চীনের যতগুলো জায়গা দেখার সুযোগ হয়েছে তার মধ্যে বিশেষভাবে বলা যায় পাথরের অরণ্যের কথা।
Published : 24 Jul 2015, 04:27 PM
ইংরেজিতে বলা হয় স্টোন ফরেস্ট। জানা মতে পৃথিবীর সুন্দরতম স্টোন ফরেস্টের অবস্থান কুনমিংয়েই।
উচ্চ শিক্ষার জন্য ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে চীনের কুনমিংয়ে আছি। সুন্দর, নিরিবিলি, ছিমছাম শহর বলতে যা বোঝায় তা হল এই কুনমিং। একে চীনের চিরবসন্তের শহরও বলা হয়।
বহুদিন ধরেই আছি এই শহরে, অনেক দিনের অনেক স্মৃতির মধ্যে একটা বিশেষ দিন ছিল স্টোন ফরেস্টে কাটানোর দিনটি।
বছর দেড়েক আগে যখন আমি বেশ দেশের টানে ভুগছি এবং তা আমার গবেষণা কাজে খানিকটা প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে ঠিক তখনই বাংলাদেশ থেকে আমার এক প্রফেসর এলেন কুনমিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সাবেক শিক্ষকের আগমন যেন এক সুবাতাস হয়ে দেখা দিল আমার জন্য। স্যারকে সঙ্গে নিয়েই একদিন বেড়াতে গেলাম স্টোন ফরেস্টে। দুই জন নেপালিও স্টোন ফরেস্ট দেখার জন্য যোগ দিলেন আমাদের সঙ্গে। বোধকরি চীনা ভাষা না জানা থাকার কারণে আমাদের সঙ্গে অন্তত ইংরেজিতে কথা বলার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাননি তারা।
সকালে মাইক্রোবাসে চড়ে যাত্রা শুরু হল। এখানকার রাস্তাগুলো পরিষ্কার ও ঝকঝকে, প্রশস্ত ও বেশ ফাঁকা।
কাউন্টার থেকে টিকেট কেটে দাঁড়িয়ে আছি, গেইট থেকে অনেক ভিতরে যেতে হবে পাথরের সেই অরণ্য দেখতে, কিছুক্ষণ পর একটা অটোরিক্সা এসে দাঁড়ালো আমাদের সামনে, অনেকটা আমাদের দেশের অটোরিক্সার মতোই। আরও কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে উঠে পড়লাম এতে।
আস্তে আস্তে অটো চলছে, তখনও সেরকম কোনো পাথরের চিহ্ন চোখে পড়ল না। প্রায় ২০ মিনিট পর অনেকটা ভিতরে এসে অটো থামলো, আমরা নেমে হাঁটতে শুরু করলাম। প্রথমেই চোখে পড়ল একটা লেক যার চারপাশ পাথর দিয়ে ঘেরা, অসাধারণ প্রাকৃতিক এক সৌন্দর্য!
পাথরের পাহাড়ের সঙ্গে সবুজের সমারোহ। এ যেন অপরূপ এক দৃশ্য! যেন শিল্পীর হাতে আঁকা ছবি!
আমার শিক্ষক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে অনেক ছবি তুললেন। আসলে এখানে এসে মুগ্ধ না হয়ে পারা কঠিন!
কিছুক্ষণ পর নিচে নেমে আসলাম। আবার পথচলা শুরু, পাথরের পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে সরু রাস্তা, সেখান দিয়ে হাঁটছি সবাই। হাঁটতে হাঁটতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়লেও স্যার কিন্তু শুধু চারপাশ দেখছেন আর ছবি তুলেই চলেছেন।
দেখলাম একটা বিশাল পাথরের উপর আরেকটা পাথর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে, তার পাশে দাঁড়িয়ে বিস্ময় চোখে তাকিয়ে থাকার অনুভুতিই যেন অন্যরকম!
খাওয়া-দাওয়া ভুলে আমরা বিকেল প্রায় ৪টা পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে এই অরণ্যের সৌন্দর্য্য দেখলাম। ঘরে ফিরে গেলাম অপার সৌন্দর্যের স্মৃতি নিয়ে।
প্রবাস জীবনের গল্প ও অভিজ্ঞতা এখন থেকে আমাদের সরাসরি জানাতে পারেন। পুরো নাম ও সংশ্লিষ্ট ছবিসহ লেখা পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায় [email protected]