আত্মরক্ষার জন্য লাঠি নিয়েছে বিএনপিকর্মীরা: টুকু

“লাঠি আপনারা তুলে দিয়েছেন। বিএনপির কর্মীরা নিজ ইচ্ছায় করে লাঠি তোলে নাই।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2022, 03:05 PM
Updated : 26 Sept 2022, 03:05 PM

বিএনপির সমাবেশে কর্মীদের লাঠি হাতে যোগদানের কারণ আত্মরক্ষার জন্য বলে দাবি করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

সারাদেশে সাম্প্রতিক কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে এবং নিত্যপণ্যের দাম কমানোর দাবিতে সোমবার ঢাকার হাজারীবাগে এক সমাবেশে একথা বলেন তিনি।

ঢাকার মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এই সমাবেশে ট্রাকের উপর মঞ্চ বানিয়ে বক্তৃতা করেন বিএনপি নেতারা। সমাবেশমুখী বিভিন্ন মিছিলে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা হামলা চালায় বলেও বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন।

ধানমণ্ডিতে সমাবেশ করতে পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় হাজারীবাগে করতে হয়েছে জানিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম এই স্থান পরিবর্তনের জন্য সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।

সমাবেশে টুকু বলেন, “আজকে যে ঝড়-ঝাপটা গেছে, অলি-গলি থেকে ওরা (আওয়ামী লীগ) আমাদের উপরে গুপ্ত হামলা করেছিল। পুলিশ যদি আমাদের জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় বেতনভুক্ত না হয়ে ওদের দলীয় কর্মী হত, তাহলে আমরা এখানে সভা করতে পারতাম না। এজন্য আমি পুলিশ ভাইদের ধন্যবাদ দিই।”

সমাবেশে বিএনপির কর্মীদের লাঠি হাতে যোগদানের বিষয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির ভালো কর্মীদেরকে মারতে মারতে এমন একটায় জায়গায় নিয়ে গেছে তারা, আজকে আত্মরক্ষার জন্য লাঠি হাতে নিয়েছে।”

“টেলিভিশনের টক শোতে বিএনপির লাঠি নিয়ে আলোচনা কইরেন না। লাঠি আপনারা তুলে দিয়েছেন। বিএনপির কর্মীরা নিজ ইচ্ছায় করে লাঠি তোলে নাই।”

টুকু বলেন, “দেশে গণতন্ত্র নাই। আজকে আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জনসভা করছি না, আমরা এই জনসভা করছি, আন্দোলন করছি জনগনের অধিকার আদায়ের জন্য।

“মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তদের জীবন চলছে না, তাদের জীবনধারণ কষ্টকর হয়ে গেছে। বাজারে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। রান্না করে খাব, সেই গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে। জ্বালানি তেল নাই, গ্যাসও নাই। এর থেকে উত্তরণে সরকারের পতন ছাড়া কোনো বিকল্প নাই।”

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সবাইকে নিয়ে সরকার গড়া হবে বলে জানান তিনি।

‘এখন শুনব আওয়ামী-জামায়াত’

এতদিন ধরে জামায়াতে ইসলামীকে নিজেদের জোটে রাখলেও এখন দলটিকে আওয়ামী লীগের দিকে ঠেলে দিতে চাইছেন বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

তিনি বলেছেন, “আওয়ামী লীগের কাছে বুলি হয়ে গেছে- বিএনপি-জামায়াত, বিএনপি-জামায়াত। আমি বলছি, এখন সময়ে এসেছে আওয়ামী-জামায়াত, আওয়ামী-জামায়াত বলার জন্য। জামায়াতও উর্দু, আওয়ামীও উর্দু- দুইটার মিলবে ভালো।”

সারাদেশে সাম্প্রতিক কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে এবং নিত্য পণ্যের দাম কমানোর দাবিতে সোমবার ঢাকার ধানমণ্ডির হাজারীবাগে এক সমাবেশে একথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য টুকু।

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াত দুই যুগের বেশি সময় ধরে বিএনপির সঙ্গে জোটে রয়েছে। এই জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রীও করা হয়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলে তাতে জামায়াতের শীর্ষনেতাদের অধিকাংশই বিচারে দণ্ডিত হন। তাদের অধিকাংশের ফাঁসির রায়ও কার্যকর হয়েছে।

এদিকে জামায়াতের গঠনতন্ত্র বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে আদালতের এক রায়ের পর দলটির নিবন্ধনও বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।

এরপর ২০১৮ সালে জামায়াত নেতাদের বিএনপি তাদের ধানের শীষ প্রতীকে ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিলেও ইদানিং জোটসঙ্গী দলটির সঙ্গে যৌথ কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না। তবে এনিয়ে বিএনপি নেতারা মুখও খুলছে না।

জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হলেও দলটিকে বেআইনি ঘোষণা না করার পেছনে আওয়ামী লীগের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে বলে সন্দেহ করছেন বিএনপি নেতা টুকু। 

তিনি বলেন, “উনারা (আওয়ামী লীগ সরকার) জামায়াতের নিবন্ধন ক্যানসেল করেন, কিন্তু বেআইনি ঘোষণা করেন না। তা হলে কি আমি বলব, উনাদের পরকীয়া প্রেম চলছে?

“নিবন্ধন বাতিল করলেন, আপনি তাদেরকে বেআইনি ঘোষণা করলেন না কেন? তার অর্থ আওয়ামী লীগ জামায়াতের ফাঁদে পড়েছে..। আজকে থেকে আওয়ামী-জামায়াত হবে, বিএনপি-জামায়াত আর হবে না।”

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এই সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, আবদুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরাফত আলী সপু, শেখ রবিউল আলম রবি, রফিকুল আলম মজনু বক্তব্য রাখেন।