সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের সময় নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে বলে আশাবাদী বিএনপির কয়েকজন সাবেক নেতার এই দল।
Published : 12 Oct 2023, 05:56 PM
সংবিধানে যেভাবে বলা আছে, সেভাবেই নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত বিএনপির সাবেক কয়েকজন নেতার দল ‘তৃণমূল বিএনপি’। ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাদের শীর্ষ নেতারা।
‘সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে’ নির্বাচন কমিশনের কাছে এক গুচ্ছ দাবিও তুলে ধরেছেন নেতারা।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেত্বাধীন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এসব দাবি তুলে ধরে চলতি বছরের শুরুতে নিবন্ধন পাওয়া দলটি।
তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদা বিএনপি প্রতিষ্ঠার সময় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন, একাধিকবার মন্ত্রীও হন। পরে মতবিরোধে জড়িয়ে বহিষ্কৃত হন, গঠন করেন নিজের দল।
নিজের প্রথম দল বিএনএফ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে নাজমুল হুদা পরে গঠন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ), বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) ও তৃণমূল বিএনপি।
চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধন পায় নাজমুল হুদার তৃতীয় দলটি। এর তিন দিন পরেই মারা যান নাজমুল হুদা। এরপর থেকে তার মেয়ে অন্তরা সেলিমা হুদা দল চালাচ্ছিলেন।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিএনপির দুই সাবেক নেতা সমশের মবিন চৌধুরীকে চেয়ারপারসন ও তৈমুর আলম খন্দকারকে মহাসচিব করে তৃণমূল বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। অন্তরা হুদাকে করা হয় নির্বাহী চেয়ারপারসন।
আলোচিত সেই সম্মেলনের পর প্রথমবারের মতো নির্বাচন কমিশনে গেলেন দলের নেতারা। শমসের মবিন, তৈমুর আলম, অন্তরা হুদাসহ এ সময় উপস্থিত ছিলেন ১৮ জন নেতা।
বৈঠক শেষে শমসের মবিন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা ভোটে অংশ নিতে চাই। ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বেশ কিছু দাবি পেশ করেছি।"
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের সময় নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে বলে আশার কথাও বলেন তিনি।
দাবিগুলো কী কী
সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে তৃণমূল বিএনপি যেসব দাবি জানিয়েছে সেগুলো হলো:
# সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া প্রদত্ত দায়িত্ব ও ক্ষমতা সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে।
# নির্বাচনের সময় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্বাচন কাজে নিয়োজিত যা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে এ রকম প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকতে হবে। বিশেষ করে ডিসি, এসপি, ওসি, ইউএনও বদলিসহ প্রয়োজনীয় যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা থাকতে হবে।
# নির্বচনকালীন প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ অর্থ্যাৎ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। যদি কোনো দল বা প্রার্থী ন্যায্য দাবি বা অভিযোগ করে, দ্রুততম সময়ে তা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
# তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা দৃশ্যমান করতে হবে। রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
# সমাজের বড় একটি অংশ ভোটবিমুখ হয়ে পড়েছে। তাদেরকে ভোটদানে উৎসাহিত করতে হবে এবং ভোটের গুরুত্ব বোঝাতে হবে। প্রয়োজনে সব ধরনের গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে নাটিকা বা বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হবে।
# নির্বাচনের দিন প্রত্যেকটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে।
# নির্বাচনের সময় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও জোরদার করতে প্রয়োজনে সেনা মোতায়েন করতে হবে।
# আস্থা অর্জিত হলে সব রাজনৈতিক দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
# নির্বাচনের দিন প্রত্যেকটি কেন্দ্র যেন ঝুঁকিমুক্ত থাকে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। ভোটের ফলাফল প্রতিটি কেন্দ্রে ঘোষণা করতে হবে এবং প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সই করা ফলাফল শিট প্রত্যেক প্রার্থীর প্রতিনিধির কাছে দিয়ে দিতে হবে।
পরে উপজেলা সদরে মিডিয়াসহ সব প্রার্থী বা তার মনোনীত ব্যক্তির সামনে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করতে হবে যাতে ফলাফল নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে না পারে।
# নির্বাচনের কয়েকদিন আগে ও পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ দৃষ্টি থাকতে হবে যাতে কোনো সহিংসতা হতে না পারে।
এবং
# প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারসহ সার্বিক বিষয়ে নিরাপত্তা দিতে হবে।
কী বলছে ইসি
সব কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন সম্ভব নয় বলে তৃণমূলের দাবি তাদের সঙ্গে বৈঠকেই নাকচ করে দেয় নির্বাচন কমিশন।
অন্যান্য দাবির বিষয়ে কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, “তাদের বক্তব্য, দাবি ও প্রস্তাবসমূহ কমিশন খুব মনোযোগের সঙ্গে শুনেছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব দল অংশগ্রহণ করবে, তাদের জন্য শুরু থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করে সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে কমিশন বদ্ধপরিকর।
“আইন এবং সংবিধানের আলোকে কমিশনকে যেসব ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেসব ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে প্রয়োগ এবং বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবে বলে কমিশন তাদের আশ্বস্ত করেছে।”