ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখান করে শ্রমিকদের আন্দোলন-বিক্ষোভের মধ্যে সাভারের শিল্পাঞ্চলের ১৩০টি তৈরি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
শনিবার শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, “বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে ১০০টি আশুলিয়া অঞ্চলের আর বাকি ৩০টি সাভারের।”
ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা বেতনের দাবিতে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবার সাড়ে ১২ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু তা প্রত্যাখান করে গাজীপুর ও সাভার শিল্পাঞ্চলে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে শ্রমিকরা।
বিক্ষোভের মধ্যে গাড়ি ও কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেঁধেছে। এই অবস্থার মধ্যে জানমালের নিরাপত্তা ও নাশকতা এড়াতে সাভারের বেশ কিছু কারখানা তাৎক্ষণিক ছুটিও ঘোষণা করে।
শনিবার একসঙ্গে ১৩০ কারখানা বন্ধের তথ্য জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, “অনেক কারখানায় সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। তারা কার্ড পাঞ্চ করে কারখানায় ঢুকে হাজিরা দেন। কিন্তু ভেতরে আর কাজ করেন না।
“বেশকিছু কারখানায় শ্রমিকরা কাজ না করে নানাভাবে শ্রমিকদের উসকানি দেন। এসব বিবেচনায় কারখানাগুলোকে চিহ্নিত করে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সারোয়ার আলম বলেন, “আশুলিয়ার অন্যান্য কারখানাগুলোতে স্বাভাবিকভাবে কাজ চলছে। এ ছাড়া যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শিল্পাঞ্চলে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।”
সকালে আশুলিয়ার জামগড়া, ছয়তলা, বেরণ, নরসিংহপুর, সাভারের হেমায়েতপুর এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক কাজে যোগদান করতে গিয়ে ফটকে অনির্দিষ্টকালের বন্ধের নোটিশ দেখতে পায়। বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার ফটকের সামনে শ্রমিকরা জড়ো হলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে তারা চলে যায়।
কারখানার সামনে লাগানো নোটিশে লেখা রয়েছে, ৩০ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত কারখানার শ্রমিকরা বে-আইনিভাবে কাজ বন্ধ রেখে হাজিরা দিয়ে বেরিয়ে যায়। এ ছাড়া কারখানার ভিতরে ও বাহিরে ভাঙচুর, মারামারি, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
তাই, বে-আইনি ধর্মঘটের কারণে কোনো ক্রমেই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সম্ভব নয় বিধায় বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
সাভার উপজেলার জামগড়া এলাকার দি রোজ ড্রেসেস লিমিটেড, পাইয়োনওয়ার ক্যাজুয়াল ওয়্যার লিমিটেড, বেরণ এলাকার এনভয় গ্রুপের মানটা অ্যাপারেলস লিমিটেড, স্টারলিংক অ্যাপারেলস লিমিটেড, শারমিন গ্রুপের ইশায়াত অ্যাপারেলস লিমিটেড, এ এম ডিজাইন, হলিউড গার্মেন্টস লিমিটেড, নরসিংহপুর এলাকার হা-মীম গ্রুপের দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেড, পূর্ব নরসিংহপুর এলাকার বানদো ডিজাইন লিমিটেড, জিরাব এলাকার ডুকাটি অ্যাপারেলস লিমিটেড, বড় রাঙ্গামাটিয়া এলাকার টেক্সটাউন লিমিটেড, অরনেট নিট গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, কাঠগড়া এলাকার এআর জিন্স, ক্রোসওয়্যার লিমিটেড, সেইন অ্যাপারেলস, আগামী অ্যাপারেলস লিমিটেড, টেক্সটাউন লিমিটেডসহ ১৩০টি কারখানায় বন্ধের নোটিশ টানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বেরণ এলাকার এ এম ডিজাইন কারখানার শ্রমিক আয়েশা আক্তার বলেন, “বৃহস্পতিবার কারখানায় এসে কাজ যোগ দেওয়ার পরপরই ছুটি দেওয়া হয়। এরপর শ্রমিকরা সবাই বাসায় ফিরে যায়। শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ গেছে। আজ সকালে কারখানার সামনে এসে অনির্দিষ্টকালের বন্ধের নোটিশ দেখতে পাই।”
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, “বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা মোতাবেক আশুলিয়ার জামগড়া, ছয়তলা, বেরণ, নরসিংহপুর ও এর আশপাশ এলাকার অধিকাংশ কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ লাগিয়ে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। তবে আজ শ্রমিকরা কোনো অসন্তোষের সৃষ্টি করেননি।”
হলিউড গার্মেন্টসের শ্রমিক আঁখি আক্তার বলেন, “কারখানা কবে খুলবে মালিকপক্ষ সেটা জানায়নি। এখন তারা যে টাকাই বেতন বাড়াক তবুও কারখানা খুলে দিক। আমরা কাজে যোগ দেব। আমরা তো কাজ করতে চাই।”