আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর থেকে কাকরাইল এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
Published : 28 Oct 2023, 03:08 PM
রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশের মধ্যে কাকরাইল মোড়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর দলটির সমাবেশ পণ্ড হয়ে গেছে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর থেকে কাকরাইল এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এক পর্যায়ে মাঠে নামে বিজিবি।
দফায় দফায় সংঘর্ষের পর বেলা ২টার পর নয়া পল্টনে সমাবেশের কাজ বন্ধ করে দেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। নেতাদের ঘিরে রেখে মঞ্চে স্লোগান দিতে দেখা যায় কর্মী-সমর্থকদের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের মধ্যে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনের রাস্তায় নেতাকর্মীদের লাঠি হাতে দেখা গেছে।
প্রধান বিচারপতির বাস ভবন থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় এলাকা পর্যন্ত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপি নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তাদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হন।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত নুরুজ্জামান নামে একজন পুলিশ কনস্টেবল বলেন, “বাইরের গার্ড রুমের দরজা ও জানালার কাচ এবং প্রধান বিচারপতির নামফলকের কাচ ভাঙচুর করেছেন।”
কাকরাইল চার্চের সামনের পুলিশ বক্সও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত অপারেটর জানান, ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিবি) ভবনে ভেতরে আগুন লাগার খবর পেয়ে তাদের একটি ইউনিট সেখানে গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের এডিসি কে এন রায় নিয়তি জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ২২ জন পুলিশ সদস্য রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে এবং ১৯ জন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন।
কাকরাইল মসজিদ মোড়ে গুলিস্তান পরিবহনের বাসে হামলায় বিএম রাজু কামাল (৫০) নামে অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগসের এক কর্মী আহত হন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সাতরাস্তা মোড় থেকে গাড়িতে উঠি গুলিস্তান যাওয়ার উদ্দেশ্যে। বেলা সাড়ে ১২টায় কাকরাইল মসজিদের আগে রাস্তায় গাড়িতে হামলা হয়।”
কাকরাইলে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিএনপির সমাবেশ উপলক্ষে শান্তিনগর ও কাকরাইল মোড়ে অবস্থান করছিলেন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। সেসময় সড়কে পিকআপ ভ্যানে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন।
বিএনপির নেতাকর্মীরা পিকআপ ঘিরে ফেললে লাঠিসোঁটা নিয়ে চড়াও হন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এরপর উভয়পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে কিছুক্ষণ। পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়।
দুপুর ২টা ২৫ মিনিটের দিকে কাকরাইল এলাকায় সাতটি পিকআপে করে বিজিবি সদস্যদের নামতে দেখা যায়। সেখান থেকে হেঁটে নয়াপল্টনের দিকে যান তারা। ওই সময় নয়াপল্টনের দিক থেকে বিস্ফোরণের শব্দও পাওয়া যায়।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই এলাকায় দুই প্লাটুন আগে থেকেই মোতায়েন ছিল। দুইটার দিকে আরও দুই প্লাটুন বিজিবি সদস্য সেখানে যায়। এছাড়া পুলিশের সঙ্গে বিজিবির আরও আট প্লাটুন সদস্য রয়েছে।”
এদিকে একই সময়ে বায়তুল মোকাররম এলাকায় সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগ। আর জামায়াতের নেতাকর্মীরা আরামবাগ এলাকায় জড়ো হয়েছেন সমাবেশের জন্য।
আরামবাগ এলাকায় ‘গুলিতে’ এক জামায়াত কর্মীর আহত হয়েছেন। নায়েব আলী শেখ (৬০) নামের ওই ব্যক্তি নিজেকে জামায়াত কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন, “দুপুরে আরামবাগে পুলিশের ব্যারিকেড অতিক্রম করার সময় পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে আমার ডান পায়ে গুলি লাগে।”
তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে আসা পথচারী সোহাগ বলেন, “আহত রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে ছিল। পরে তাকে দুপুর সোয়া ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেই।”