বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিকে ‘দূষিত করছে’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ক্ষমতায় না থেকেও আগুন সন্ত্রাস করা দলটি আবার ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে কিছুই আর থাকবে না।
মঙ্গলবার ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে দলের এক আলোচনাসভায় এ কথা বলেন কাদের।
এ সময় বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, "ক্ষমতায় নেই তারপরও আগুন সন্ত্রাস... এ রকম একটি দল... আমার কাছে মাঝে মাঝে মনে হয় বিএনপি নামক দলটি বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য একটি বিষফোঁড়া। আজকে এই বিষফোঁড়া পদে পদে এখানকার রাজনৈতিক অঙ্গনকে কলুষিত করছে, রক্তাক্ত করতে দূষিত করছে।
“আপনারা (বিএনপি) যদি আবার ক্ষমতায় যেতে পারেন- এদেশের রাজাকার হবে মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিযোদ্ধা হবে রাজাকার। যুদ্ধাপরাধীরা এই দেশে স্বাধীনতা পুরস্কার পাবে। একুশের চেতনাবিরোধীরা একুশে পদক পাবে। সেই বাংলাদেশ আমরা চাই না।”
তাই ৭ মার্চের এই ঐতিহাসিক দিনে নেতা-কর্মীদের শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, “আট-ঘাট বেঁধে নামতে হবে। স্বাধীনতারিবোধী সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদী শক্তি অশুভ শক্তির হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে।
"অবস্থা পাল্টে গেলে বাংলাদেশ আবারও উল্টো পথে যাত্রা করবে। কাজেই আমাদের নিজেদেরও আত্মসংযমী হতে হবে। আত্মসমালোচনা করতে হবে, প্রস্তুতিমূলক যে ঘাটতির অভাব রয়েছে, সেগুলো পূরণ করার জন্য আমাদের দুই মাসের বেশি সময় নাই।”
তিনি বলেন, "ফখরুল বলছেন, আমরা মাঠ খালি করছি। নেতিবাচক রাজনীতির কারণে মানুষ আজ ভেবে নিয়েছে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। নেই বলে আপনাদের পেছন থেকে যারা যারা ছিল তারা সরে গেছেন। মাঠ পাবলিকই খালি করে দিচ্ছে। মাঠ আমাদের খালি করার দরকার নাই।"
এ সময় বিএনপির শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনের চিত্র বক্তব্যে তুলে ধরে কাদের বলেন, "আমাদের রাস্তায়ও দাঁড়াতে দেননি। আমরা বাড়িতে থাকতে পারিনি, পার্টি অফিসের সামনে দাঁড়াতে পারিনি। প্রয়াত মোহাম্মদ নাছিম, মতিয়া চৌধুরীসহ আমরা সবাই অত্যাচারিত হয়েছি। অন্তঃস্বত্ত্বা নারীকে এসপি কহিনুর মেরে রাস্তায় আহত করেছে। ভুলে গেছেন ফখরুল সাহেব?
“আমাদের ২৬ হাজার কর্মীর রক্তস্রোতে ভেসে গেছে বাংলাদেশ। ভুলে গেছেন? কী অত্যাচার! আপনারা তো পালিয়ে গেছেন বিদেশে। লুটপাট করে লন্ডনে পাড়ি দিয়েছেন। মুচলেকা দিয়েছেন- আর রাজনীতি করবেন না। কেন পালিয়ে যাওয়ার গল্প আমাদের শোনান। পালিয়ে যাওয়ার গল্প তো আপনাদের। এটা তো আপনাদের গল্প।”
এ সময় ৭ মার্চের ভাষণের দুরদর্শিতার কথা বলতে গিয়ে কাদের বলেন, "ফরাসি বিপ্লবে একটা উস্কানিমুলক বক্তব্য গোটা বিপ্লবকে তছনছ করে দিয়েছিল। বেপরোয়া তরুণদের কথায় বঙ্গবন্ধু যদি ভুল করতেন তাহলে সেদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড আক্রান্ত হত।
“রেজাল্ট কী হত? সেটা যদি বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দী থেকে ঘোষণা করতেন উপরে অনেক প্রস্তুতি ছিল। কত হাজার লোকের মুত্যু হত। কত লোকের রক্ত ঝড়ত, সেটা বিশ্বাস করা যাবে না। সেই আন্দোলনের কোনো রেজাল্ট হত না। যা বলার তাই বলেছেন কৌশলে। এমন কিছু বলেননি, যা জনতাকে উস্কে দেবে।"
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন- সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, কামরুল ইসলাম, মতিয়া চৌধুরী, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বক্তব্য দেন।