দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান বলেন, ‘‘অনেক দিন পরে মুক্ত আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে সমাবেশ করতে পারছি। তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’’
Published : 28 Oct 2023, 05:36 PM
ঢাকা মহানগর পুলিশের অনুমতি ছাড়াই ঢাকার সমাবেশ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
একই দিন কাকরাইলে সংঘর্ষের পর বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হওয়া নিয়ে কোনো বক্তব্যও দেননি নেতারা। কোনো কর্মসূচির ঘোষণাও আসেনি।
শনিবার বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে চেষ্টার পর জামায়াত নেতাদের বক্তব্য পর্ব চলে ঘণ্টাখানেক। এরপর সুনির্দিষ্ট এলাকা দিয়ে নেতা-কর্মীদেরকে জনসভাস্থল ছাড়তে বলা হয়, তারাও সেই নির্দেশনা অনুযায়ী যার যার অবস্থানে ফিরে যান।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তন, বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ২৮ অক্টোবর বিএনপি ‘মহাসমাবেশ’ ডাকার পর একই কর্মসূচি দিয়েছিল বিরোধী দলটির দেড় যুগের শরিক জামায়াতও। তবে তাদের কর্মসূচিটি দেওয়া হয় ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর স্মরণে, যেদিন ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিএনপি-জামায়াত জোট।
সে সময়ের রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ সেদিন তত্ত্বাবধায়কের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবেও শপথ নেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তার জোটের শরিক দলগুলো রাজপথে দেয় কর্মসূচি। পুরানা পল্টন মোড়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জামায়াত-শিবিরের বেশ কয়েকজন নিহত হয়।
১৭ বছর পর একই তারিখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও সমাবেশ থাকায় শুরু হয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
জামায়াত মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জমায়েত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। তবে পুলিশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে তাদের পছন্দের স্থানে সমাবেশ করতে দিলেও জামায়াতকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মী আগের রাত থেকেই বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট ও নয়া পল্টনে জড়ো হতে থাকে। সকাল জামায়াতের কর্মীরা জড়ো হয় মতিঝিলের অদূরে আরামবাগ মোড়ে।
তখনও পুলিশ জানায়, অনুমতি ছাড়া জড়ো হওয়ার সুযোগ নেই। ধর্মভিত্তিক দলটির নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দিতে জানানো হয়েছে।
তবে দুপুরের দিকে ঘিরে রাখা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙেই ট্রাকে মঞ্চ বানিয়ে সমাবেশ শুরু করে জামায়াত। বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা, যারা গত কয়েক বছর ধরেই নানা সময় অজ্ঞাত স্থানে কর্মসূচি পালন করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে থাকেন।
ততক্ষণে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশটি পণ্ড হয়ে যায়। প্রথমে কাকরাইল মোড়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এবং পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপির কর্মীরা। কয়েক ঘণ্টা সংঘর্ষের পর রোববার হরতাল ঘোষণা করে সমাবেশ শেষ করে দেন শীর্ষ নেতারা।
তবে জামায়াতের সমাবেশে বক্তব্য পর্ব চলে নির্বিঘ্নেই। সেখানে বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে এই সংঘাত নিয়ে কোনো কথা বলেননি জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির বা অন্য জ্যেষ্ঠ নেতারাও।
বরং পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অনেক দিন পরে মুক্ত আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে সমাবেশ করতে পারছি। তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’’
গত ১০ জুনের পর এটি ঢাকায় জামায়াতের প্রথম সমাবেশ। সাড়ে তিন মাস আগের সেই কর্মসূচি ছিল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিউশনে। সেটি ছিল এক দশক পর দলটির প্রকাশ্য কোনো জমায়েত।
২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মতিঝিল সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছিল জামায়াত। এরপর বহুবার সমাবেশ ও মিছিলের ডাক দিয়েও নির্বিঘ্নে তা শেষ করতে পারেনি দলটি। নানা সময় ঝটিকা মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দিয়েছে, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে। সেসব কর্মসূচি থেকে অনেক নেতা-কর্মীকে আটকও করা হয়।
আরামবাগের সমাবেশে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির বলেন, “মানুষের ভোটাধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা। আমাদের আন্দোলন চলবে।…তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। জীবন দিয়ে হলেও আমাদের দাবি আদায় করব।’’
২০০৬ সালের সংঘর্ষের বিষয়ে মুজিবুর বলেন, ‘‘আমরা সেই ২৮ অক্টোবরের প্রতিশোধ নিতে চাই। তবে হত্যার বদলে হত্যা নয়। শহীদদের স্বপ্নকে পুরণ করতে চাই। আমরা কোরআন ও সুন্নাহর আইন চালু করে প্রতিশোধ নেব ইনশাআল্লাহ। কোনো শহীদ ভাইয়ের এক ফোটা রক্তও বৃথা যেতে দেব না।’
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলেন বোমা হামলার সামলোচনা করে তিনি বলেন, “গোটা বিশ্বে অভিশপ্ত জাতি হচ্ছে ইহুদি। তারা এক সময়ে পালানোর জায়গা পাবে না, মুসলমানরা এক সময়ে বিজয়ী হবে। ইহুদিরা পরাজিত হবে।’’
দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় না। তাই আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনa ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাব না।’’
সমাবেশ শেষে দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুল কর্মীদের বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ হল। আপনারা সবাই শাহজাহানপুর দিয়ে চলে যাবেন।”
এরপর কর্মীরা শাপলা চত্বরের দিকে না গিয়ে শাহজাহানপুরের উদ্দেশে আরামবাগ ত্যাগ করেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এটিএম মাসুম, নায়েবে আমির সামছুল ইসলাম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, আব্দুল হালিম, মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি আব্দুর রহমান মুসাও।