“মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের অনুচর জিয়াউর রহমানকে ঢুকিয়ে দিয়ে, খন্দকার মোশতাকদের ঢুকিয়ে দিয়ে আমাদের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে চেয়েছিল,” বলেন তিনি।
Published : 26 Aug 2022, 05:36 PM
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ‘আড্ডাখানা’ হিসেবেই জাসদ, গণবাহিনী সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।
শুক্রবার দুপুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের মহিলা বিষয়ক উপ কমিটির শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
নানক বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের অনুচর জিয়াউর রহমানকে ঢুকিয়ে দিয়ে, খন্দকার মোশতাকদের ঢুকিয়ে দিয়ে আমাদের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে চেয়েছিল। ব্যর্থ হয়ে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ষড়যন্ত্র শুরু করে। সেদিন আমাদের দলের ভেতরে অস্থিরতা ছিল, সেই অস্থিরতা শুভ ফল বয়ে আনে নাই।
“জেনারেল জিয়াউর রহমানরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানতে পারেনি। মোশতাকরা মানতে পারে নাই বলে বাংলাদেশ মুসলিম বাংলা নামে সংগঠন প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৯৭২ সালে। এরা সারাদেশে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। সেসময় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। সেদিন বিভাজনের মধ্য দিয়ে গণবাহিনী তৈরি করা হয়েছিল।”
ইতিহাসের আলোচনায় ‘সত্য কথা’ তাকে বলতেই হবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “সেদিন জাসদ সৃষ্টি, গণবাহিনী সৃষ্টি- মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছিল। সেদিন আমাদের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার করা হয়েছিল।”
বাম জোটের হরতাল দেশের জনগণ টের পায়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আজকে যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, তখন কিছু অপশক্তি মাঠে নেমেছে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য জনগণের মাঝে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছে।
দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদেরকে খুব সর্তক হতে হবে। ওরা আবার নেমেছে। ওরা বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেবে না। সে কারণে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা নেমেছে।
“আপনারা পাকিস্তানি প্রেসক্রিপশনে চলছেন। এদেশে ২১ অগাস্টে গ্রেনেড হামলা হয়েছে, কোথায় ছিল মানবতা? এই দেশে পঁচাত্তরে ১৫ অগাস্ট হত্যার পরে সুশীল সমাজরা কথা বলেনি, তাদের প্রতি ধিক্কার দেই। তারা আজকে বড়-বড় কথা বলে। আজকে সেই সুশীলদের বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে। আর জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।”
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেদিন হালবিহীন নৌকা পরিচালনার আত্মিক ও মানসিক শক্তি কেউ দেখাতে পারেনি। আমি কাউকে ছোট করতে চাই না, তবে বলতে চাই আওয়ামী লীগের কর্মীরা কখনও মাথা নোয়ায় না।
“কর্মীরাই এসে হাল ধরে, এটা তারা বারবার প্রমাণ দিয়েছেন। শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
১৫ অগাস্টের ঘটনার সময়ে নিজেদের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “সেদিন কেন আমরা কার্যকর প্রতিরোধ, প্রতিবাদ গড়ে তুলতে পারলাম না! রাজপথে আন্দোলন করতে পারলাম না, সেই ব্যর্থতা নিয়েও আমাদের কথা বলতে হবে। এই ব্যর্থতার দায় আমাদের নিতে হবে।“
নির্বাচন এলে সেই পরাজিত শক্তিরা নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অতীতের মত এবারও তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, বিজয়ের আনন্দ ক্ষণস্থায়ী, পরাজয়ের গ্লানি চিরস্থায়ী। এই পরাজয়ের গ্লানি মোচন করা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করার জন্য একাত্তরের পরাজিত শক্তি জাতির পিতাকে হত্যা করে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুলতানা শফির সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহুমুদা বেগম কৃক।