জেএসডি সভাপতি বলেন, “সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের বিদায়কে ত্বরান্বিত করতে হবে; আর দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সুযোগ নেই।”
Published : 25 Jun 2023, 08:06 PM
সরকার পতনের আন্দোলনে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চের এক আলোচনা সভায়।
রোববার সেই সভায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, “সময় আসন্ন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের বিদায়কে ত্বরান্বিত করতে হবে। আর দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সুযোগ নেই।
রব বলেন, “বাংলাদেশের পরিস্থিতি আজকে ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন। এই সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে হলেও ক্ষমতায় থাকতে চায়। তাদের কাছে ক্ষমতা ছাড়া আর বড় কিছু নেই, তারা দেশকে দেখে না, ভৌগোলিক এলাকা দেখে না, গরীব মানুষ মানুষ দেখে না।
“সরকারকে বহুদিন ধরে বলেছি, আপনারা শান্তিপূর্ণ ভাবে সারেন্ডার করেন। তারা করে নাই। এখন আর তাদের পালাবার সুযোগ দেয়া যাবে না। তাদের বিচার করতে হবে।”
মঞ্চের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “টিপু ভাই (জাতীয় গণফ্রন্টের সভাপতি টিপু বিশ্বাস, লালা ভাই (জাতীয় মু্ক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হাকিম)… যতদিন এই সরকারকে রাখবেন, ততদিন জনগণকে ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করা তাদের দ্বারা অব্যাহত থাকবে, দেশটাকে তারা লুটপাট করে খাবে। আসুন মাঠের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই স্বৈরাচারকে বিদায় করার চেষ্টা করি।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে ‘রাজনৈতিক সংকট : চলমান আন্দোলন ও জনপ্রত্যাশা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
এতে বিরোধী রাজনীতিকদের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে মঞ্চের সমন্বয়ক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “মানুষ যে পরিবর্তনের জন্য মুখিয়ে আছে এখানে (আলোচনা সভায়) আমাদের যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো আছে- আমি বিশ্বাস করি যাদের পাঁচ-ছয় দশকের অভিজ্ঞতা তারাও সবাই রাজপথে আছেন।
“সময়টা এখন এই রকম যে, গণতন্ত্র মঞ্চসহ আমাদের এই রাজনৈতিক বন্ধুরা আমরা কালকেও যদি এক মঞ্চে আসতে না পারি, আমরা কেবল সমন্বিতভাবে, কাছাকাছিভাবে, যুগপৎভাবে একেবারে পায়ে পা মিলিয়ে, হাতে হাত ধরে কীভাবে একসঙ্গে দাঁড়াতে পারি আমরা… ইতিহাস সেই দায়িত্বটা জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে ওপরে এখন অর্পণ করেছে।”
তিনি বলেন, “প্রধান বিরোধীদল বিএনপির দিকে তাকিয়ে নিশ্চয়ই সকল সমস্যার সমাধান করা যাবে না। ফলে আজকে আন্দোলনে গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্যান্য কেন্দ্রগুলো যত শক্তিশালী হবে, জনগণের আকাঙ্ক্ষা যেভাবে ধারণ করতে পারবে, বিএনপিকেও আমরা ততবেশি আন্দোলনে ধারাবাহিকভাবে… সংহতিপূর্ণভাবে তারাও নিশ্চয়ই রাজপথে থাকতে বাধ্য হবেন।
“আমরা লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সকল বিরোধীদলের যেমন ঐক্যটা গড়ে তুলতে চাই, এই গণঐক্যের মধ্য দিয়ে যেটা বলে নানা মেধা পরিবর্তনের যে জায়গাটা তৈরি হয়েছে। ফলে এবার বাংলাদেশে পরিবর্তন হবে, মানুষ তার ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র অর্জন করবে।”
মঞ্চে আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে জাতীয় গণফ্রন্টের সভাপতি টিপু বিশ্বাস বলেন, “যে সব আলোচনা এখানে হচ্ছে আমিও মনে করি পরিবর্তন হবে। কিন্তু সেই পরিবর্তন জনগণের মুক্তি হবে কি না, প্রত্যাশা আসবে কি না, সেটাই হলো মূল প্রশ্ন। সেই জায়গা থেকে যে কথা বলতে চাই, গণআন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান ব্যতিত অন্য কোনো পথ আছে বলে আমি মনে করি না।”
আলোচনা সভায় মঞ্চের নেতা, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “আজ বাংলাদেশ ডিমান্ড করে, যে দেশে মানুষের ভোট রাতের বেলা ডাকাতি করে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই দেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে সর্বাংশের লড়াই করবেন কি না, সর্বাঙ্গীন লড়াই করবেন কি না?
“এখন মানুষের কাছে এই একটাই ঐক্য চাই, মানুষ মনে করে যে, আমরা আমাদের কথা বলার অধিকার চাই, ভোটের অধিকার চাই… সেজন্য সবাই মিলে চলেন লড়াই করি। আমরা কখনও শুধু সরকার পরিবর্তন নয়, শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের লড়াইয়েও কথা বলেছি। আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ সমাজটা পরিবর্তন করতে চাই।”
সরকার পতনের পর ‘অন্তবর্তীকালীন সরকার’ কেমন হবে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যাও তুলে ধরেন মান্না।
রবের সভাপতিত্বে ও কামাল উদ্দিন পাটোয়ারির সঞ্চালনায় সভায় বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, বাংলাদেশ ভাসানী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির বাবুল সরদার চাখারী, গণফোরামের মোহাম্মদ উল্লাহ মধু বক্তব্য দেন।
‘সার্বভৌমত্বের দোহাই’
মঞ্চের নেতা, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “সরকার সার্বভৌমত্বের ধুয়া তুলতেছে … যারা আজকে বাংলাদেশকে সত্যি সত্যি সার্বভৌমত্বের সংকটের মধ্যে ফেলেছে, তারাই এখন সার্বভৌমত্বের ধুয়া তুলছে। যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলে তারা আবার ভাবছে যে, জনগণকে বোধহয় সেই আওয়াজ দিতে পারবে।
“কিন্তু এটা আমাদের সবচেয়ে ইতিবাচক জায়গা যে, মানুষ তাদের এই ধান্ধাবাজিটা ধরে ফেলেছে। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের আওয়াজ তুলে শেখ হাসিনা আগের জায়গা পাচ্ছেন না।”
সাকি বলেন, “ভারতে গ্যাস রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিয়েছিল… উনি (শেখ হাসিনা) রাজি হননি বলে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেন নাই… এগুলোকে রাজনৈতিক কৌশলের বক্তব্য হিসেবে মানুষ নিয়েছিল। কিন্তু যখন মানুষ সত্যি সত্যি সংকটে তখন ‘সেন্ট মার্টিন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে’ এই কথা বলে মানুষকে যে ব্লাফটা দিতে চাচ্ছেন, এই ব্লাফ দেয়াটা মানুষ আর গ্রহণ করছে না।”
সাকি বলেন, “২০১৪ ও ২০১৮ সালে কিন্তু তারা (সরকার) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই স্লোগান তোলে নাই। যখন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ভোট ব্যবস্থা নিয়ে সিরিয়াস প্রশ্ন উত্থাপন করছে, তখনই কেবল যুক্তরাষ্ট্র এখন সেন্ট মার্টিন নিয়ে নেবে, অমুক নিয়ে নেবে, তমুক নিয়ে নেবে …..”