উন্নয়নে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এসেছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আবুধাবিতে প্রবাসীদের আয়োজিত গণসংবর্ধনা সভায় অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ছবি: জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি

যারা ১০ বছর পর দেশে যাবেন, তারা এখন তাদের গ্রাম চিনতে পারবেন না। এখন শহরের অলিতে গলিতে বাসি ভাতের ডাক শোনা যায় না, গ্রামেও না। মুষ্টিচাল ভিক্ষা এখন উঠে গেছে। আকাশ থেকে ঢাকা শহরকে চেনা যায় না, চট্টগ্রাম শহর চেনা যায় না। মানব উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়ন, প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ আজ পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এসেছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজিত এক গণসংবর্ধনা সভায় অংশ নিয়ে প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে এ কথাগুলো বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

তার আবুধাবি আগমন উপলক্ষ্যে স্থানীয় সময় শনিবার রাতে শেখ খলিফা বিন জায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুলে এ সভার আয়োজন করে ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি, আবুধাবি’।

মন্ত্রী বলেন, “ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হয়ে বললেন, আমাকে ১০ বছর সময় দেন, পাকিস্তানকে সুইডেনে পরিণত করবো। তখন আলোচনার ঝড় বইলো। জনগণ বলল, সুইডেন নয়, দশ বছরে বাংলাদেশে পরিণত করুন। ২০২১ সালে আমরা মাথাপিছু আয়ে ভারতকে অতিক্রম করেছি। এটা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সম্ভব হয়েছে। আমরা একটি মানবিক কল্যাণরাষ্ট্র গঠন করতে চাই, যেখানে দরিদ্র দুঃস্থদের দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে।”

বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রবাসীরা আজ যেসব সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন তা ১০ বছর আগে ছিল না। শেখ হাসিনার সরকার প্রবাসীদের মূল্যায়ন করেন, কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেও দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন।”

বৈধপথে ক্ষুদ্র রেমিটেন্স প্রেরণকারীরাও যাতে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পান সেজন্য তিনি সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দেন।

সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বাংলাদেশের কর্মীদের কাজের প্রশংসা করেছেন। আমরা তাদের বাংলাদেশে কর্মী ভিসা খোলার জন্য অনুরোধ করেছি, তারা তা বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।”

তবে এক্ষেত্রে তিনি প্রবাসীদেরকেও অনৈতিক কার্যক্রম, জাল সার্টিফিকেটের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের চেষ্টা থেকে বিরত থাকা এবং দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এমন কোন আচরণ না করার পরামর্শ দেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “বিগত নির্বাচনের পর সবাই তাকিয়ে ছিলেন নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা কী বলে, ইউরোপ কী বলে, বিএনপিও উঁকি মেরেছিল। কিন্তু এই পর্যন্ত ৮০টি দেশের সরকারপ্রধান, ৩২টি আন্তর্জাতিক সংস্থা শেখ হাসিনার সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। বর্তমান সরকারকে সমগ্র পৃথিবী গ্রহণ করেছে, এ সরকারের সঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে।”

আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাসির তালুকদারের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি ইফতেখার হোসেন বাবুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য সাইমুম সরোয়ার কমল, সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর ও আওয়ামী লীগের ধর্ম সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা।

অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদ আবুধাবির পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। মন্ত্রী আবুধাবিতে বাংলাদেশের কমিউনিটি স্কুলকে সরকারি সহায়তা দেওয়া এবং চট্টগ্রামে বিমানের সুপরিসর ফ্লাইট চালুসহ প্রবাসীদের সমস্যা নিরসনে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জায়েদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিবুল হক খন্দকার, শাহজাদা মহিউদ্দিন, বদিউল আলম বদি, ইয়াছিন চৌধুরী, ইমরাদ হোসেন ইমু ও শওকত আকবর।