“ফখরুল সাহেব, দিল্লি বহু দূর,” বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
Published : 12 Oct 2023, 07:58 PM
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘তলে তলে আপস’ হয়ে যাওয়ার কথা বলার এক সপ্তাহ পর আবারও একই সুর তুললেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের; বিএনপিকে বললেন, ভিসা নীতি দিয়ে ‘আর কোনো লাভ হবে না’।
বৃহস্পতিবার বিকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপিকে ‘আমেরিকা রোগে পাইছে’ মন্তব্য করে সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, "আর কাউকে তো পায় না। ওইভাবে আমেরিকানরাও আসে না। পাত্তা দেয় না। দৌড়ে যায় পিটার হাসের (বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত) কাছে।
“সকালে ঘুম থেকে উঠে পিটার হাস, দুপুরে লাঞ্চ করতে পিটার হাস, রাতে ডিনার করতে পিটার হাস। আমি জানি না, হাসাহাসে ফখরুলকে কী স্বপ্ন দেখিয়েছে। তবে ক্ষমতার স্বপ্ন দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। ফখরুল সাহেব, দিল্লি বহু দূর। ক্ষমতার পথ আপনারাই বন্ধ করে দিয়েছেন।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, "পিটার হাস সাহেব কী করবেন? ভিসা নীতি দিবেন? কী করবেন? নিষেধাজ্ঞা দিবেন? পিটার হাস সাহেবের মুরুব্বিদের সাথে আমাদের কথা হয়ে গেছে। আমেরিকার মুরুব্বি যারা, তাদের সাথে কথাবার্তা শেষ। উচ্চ পর্যায়েও কথাবার্তা হয়ে গেছে।
“তলে তলে যখন সব শেষ, তখন আর এসব করে লাভ কী? পিটার হাসকে দেখিয়ে নির্বাচন বন্ধ করবেন, ঢাকায় তাণ্ডব করবেন, সেই খেলা খেলতে দেব না। সেই খেলা সন্ত্রাসের খেলা, বিএনপিকে সেই খেলা খেলতে দেব না।"
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, রাশিয়া, চীনসহ বিশ্বের বড় বড় দেশ ও শক্তির নানামুখি তৎপরতার মধ্যে গত ৪ অক্টোবর ঢাকার আমিনবাজারে আওয়ামী লীগের এক জনসভায় ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, “কোথায় স্যাংশন, কোথায় ভিসা নীতি! তলে তলে আপস হয়ে গেছে, আপস হয়ে গেছে। দিল্লি আছে, আমেরিকারও দিল্লিকে দরকার। আমরা আছি, দিল্লিও আছে। দিল্লি আছে, আমরাও আছি। শত্রুতা কারও কাছে না, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব।”
তার ওই বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনার জন্ম দেয়। বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী এর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “তলে তলে আপস হয় না, ষড়যন্ত্র হয়।”
পরে অবশ্য কাদের তার ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, আমিনবাজারের জনসভায় সেই বক্তব্যে তিনি ‘ভুল কিছু বলেননি’। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের কথাই তিনি ‘তলে তলে আপস’ শব্দবন্ধটি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন। ‘পাবলিক খায়’, তাই বলার সময় ‘তলে তলে’ বলেছেন।
বৃহস্পতিবারের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, "এখন কোয়ার্টার ফাইনাল, সামনে সেমিফাইনাল, ফাইনাল হবে জানুয়ারিতে। খেলা হবে সারা ঢাকায়, খেলা হবে চট্টগ্রামে, খেলা হবে সিলেটে, খেলা হবে রাজশাহীতে, খেলা হবে বরিশালে, খেলা হবে খুলনায়, খেলা হবে সারা বাংলায়। ঠিক আছে, ফাইনাল পর্যন্ত খেলতে হবে। এখনই ক্লান্ত হলে চলবে না।
"মির্জা ফখরুলের সর্বশেষ বক্তৃতা শুনে মনে হল, মির্জা ফখরুল এখনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মরা লাশ নিয়ে টানাটানি করছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মরা লাশ। আজিমপুরের গোরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত। গোরস্থান থেকে ফখরুল এখন ওই মরা লাশ টেনে আনছে। এই মরা লাশে মুক্তি আসবে না।"
মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ করে কাদের বলেন, "নির্বাচন হবে বাংলাদেশে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা বেঁচে থাকলে এই দেশে নির্বাচন কেউ বন্ধ করতে পারবে না। নির্বাচন হবে, শান্তিপূর্ণ হবে। এ দেশে নজিরবিহীন উন্নয়ন করেছেন শেখ হাসিনা৷ এদেশে নজিরবিহীন নিরপেক্ষ নির্বাচন শেখ হাসিনাই করবেন। নজিরবিহীন নিরপেক্ষ নির্বাচন হবেই। ফখরুল সাহেব নির্বাচনে না এলে আমও যাবে, ছালাও যাবে৷ দুইটাই হারাবেন। দুনিয়াব্যাপী আপনারা বদনাম করেছেন, দেশে দেশে বদনাম করছেন, বদনাম ঘোচানোর জন্য শেখ হাসিনা এমন নির্বাচন করবেন, যে নির্বাচন হবে নজিরবিহীন। ফখরুল সাহেব হারালে আর পাবেন না।
"খেলা হবে, খেলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। খেলা হবে, সামনে আসছে সেমিফাইনাল। তারপরে ফাইনাল, গলা ঠিক রাখতে হবে। সামনে আরো দুই মাস, এখনই তোমরা বেশি ক্লান্ত হইয়ো না।"
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করায় বিএনপি নেতাদের সমালোচনায় ওবায়দুল কাদের বলেন, "সেদিন বলেছিলাম, রূপপুরে ইউরেনিয়ামের চালান আসছে। ফখরুল, মির্জা আব্বাসরা বলে, মঈন খানরা বলে, রূপপুর বন্ধ করে দেবে।
“ইউরেনিয়াম যেটা আছে, সেটা সারা দুনিয়া স্বীকৃত। এই রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎ, আমরা ইউরেনিয়াম ক্লাবে তেত্রিশ নম্বরে যুক্ত হয়েছি। এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যারা বন্ধ করে দিতে চায়, আমরা এত কোটি কোটি টাকার ইউরেনিয়াম কেন আনলাম, এজন্য বলেছি, ওদের মাথার উপর ঢালব। ফখরুল, মির্জা আব্বাসরা গরম হয়ে যায়, তাদের মাথার উপর ঢালতে হবে।"
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা স্মরণ করে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, "আজকে এখানে দাঁড়ালে বিএনপির সেই নৃশংস চরিত্র আমাদের চোখের সামনে আসে। এই বিএনপি ওই বিল্ডিং থেকে গ্রেনেড মেরে আমাদের নেত্রীকে হত্যা করতে চেয়েছিল। আমাদের ২৩টি প্রাণ সেদিন রক্তাক্ত করেছিল। আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছিলাম।
"এই সেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউ,এখানে এলে বিএনপি কত ভয়ঙ্কর, বিএনপি কত নিষ্ঠুর, সেই ছবি আমরা বারবার দেখতে পাই। কাজেই প্রস্তুত থাকতে হবে, সবদিক থেকেই খেলা হবে। ওরা ফাউল করবে, ফাউলের জবাব দিতে হবে। লাল কার্ড দেখাতে হবে।"