“স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ সেটা প্রতিহত করেছে। এবারও কোনো ষড়যন্ত্র করলে বাংলার মানুষ তা প্রতিহত করবে।”
Published : 12 Jul 2023, 10:58 PM
বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের কোনো ‘ষড়যন্ত্র’ সফল হবে না বলে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে বক্তব্য এসেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের বিএনপির ‘বিদেশি ঘটক’ আখ্যা দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলেছেন, কোনো দেশ হস্তক্ষেপ করলে বাংলাদেশের জনগণ মেনে নেবে না।
সরকারের পদত্যাগ ও সংসদের বিলুপ্তি চেয়ে বিএনপির ‘এক দফা’ দাবিকে নাকচ করে দিয়ে তারা আরও জানিয়ে দিয়েছেন, ‘সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’
বুধবার সরকার পতনের ‘এক দফা’ আন্দোলন ঘোষণা করতে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ থেকে খানিক দূরে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশে’ এসব বক্তব্য আসে।
এই সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগও ঘোষণা করে ‘এক দফা’, জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘শেখ হাসিনাকে বাইরে রেখে কোনো নির্বাচন নয়’।
দুটি সমাবেশই হলো এমন সময় যখন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দল সফরে আছে। তাদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করেও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের আগের মতো এবারও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে তাদের মিত্ররা নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে দায়ী ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, “বিভিন্ন দেশের লোকজন আমাদের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন। আপনারা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী, আপনাদের আমরা সম্মান করি।
“তবে বাংলাদেশের সংবিধানে লেখা আছে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন পরিচালনা করবেন। এই পবিত্র সংবিধানে কোনো দেশ হস্তক্ষেপ করলে বাংলাদেশের জনগণ মেনে নেবে না।”
যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ সেটা প্রতিহত করেছে। এবারও কোনো ষড়যন্ত্র করলে বাংলার মানুষ তা প্রতিহত করবে।”
স্বল্প সময়ের নোটিশে এই সমাবেশকে ‘সফল করে’ তোলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে রাজ্জাক বলেন, “জনসমুদ্রের যে তরঙ্গ আপনারা তুলেছেন, তাতে বিএনপির ‘এক দফা’ ভেসে যাবে।”
বিএনপি যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবার দেশে সারের সংকট হয়েছে, খাদ্যের সংকট হয়েছে, মঙ্গা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে কোনো সংকট থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথা রেখেছেন। সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন। উন্নয়নের বিপ্লব হয়েছে। সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছেন।
“কিন্তু বিএনপি আবারও দেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এখন বিদেশিদের হাতে পায়ে ধরে ক্ষমতা ভিক্ষা চাইছে।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ শেখ হাসিনাকে ম্যান্ডেট দিয়েছে, ম্যান্ডেট দিয়েছে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য। সেই শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি করেছে পলাতক আসামির দল।”
পশ্চিমাদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “পাকিস্তান আজ নিলামে উঠেছে, কে কত দিয়ে পাকিস্তান কিনবে। যাদের মুরুব্বিদের এই অবস্থা তারা কী করে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বলে “
বিএনপি ‘বিদেশি ঘটক’ নিয়ে এসেছে মন্তব্য করে আবদুর রহমান বলেন, “ঘটকরা এখনো বাংলাদেশে আছে। তারা নির্বাচন কমিশন থেকে বেরিয়ে বলেছে, ‘এই কমিশনের সুষ্ঠু নির্বাচনের দক্ষতা ও সক্ষমতা আছে’।
“তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আশা করেছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।”
দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদের আরেক সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “কীসের এক দফা? আসলে এই দেশের উন্নয়ন ওদের সহ্য হয় না। দেশের মানুষ খেয়ে পড়ে উন্নত বাংলাদেশ দেখুক এটা ওদের সহ্য হয় না।
“ওরা বলে নির্বাচন বর্জন করবে, প্রতিহত করবে। আগেও এগুলো করেছে। সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে। আপনারা প্রস্তুত থাকবেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করবেন ওদেরকে প্রতিহত করতে। বাঙালি জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
কামরুল ইসলাম বলেন, “বিএনপির এক দফার জবাবে বলতে চাই, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী আগামী সংসদ নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনা আবারও প্রধানমন্ত্রী হবেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার কোনো সুযোগ এই দেশে নেই।”
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, “আজকের সমাবেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে শেখ হাসিনা সরকারের বিকল্প নেই। বিএনপি আইন মানে না, গণতন্ত্র মানে না। সন্ত্রাসী করে ক্ষমতায় যেতে চায়।”
মোস্তফা জামাল মহিউদ্দিন বলেন, “এই সমাবেশ প্রমাণ করে আগামী নির্বাচনে যতোই টালবাহানা, ষড়যন্ত্র করুক না কেনো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও আমরা উন্নয়নের সরকার গঠন করব।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, “তারা বার বার ‘এক দফা’ দেয়। ১৩, ১৪, ১৯ এবং ২২ সালের ডিসেম্বরে এক দফা দিয়েছে। তাদের ‘এক দফা’ বেলুনের মত ফুটে যায়। ‘এক দফার’ আন্দোলন মাঠে মারা গিয়েছিল। এবারও তাদের ‘এক দফা’ ফুটে যাবে।
বিএনপি ইসরায়েলের ‘গোয়েন্দা’ মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গেও বৈঠক করে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “কোনো সন্ত্রাসী, নৈরাজ্যকারী ও ইসরায়েলের এজেন্টদের আমরা ক্ষমতায় আসতো দেব না।”
আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, “আমাদের দেশে ইইউয়ের প্রতিনিধিরা এসেছেন। তাদের দেখিয়ে বিএনপি শোডাউন করতে চায়।
“আজ বিএনপির সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিদেশিরাই তাদের ভরসা। ষড়যন্ত্র আর বিষোদাগার করে তারা ক্ষমতায় যেতে চায়। আমরা কোনো বিদেশির কাছে ধরনা দেব না। আমরা জনগণের কাছে তুলে ধরব যে, আপনারা (বিএনপি) যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন তখন কী করেছিলেন আর আমরা এখন কী করেছি।
“আমরা জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, খালেদা জিয়ার আমলে কীভাবে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। বিএনপির সব অপকর্ম জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস বলেন, “আমরা বিএনপির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মাঠে আছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মাঠে থাকব।”
ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “আওয়ামী লীগের কোনও বিকল্প নেই। নৌকার কোনও বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার কোনও বিকল্প নেই।
“আওয়ামী লীগ কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। তার প্রমাণ পদ্মা সেতু। আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে হবে। নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে। শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করতে হবে।”
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সংসদ উপনেতা ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, স্বাস্থ্য সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, শিক্ষা সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীমও।