কেউ বলবে না এ দেশে গণতন্ত্র আছে: খন্দকার মোশাররফ

“দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, ভাষা আন্দোলনের চেতনা বলেন আর সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলেন, গণতন্ত্র এদেশে বারবার হত্যা হয়েছে,” বলেন এই বিএনপি নেতা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2023, 03:45 PM
Updated : 20 Feb 2023, 03:45 PM

ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে আওয়ামী লীগ সরকার ‘বার বার হত্যা’ করেছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

শহীদ দিবস সামনে রেখে সোমবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি কীসের জন্য বা কী তার চেতনা ছিল? গণতন্ত্র। আজকে যখন ৫১ বছর পরে আলোচনা করতে দাঁড়াই, তখন সবাই বলি দেশে আজ গণতন্ত্র নাই, কেউ বলবে না গণতন্ত্র আছে? শুধু আমরা নই, আজকে আন্তর্জাতিক বিশ্বও বলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নাই।”

“দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, ভাষা আন্দোলনের চেতনা বলেন আর সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলেন, গণতন্ত্র এদেশে বারবার হত্যা হয়েছে। প্রথম হত্যা হয়েছে আজকে যারা ক্ষমতায় আছে এই আওয়ামী লীগ যখন স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় ছিল তখন তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে একদলীয় বাকশাল করে। আজকে আবার এই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, ১৪ বছর গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।”

খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আজকে মানুষের ভোটের অধিকার নেই। শুধু সংসদ নির্বাচন নয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও জনগণ ভোট দিতে পারে না। ভোট আগেই নির্ধারিত হয়ে যায়। গণতন্ত্র আজকে এভাবে হত্যা হয়েছে আওয়ামী লীগের সময়ে।”

তার ভাষায়, “আমি যা চিন্তা করি, সেটা স্বাধীনভাবে বলতে না পারি, তাহলে এই ভাষার কি তাৎপর্য আছে? ভাষা আন্দোলনের সাথে সেটাও ছিল যে, আমি আমার মাতৃভাষায় যেভাবে চিন্তা করব, যেভাবে আমি স্বাধীনভাবে মুক্ত মনে চিন্তা করব, সেই স্বাধীন কথাটি বলার অধিকার আমার থাকবে। আজকে সেই কথা বলার অধিকারও নাই।”

আওয়ামী লীগ মুক্ত চিন্তা ‘রুখতে’ গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বারার ‘হস্তক্ষেপ’ করেছে বলেও অভিযোগ করেন খন্দকার মোশাররফ।

তিনি বলেন, “বিএনপির মুখপত্র হিসেবে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে পত্রিকা, দৈনিক দিনকালের প্রকাশক, গতকাল তারা (সরকার) এই পত্রিকাটি বন্ধ করে দিয়েছে। অর্থাৎ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মুক্ত চিন্তার মাধ্যমকে এই সরকার যখনই সুযোগ পেয়েছে, তখনই বন্ধ করে দিয়েছে।”

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে, ‘সরকার হটানোর’ ১০ দফা দাবির চলমান আন্দোলনকে সফল করতে জনগণকে শপথ নেওয়ার আহ্বান জানান খন্দকার মোশাররফ।

তিনি বলেন, “রাজপথে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে যত শিগগির সম্ভব (এ সরকারকে) বিদায় করতে পারব, বাংলাদেশের জন্য ততই মঙ্গল। সেই কামনাই করছি।”

‘হাইব্রিড শোষক’

খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আপনারা দেখেছেন, বেশি কিছু দিন আগে আমেরিকায় একটি গণতান্ত্রিক কনভেনশন হয়েছিলে, আরেকটি গণতন্ত্র সম্মেলন হচ্ছে। দুইবারই বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পায়নি। কেননা তারা স্পষ্ট করে বলেছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নাই। যারা শাসন করছে তারা হাইব্রিড শোষক।

“এই জন্য কিন্তু আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা এদেশে প্রাণ দেয়নি, ভাষা শহীদরা প্রাণ দেয়নি। প্রাণ দিয়েছিল, যুদ্ধ করেছিল এদেশে স্বাধীনতাভাবে বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য।”

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা হয়।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করার কথা ছিল দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামগীরের। কিন্তু তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

দলের প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের ‍উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবদুল হাই, কবি মাহবুব হাসান ও আনম ফজলুল হক সৈকত বক্তব্য দেন।