মেট্রো স্টেশন থেকে বের হয়েই ধাঁধাঁয় পড়ে গেলাম। জায়গাটা কেমন যেন অপরিচিত লাগছে। রাস্তার ওপাশে ‘বিসমিল্লাহ স্টোর’ নামে একটি দোকান থাকার কথা, অথচ দেখছি কেএফসি-র একটা আউটলেট।
Published : 13 Nov 2017, 06:32 PM
ভুল স্টেশনে নামলাম না তো! স্টেশনের নাম, আমার মোবাইলের ইনবক্সে রেখে দেয়া ঠিকানা, মেট্রো স্টেশনের ‘আউটলাইন’ আবার মিলিয়ে নিলাম। সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু ‘বিসমিল্লাহ স্টোর’ কোথাও দেখছি না।
বিসমিল্লাহ স্টোর মন্ট্রিয়লে বসবাসকারি বাঙালি অধিবাসীদের কাছে এক নির্ভরযোগ্য জায়গা।
দোকানটি মন্ট্রিয়ল শহরের বাইরে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের লোকজন অধ্যুষিত আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। প্লামন্ডন স্টেশন থেকে বের হয়েই এটি দেখা যায়। এখানে দেশি মশলা থেকে শুরু করে দেশি মাছ-মাংশ ইত্যাদি পাওয়া যায়।
যদিও অনেকে বলে - ওই দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য রাখে। আমার বিশ্বাস হতে চায় না। কানাডার মতো জায়গায় এরা এমনটা করতে পারেনা।
কিন্তু আমার বিশ্বাস-অবিশ্বাস বড় কথা নয়। যারা ভুক্তভোগী তারা বলে - “দুর্জন সে তো দুর্জনই। সেটা বাঙালি মালিকই কি, অবাঙালি মালিকই কি? বাংলাদেশই কী আর কানাডাই কী? তাছাড়া, কমিউনিটি দোকানগুলোতে কানাডিয়ান পুলিশ খুব বেশি তদারকি করেনা।”
কিন্তু স্টেশন থেকে বের হয়ে যা দেখছি, তাতে পুরো বিসমিল্লাহ স্টোরই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে হারিয়ে গেল মনে হচ্ছে।
এরপর ওয়ালমার্ট, আইকা, কানাডিয়ান টার্য়াস, ডলারমা প্রভৃতি দোকান পাট ঘোরালেন। এই জায়গাগুলোতেই নাকি একটু কমদামে জিনিস পত্র পাওয়া যায়।
কীসের কি কম দাম! যে জিনিসেরই দাম দেখি, ডলারের দাম সাথে সাথে টাকায় রূপান্তর করে আঁতকে উঠি। সুমনভাই হাসেন। বলেন - “কয়েকদিন পর সয়ে যাবে”।
কী আর করা! যেহেতু কিছু জিনিসিপত্র না কিনলেই নয়, কেনাকাটা সেরে উনার গাড়িতে করেই আমার বাসায় আসি। বাসায় আসার আগে সুমনভাই বিসমিল্লাহ স্টোর থেকে রসমালাই খাইয়েছিলেন। বিদেশের মাটিতে রসমালাইয়ের সে কী স্বাদ! ওইদিনই বিসমিল্লাহ স্টোর চিনলাম।
আজকে আসার উদ্দেশ্যও - ভোজন। দাওয়াত দিয়েছেন সুমনভাই। স্ত্রী-সন্তান দেশে রেখে এসেছি, বাইরের খাবারে রুচি পাচ্ছিনা। নিজেও ঠিকঠাকমত রান্না করার সময় করে উঠতে পারছি না। প্রয়োজনীয় সরঞ্জমাদি কেনা হয়ে উঠেনি। তাই সুমনভাইয়ের দাওয়াতে কিছু বাংলাদেশি ভাল-মন্দ খাওয়ার আশায় একবাক্যে রাজি হয়ে গেলাম। মৌসুমী আপা অর্থাৎ সুমন ভাইয়ের স্ত্রী এতো পদ রান্না করেন যে মনে পড়লেই মুখে পানি চলে আসে।
কিন্তু রাস্তার দিক নির্দেশনা না মেলায় হতাশা গ্রাস করলো। তাহলে কি আজকে খাওয়া হবে না? চোখ চলে যায় রাস্তায় ঝরে থাকা ম্যাপল পাতাগুলোর দিকে।
ঝরে পড়া শুকনো ম্যাপল পাতাগুলোর ছুটোছুটি দেখতে আমার ভালোই লাগে। হিমশীতল ঠাণ্ডা বাতাসের তোড়ে পাতাগুলো যেন দিশেহারা হয়ে পড়ে। এদিক থেকে সেদিক ছুটোছুটি করতে থাকে।
এই হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায়তো পাতাগুলোর এই পরিণতির জন্য দায়ী। ঝরে পড়ার আগে বাহারি রঙের পাতাগুলো আশপাশটাকে কী শোভনীয়ই করে তোলে! অথচ ঝরাপাতার ছোটাছুটি কতোজনেরই বা হৃদয়ে দোলা দেয়? মন্ট্রিয়লবাসীর এদিকে মনোযোগ না থাকারই কথা। যে কনকনে ঠাণ্ডা! ঠাণ্ডা সামলাতেই তো সবাই ব্যস্ত।
কিন্তু সম্বিৎ ফিরে আসে আমার। ফোন দিই সুমনভাইকে। বুঝতে পারি - স্টেশন ঠিকই আছে, বের হয়েছি ভুল এক্সিট দিয়ে। প্লামন্ডন স্ট্রিটের এক্সিট দিয়ে না বের হয়ে, বের হয়েছি বার্কলে স্ট্রিটের এক্সিট দিয়ে।
বার্কলে স্ট্রিট থেকে আরো কিছুটা হেঁটে প্লামন্ডনে পৌছালাম। ওই তো বিসমিল্লাহ স্টোর। আরেকটু এগোলেই সুমন ভাইয়ের বাসা। খাওয়া ছাড়া আর কিছু ভাবতে চাচ্ছি না।
তবুও মাথায় চলে এলো - ‘ম্যাপল লিফ’ এর বাংলা কী? ম্যাপল পাতা? না কি ত্রিপাতা। আসলে বাংলায় যেহেতু এই গাছটি নেই, তাই এর বাংলা নাম খুঁজে পাচ্ছি না। আপনাদের কী মনে হয়, কী নাম দেয়া যায়?
লেখক: পিএইচডি গবেষক, ফ্যাকাল্টি অব এডুকেশন, ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়, মন্ট্রিয়ল, কানাডা।
ইমেইল: [email protected]
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |