাঠানো হয়। ফলে কৃষকরা সহজে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটা শেষ করতে পেরেছেন।”
রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া থাকায় ধান কাটার পাশাপাশি মাড়াই, শুকানো ও খড় সংগ্রহের কাজও দ্রুত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।