পঞ্চগড়ে ‘পুরনো খেলা’ দেখছেন ফখরুল

“ঘটনা ঘটিয়ে আবার একইভাবে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির লোকজনকে আসামি করা হচ্ছে এবং তাদেরকে গ্রেপ্তার করছে, বাড়ি বাড়ি রেইড করছে,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2023, 09:33 AM
Updated : 6 March 2023, 09:33 AM

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ-লুটপাট ও হত্যার ঘটনায় পুলিশের মামলা ও গ্রেপ্তার অভিযানে ‘পুরনো খেলা’ দেখতে পারার কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তার দৃষ্টিতে, বিএনপিকে মাঠশূন্য করতে ‘এই খেলায়’ মেতেছে সরকার। তারা “মিথ্যা-গায়েবি মামলা গ্রেপ্তার, ঘরে ঘরে তল্লাশি এবং হয়রানি করে নির্যাতন নিপীড়নের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশকে বিএনপিশূন্য করতে এখন বেপরোয়া হয়ে মাঠে নেমেছে।”

সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

নির্বাচনের আগে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের শঙ্কা তুলে ধরে তিনি বলেন, “দেখুন পঞ্চগড়ের ঘটনা। এটা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এই ঘটনা ঘটিয়ে আবার একইভাবে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির লোকজনকে আসামি করা হচ্ছে এবং তাদেরকে গ্রেপ্তার করছে, বাড়ি বাড়ি রেইড করছে।”

পঞ্চগড়ে শুক্র থেকে রোববার তিন দিনব্যাপী ‘সালানা জলসা’র আয়োজনকে কেন্দ্র করে শুক্রবার ব্যাপক সহিংসতা হয়। জলসা বন্ধের দাবিতে মিছিলকারীরা পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায়।

এ সময় ট্রাফিক পুলিশের স্টেশন, পঞ্চগড় বাজার মার্কেটে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের দোকানপাট ভাঙচুর এবং বিকালে আহমদিয়াদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সেদিন শহরের মসজিদ পাড়া মহল্লার ফরমান আলীর ছেলে আরিফুর রহমান এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জাহিদ হাসান নিহত হন বলে পুলিশ জানায়।

এদিকে শনিবার রাতেও ‘দুই জনকে গলা কেটে হত্যা করার’ গুজব ছড়িয়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এসব ঘটনায় মোট তিনটি মামলায় আসামি করা হয়েছে সাড়ে ছয় থেকে সাত হাজার ব্যক্তিকে। রোববার রাত পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৪ জনকে।

গুজব ছড়ানোর মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই জন। এদের একজন পৌর যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফজলে রাব্বী।

‘এবার আর পারবে না’

সরকার ‘মিথ্যা-গায়েবি মামলায়’ গ্রেপ্তার, ঘরে ঘরে তল্লাশি এবং হয়রানি করে ‘নির্যাতন-নিপীড়নের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিলেও’ বিএনপিকে মাঠ থেকে দূরে ঠেলে দিতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “এবার জনগণ রাস্তায় নেমে গেছে, বিএনপি রাস্তায় নেমেছে। এই আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায় যাবে এবং নিঃসন্দেহে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পরাজয় বরণ করতে হবে।”

বিএনপির নেতা-কর্মীরা কোনো মামলায় জামিন পেলে তাদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল।

জামিন পেয়ে বের হওয়ার আগে আগে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপুকে আরেকটি মামলায় জেলগেইট থেকে গ্রেপ্তার দেখানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে আবার কিছু বাণিজ্যের ব্যাপার আছে।

“পয়সা কড়ি দিলে সেগুলো অনেক সময় …। অর্থাৎ গোটা সিস্টেম একটা নিবর্তনমূলক, নির্যাতনমূলক এবং এটা একটা পুলিশ স্টেটে পরিণত হয়েছে।”

রিজভীকে চিকিৎসা না দেয়ার অভিযোগ

বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী কারাগারে ‘ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন’ জানিয়ে ফখরুল অভিযোগ করেন, তাদের দলের এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবকে সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।

ফখরুল বলেন, “এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বুকে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ রিজভী ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফুসফুসে জটিলতা ও হার্টের অসুখসহ বিভিন্ন মারাত্মক রোগে শারীরিকভাবে অসুস্থ একজন মানুষ।

“তিনি সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সময়ে অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না। তাকে লাঠির ওপর ভর করে চলতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে পুরান ঢাকার আদালতে আসার দীর্ঘ পথ প্রিজন ভ্যানে তাকে আনা-নেওয়া করা হচ্ছে।

“এইসব প্রিজন ভ্যানে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই, এমনকি কোনো কিছু ধরে দাঁড়িয়ে থাকারও ব্যবস্থা নেই। যার জন্য অসুস্থ রিজভী আহমেদকে চরম ঝঁকি নিয়ে প্রায় প্রতিদিন আদালতে আনা নেওয়া করানো হয়।”

বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনের আরও অনেক নেতার নাম উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, “মিথ্যা মামলার মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে সারাদেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। কারাগারগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই।”

গ্রেপ্তারের পর নির্যাতনের অভিযোগ

ফখরুল অভিযোগ করেন, ৯ ডিসেম্বর প্রথম প্রহরে গ্রেপ্তারের পর তাকে এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে নির্যাতন করা হয়েছিল।

“জেলে নেওয়ার পরে দুই ঘণ্টা আমাদেরকে অফিসে বসিয়ে রেখেছে। অফিসে বসিয়ে রাখার কারণটা হচ্ছে যে, তারা আমাদেরকে কোয়ারেনটাইনের নাম করে একটা কনডেম সেলে দেবে। ওইটা ছিল ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সেল। সেই সেলের মধ্যে কোনো বিছানা থাকে না, খাট থাকে না, ফ্লোরে থাকতে হয়।

“৭ বাই ৮ ফুট সেলের মধ্যেই বুক পর্যন্ত একটা দেয়াল দিয়ে একটা টয়লেটের ব্যবস্থা থাকে সেখানে শুধুমাত্র ইন্ডিয়ান প্যানের ফ্লাস আছে, বেসিন পর্যন্ত নেই।”

ফখরুল বলেন, “যেখানে আমরা ডিভিশন এনটাইটেলড, সেখানে প্রথমেই তারা জোর করে আমাদেরকে ওখানে (ফাঁসির সেলে) নিয়ে গেছে। চারদিন সেখানে রেখেছে।”

অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা জহিরউদ্দিন স্বপন, কামরুজ্জামান রতন, জয়নাল আবেদীন মেজবাহ ও সাঈদ সারোয়ার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।