আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এই বৈঠকে সম্মেলনের তারিখও ঠিক হতে পারে।
Published : 28 Oct 2022, 01:05 AM
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর আগে জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে ‘কর্মপন্থা নির্ধারণের’ বৈঠকে বসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার এই বৈঠকে রাজনীতির মাঠ মূল্যায়নের পাশাপাশি সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে উপ-কমিটি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুক্রবারের বৈঠক অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া আমাদের এই সম্মেলনের পরপরই জাতীয় নির্বাচন, এর প্রস্তুতির বিষয় আছে।
“এই বৈঠকে আগামী জাতীয় সম্মেলন ঘিরে নানা কমিটি, উপ-কমিটি হবে। এর জন্য অনেক কাজ, অনেক বিষয় আছে, অনেক বিষয়ই থাকবে, এগুলো নিয়েই আলোচনা হবে।”
কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে জানিয়েছে, আগামী বছরের শেষভাগে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে তারা কাজ করছে।
ভোটের রাজনীতি সামনে রেখে মাঠেও নড়াচড়া শুরু হচ্ছে। টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগও নিজেদের নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নজর জাতীয় নির্বাচন ও সম্মেলনে
শুক্রবার ৪টায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির ওই সভা হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বৈঠকে দলের সম্মেলনসহ বেশ কয়েকটি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হবে। ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলাগুলোতে জনসভা, বিভাগীয় সমাবেশ এবং অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনেরও তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি তৃণমূল নেতাদের কথা শুনতে গণভবনে ধারাবাবাহিক বৈঠক করতে পারেন। সেটিরও রূপরেখা চূড়ান্ত হতে পারে বৈঠকে। ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে যে ৩২টি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে, ধারাবাহিকভাবে তাদের সঙ্গেও বৈঠকের পরিকল্পনা থাকতে পারে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “ডিসেম্বরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। সে বিষয়টি এজেন্ডায় রয়েছে। ওইদিন (শুক্রবার) সম্মেলনের সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
“সভায় জেলহত্যা দিবস, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের কর্মসূচি পালনসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে। বিভাগগুলোতে কিছু জনসভা ও সমাবেশ করার বিষয়েও আলোচনা হবে। আমরা এই বিষয়গুলো নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।”
বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত আসবে জানিয়ে নানক বলেন, “আলোচনা করে একটি সারসংক্ষেপ মাননীয় নেত্রী ও পার্টির সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে দেব। উনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। ২৮ অক্টোবর চূড়ান্ত রূপ নেবে।”
এদিকে বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে জাঁকজমকপূর্ণ কাউন্সিল না করার পক্ষে মত নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগের মত জাঁকজমক করে এই সময়ে কোনো সম্মেলন হবে না। দেশের এই অবস্থায় আমরা ছোট করে ঘরোয়া পরিবেশে সম্মেলনগুলো করতে চাই।”
বৈঠকে বসছে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি: আড়াই বছর পর ‘থাকছেন সবাই’
মাঠের মূল্যায়ন ও দ্বন্দ্ব নিরসনের বার্তা
এবারের জেলা পরিষদের নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের বাইরে সরাসরি ভোটে অন্তত নয়টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এই ভোটেও দ্বন্দ্ব-কোন্দল এবং জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের দ্বন্দ্বেও ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নয়জন প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ আমলে নিয়ে ভবিষ্যত নির্বাচনে করণীয় খুঁজে বিভিন্ন নির্দেশনা আসবে এই মিটিংয়ে।
“জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের দ্বন্দ্বের বিষয়টাও আলোচনায় আসবে। বিভিন্ন স্থানে কোন্দল মিটিয়ে নতুন রূপে কীভাবে আগামী নির্বাচন মোকাবেলা করতে হবে, এই নির্দেশনাও বৈঠক থেকে আসবে।”
আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখনও ৩৩ জেলার সম্মেলন বাকি। আগামী নভেম্বরের মধ্যেই এসব জেলার সম্মেলন শেষ করতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলার সম্মেলনের তারিখও ঘোষণা হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ইউনিট, ওয়ার্ড-থানা সম্মেলন শেষ হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, “বৈঠকে সম্মেলনসহ ৮-১০টি এজেন্ডা নির্ধারণ করা হয়েছে।”
সাংগঠনিক কর্মসূচির রূপরেখা চূড়ান্ত করে নভেম্বর থেকে রাজনীতির মাঠে দলীয় মহড়া দিতে চায় আওয়ামী লীগ।
কামাল বলেন, “এই বৈঠকে জাতীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হবে। বৈঠকটা আওয়ামী লীগের জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ; কারণ, আগামী দিনে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় নেতাকর্মীদের দিক নির্দেশনা দেবেন নেত্রী।
“এই নির্দেশনায় আগামী দিনে ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করার জন্য নতুন আঙ্গিকে আওয়ামী লীগ নেতারা মাঠে থাকবেন।”