Published : 25 Feb 2023, 03:23 PM
উলফা নেতা অনুপ চেটিয়ার বক্তব্যে চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে বিএনপির মন্ত্রী-এমপিদের সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “যে কথাটি আমরা এতদিন বলে আসছিলাম…। বিএনপির মন্ত্রী-এমপি, হাওয়া ভবন ও হাওয়া ভবনের বরপুত্র তারেক রহমান যে অস্ত্র চোরাচালানের সাথে যুক্ত ছিল, এটি অনুপ চেটিয়ার সাম্প্রতিক বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে।
“বিএনপি তো নিজেরা সন্ত্রাসী দল, সুতরাং দশ ট্রাক অস্ত্র পাচার করে ভারতর্ষেও তারা অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল।”
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল মধ্যরাতে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় সিইউএফএল জেটিঘাটে দুটি মাছ ধরার ট্রলার থেকে অস্ত্র খালাস করে ট্রাকে তোলার সময় পুলিশ সেগুলো জব্দ করে। পরে তা ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার হিসেবে পরিচিতি পায়।
ব্যাপক চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের একটি আদালত রায় দেয়। সেখানে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং উলফার সামরিক শাখার কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াসহ মোট ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
সম্প্রতি দেশে এসে ওই ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কথা বলেন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া। বিপুল পরিমাণ ওই অস্ত্রের চালান উলফার ‘একার নয়’ বলে দাবি করেন তিনি।
শুক্রবার চট্টগ্রামে সেই প্রসঙ্গ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কথা বলছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, “জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে অশান্তি সৃষ্টি করা আমরা সহ্য করব না। সেই কারণে এ ধরনের চোরাচালান এবং অস্ত্র চোরাচালান পরিপূর্ণভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
“গতবছর আমি ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো সফরে গিয়েছিলাম। বিএনপির সময়ে হাওয়া ভবন এবং তারেক রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় অস্ত্র চোরাচালান হয়েছে, বর্তমানে যে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে সেগুলো হচ্ছে না, সেজন্য আসামের মুখ্যমন্ত্রী আমার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন।”
বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা কোনো পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছি না, কিন্তু যারা রাজনীতির নামে মানুষ পুড়িয়েছে, জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, জনগণের সহায়-সম্পত্তিতে আগুন দিয়েছে, তারা যে আবার কখন একই কাজ করবে সেটি বলা যায় না।
“তাই সমগ্র বাংলাদেশে আমরা শনিবার প্রত্যেকটি জেলায় শান্তি সমাবেশ করব এবং সতর্ক দৃষ্টি রাখব যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে। কারণ বিএনপির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি বিশৃঙ্খলা তৈরি করা।”
মন্ত্রী বলেন, “এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যখন মাঠে নামে, তখন জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করার জন্য বাধ্য হয়ে আমাদেরকেও মাঠে থাকতে হচ্ছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মাঠের রাজনীতির দল, আমরা বিরোধী দলে যখন ছিলাম তখন যেমন মাঠে ছিলাম, সরকারি দল হলেও মাঠের রাজনীতির দল হিসেবে সব সময় মাঠে আছি এবং থাকব।”
‘সংবিধানের দোহাই দিয়ে বিরোধীদলের রাজনীতির দমনের চেষ্টা করছে সরকার’- বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খানের এমন বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বা কোন দলকে দমানোর চেষ্টা করছি না। সেটি হলে তো বিএনপি কোন প্রোগ্রাম করতে পারত না।
“আমরা যখন বিরোধীদলে ছিলাম তখন আমাদের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দুই পাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আমাদেরকে সেখান থেকে বের হতে দিত না। এমনকি আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তারা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল, সেখানে অভিযান চালিয়েছিল। কাউকে বের হতে দেয়নি। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সেখানে ছুটে যেতে হয়েছে। আমাদের কর্মীদেরকে তাদের পেটোয়া বাহিনী ও পুলিশ দিয়ে যে হামলা করেছিল সেখান থেকে উদ্ধারের জন্য, আমিও সেদিন সাথে ছিলাম। সেই ধরনের ঘটনা তো এখন ঘটে না।”
চট্টগ্রামের উন্নয়ন শীর্ষক সমন্বয় সভায় বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. আমিনুর রহমান ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানসহ সমন্বয় সভায় বিভিন্ন সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।