শরিক ও অন্য দলের সঙ্গে সমঝোতা শেষে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রার্থী কারা, তা জানা যাবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর।
Published : 26 Nov 2023, 10:10 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যাদেরকে প্রার্থী করেছে, তাদের মধ্যে ১০৫ জন গত সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হননি।
এদের মধ্যে অনেকেই অতীতে নানা সময় দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তবে ৬৯ জন একেবারেই প্রথমবারের মতো পেলেন দলের টিকিট।
আওয়ামী লীগ যেসব আসনে প্রার্থী বদল করেছে, তাদের মধ্যে ৭২ জন চলতি সংসদের সদস্য। এদের মধ্যে আবার তিন জন আছেন প্রতিমন্ত্রী।
আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটকে সামনে রেখে রোববার ক্ষমতাসীন দল ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৮টিতে প্রার্থী ঘোষণা করে।
গত তিনটি নির্বাচনের মতো এবারও আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে ভোটে যাচ্ছে। গত নির্বাচনে জোটের শরিকদের ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোর মধ্যে কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন।
গত সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ শুরুতে প্রায় সব আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করেছিল। তবে ভোটের আগে আগে মহাজোটের শরিকদেরকে ৪২ আসনে ছাড় দিয়ে নিজেদের প্রার্থী রাখে ২৫৮টি।
জাতীয় পার্টিকে সে সময় ছাড় দেওয়া হয় ২৬ আসন, ১৪ দলের শরিকদের ছাড়া হয় ১৪ টি আসন।
এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির পাঁচ, জাসদের তিন, তরিকত ফেডারেশনের দুই, বাংলাদেশ জাসদের এক ও বিকল্পধারার তিনজন নৌকা প্রতীকে ভোট করবেন। তারা ভোট করে নৌকা নিয়ে।
জাতীয় পার্টি (জেপি)কে ছাড়া হয় দুটি আসন। তারা ভোটে অংশ নেয় নিজস্ব প্রতীক বাইসাইকেল নিয়ে।
এবারও আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে ভোট করবে বলে জানিয়েছে। তবে বিএনপি ও তার শরিক এবং সমমনা দলগুলো ভোটে না আসার সিদ্ধান্তে অটল। আওয়ামী লীগ এবারও জোটবদ্ধ নির্বাচন করবে বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে। তবে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে মহাজোট হবে কি না, সে বিষয়ে জানানো হয়নি।
এবারও ২০১৪ সালের মতো জাতীয় পার্টিকে কিছু আসনে ছাড় দেওয়ার আলোচনা আছে। তবে এ নিয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি।
জাতীয় পার্টি ছাড়াও প্রথমবারের মতো ভোটে অংশ নিতে যাওয়া তৃণমূল বিএনপি, বিএনএমসহ আরও কয়েকটি দলকে ছাড় দেওয়ার আলোচনাও আছে।
আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এসব মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই চলবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬ চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে, প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর।
অর্থাৎ প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত আসন সমঝোতার সুযোগ আছে আওয়ামী লীগের।
প্রার্থী বদল যেসব আসনে
রংপুর বিভাগ
এই বিভাগে ১১টি আসনে প্রার্থী পাল্টেছে ক্ষমতাসীন দল।
পঞ্চগড়-১ আসনে নাইমুজ্জামান ভুইয়া এবার প্রথমবারের মতো ভোট করতে যাচ্ছেন।
ঠাকুরগাঁও-২ আসনে মো.মাজহারুল ইসলাম ও ঠাকুরগাঁও-৩ মো. ইমদাদুল হক গত নির্বাচনে অংশ নেননি।
নীলফামারী-৩ আসনে মো. গোলাম মোস্তফা ও নীলফামারী-৪ আসনে প্রার্থী প্রার্থী পাল্টে জাকির হোসেন বাবুলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
লালমনিরহাট-৩ আসনেও প্রার্থী পাল্টে মো. মতিয়ার রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
রংপুরে প্রার্থী পাল্টেছে তিনটি। এর মধ্যে রংপুর-১ আসনে রেজাউল করিম রাজু, রংপুর-৩ আসনে তৃষার কান্তি মন্ডল ও রংপুর-৫ আসনে রাশেক রহমান পেয়েছেন মনোনয়ন।
কুড়িগ্রামে আসন পাল্টেছে তিনজন। কুড়িগ্রাম-২ আসনে জাফর আলী, কুড়িগ্রাম-৩ আসনে সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে ও কুড়িগ্রাম-৪ আসনে প্রার্থী পাল্টে বিপ্লব হাসানকে দেওয়া হচ্ছে নৌকা।
গাইবান্ধা-১ আসনে আফরোজা বারী ও গাইবান্ধা-৪ আবুল কালাম আজাদও গতবার প্রার্থী হননি।
রাজশাহী বিভাগ
এই বিভাগে প্রার্থী পাল্টানো হয়েছে ১৮ জন।
এর মধ্যে বগুড়াতেই পাল্টেছে পাঁচটি। বগুড়া-২ আসনে তৌহিদুর রহমান মানিক, বগুড়া-৩ আসনে সিরাজুল ইসলাম খান, বগুড়া-৪ আসনে হেলাল উদ্দিন কবিরাজ, বগুড়া-৫ আসনে মজিবর রহমান মজনু ও বগুড়া-৭ আসনে মো. মোস্তফা আলম গতবার মনোনয়ন পাননি।
নওগাঁয় নতুন প্রার্থী দুইজন। এরা হলেন নওগাঁ-৩ আসনের সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও নওগাঁ-৪ আসনে নাহিদ মোরশেদ।
রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের নতুন মুখ চারজন।
এরা হলেন রাজশাহী-২ আসনের মোহাম্মদ আলী, রাজশাহী-৩ আসনের আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহী-৪ আসনের আবুল কালাম আজাদ ও রাজশাহী-৫ আসনের মো. আব্দুল ওয়াদুদ।
সিরাজগঞ্জ-২ আসনে জান্নাত আরা হেনরী, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে শফিকুল ইসলাম ও সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে চয়ন ইসলাম গত নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি।
পাবনা-৪ গালিবুর রহমান শরীফ, মেহেরপুর-২ আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক, ঝিনাইদহ-৩ সালাউদ্দিন মিরাজী, যশোর-২ আসনে তৌহিদুজজমান এবং যশোর-৪ আসনে এনামুল হক বাবুকে নৌকা দেওয়া হয়েছে। তারাও গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন না।
খুলনা বিভাগ
এই বিভাগে নতুন প্রার্থী ১২ জন।
এদের মধ্যে মাগুরা-১ সাকিব আল হাসান প্রথমবারের মতো নির্বাচন করছেন। বাগেরহাট-৪ বদিউজ্জামাল সোহাগও এবারই মনোনয় পেলেন।
খুলনা-১ আসনে ননি গোপাল মন্ডল, খুলনা-৩ আসনে এসএম কামাল হোসেন খুলনা-৬ আসনে মো. রশীদুজ্জামানও গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন না।
সাতক্ষীরা-১ আসনে আসন পাল্টে ফিরোজ আহমেদ স্বপন, সাতক্ষীরা-২ আসনে মো. আসাদুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা-৪ আসনে এসএম আতাউল হকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
মেহেরপুর-২ আসনে আবু সালেদ মো. নাজমুল হক, ঝিনাইদহ-৩ আসনে মো. সালাহ উদ্দিন মিয়াজী, যশোর-২ আসনে মো. তৌহিদুজজমান এবং যশোর-৪ আসনে এনামুল হক বাবুলও নতুন মুখ।
বরিশাল বিভাগ
সব মিলিয়ে বরিশাল বিভাগে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পাল্টানো হয়েছে ৭টি আসনে।
বরিশালের ছয়টি আসনের মধ্যে চারটিতেই পাল্টানো হয়েছে প্রার্থী।
এর মধ্যে বরিশাল-২ আসনে তালুকার মোহাম্মদ ইউনুস, বরিশাল-৩ আসনে সরদার মো. খালেদ হোসাইন, বরিশাল-৪ আসনে শাম্মী আহমদ ও বরিশাল-৬ আসনে আব্দুল হাফিজ মল্লিককে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
পিরোজপুর-২ আসনে কানাই লাল বিশ্বাস ও পিরোজপুর-৩ মো. আশরাফুর রহমান পেয়েছেন মনোনয়ন।
বরগুনা-২ আসনে সুলতানা নাদিরাও গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন না।
ঢাকা বিভাগ
এই বিভাগে প্রার্থী বদল হয়েছে ২২টি আসনে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯জন প্রার্থী বদল হয়েছে ঢাকায়।
এর মধ্যে ঢাকা-৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সানজিদা খানম, ঢাকা-৫ আসনে হারুনুর রশিদ মুন্না, ঢাকা-৬ আসনে সাঈদ খোকন, ঢাকা-৭ সোলাইমান সেলিম, ঢাকা-৮ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা-১০ আসনে ফেরদৌস আহমেদ, ঢাকা-১১ আসনে মো. ওয়াকিল উদ্দিন, ঢাকা-১৩ আসনে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ঢাকা-১৪ আসনে মাইনুল হোসেন খান নিখিল পেয়েছেন মনোনয়ন।
টাঙ্গাইলের আটটি আসনের মধ্যে চারটিতে প্রার্থী বদল হয়েছে।
এর মধ্যে টাঙ্গাইল-৩ আসনে কামরুল হাসান খান টাঙ্গাইল-৪ আসনে মো.মাজহারুল ইসলাম তালুকদার, টাঙ্গাইল-৫ আসনে মো. মামুন অর রশিদ ও টাঙ্গাইল-৮ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন অনুপম শাহজাহান জয়।
কিশোরগঞ্জ-২ আসনে আব্দুর কাহার আকন্দ ও কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে মো. নাসিরুল ইসলাম খানও নতুন প্রার্থী।
মানিকগঞ্জ-১ আসনে মো. আব্দুস সালাম, গাজীপুর-৩ আসনে রুমানা আলী, নরসিংদী-৩ আসনে ফজলে রাব্বী খানও নতুন প্রার্থী।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের আব্দুল্লাহ আল কায়সারও গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন না।
ফরিদপুর-১ আসনে আব্দুর রহমান ও ফরিদপুর-৩ শামীম হকও নতুন প্রার্থী।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মহিউদ্দিন আহমেদও গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন না।
ময়মনসিংহ বিভাগ
এই বিভাগের ২৪ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদল হয়েছে ১১টিতে।
ময়মনসিংহ-৩ আসনে নিলুফা আনজুম, ময়মনসিংহ-৪ আসনে মোহাম্মদ মোহিত উর রহমান, ময়মনসিংহ-৫ আসনে আব্দুল হাই আকন্দ, ময়মনসিংহ-৮ আসনে আব্দুস সাত্তার ও ময়মনসিংহ-৯ আসনে আব্দুস সালাম গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন না।
জামালপুরে প্রার্থী পাল্টেছে তিনটি।
জামালপুর-১ আসনে নুর মোহাম্মদ, জামালপুর-৪ আসনে মাহবুবুর রহমান ও জামালপুর-৫ আসনে আবুল কালাম আজাদ মনোনয়ন পেয়েছেন।
শেরপুর-৩ আসনে শহিদুল ইসলামও নতুন প্রার্থী।
নেত্রকোণা-১ আসনে মোস্তাক আহমেদ রুহী ও নেত্রকোণা-৫ আসনে আহমদ হোসেন পাচ্ছেন নৌকা।
সিলেট বিভাগ
এই বিভাগে প্রার্থী বদল হয়েছে ৯টি আসনে।
সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে সিলেট-২ আসনে শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সিলেট-৫ মাসুক উদ্দিন আহমেদ গত নির্বাচনের প্রার্থী ছিলেন না।
সুনামগঞ্জ-১ আসনে রনজিত চন্দ্র সরকার, সুনামগঞ্জ-২ আসনে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও সুনামগঞ্জ-৪ আসনে প্রার্থী পাল্টে মো. সাদিককে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
মৌলভীবাজারে প্রার্থী বদল হয়েছে দুটি আসনে। এর মধ্যে মৌলভীবাজার-২ আসনে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও মৌলভীবাজার-৩ আসনে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান পেয়েছেন মনোনয়ন।
হবিগঞ্জ-১ আসনে মো. মুশফিক হোসেন চৌধুরী ও হবিগঞ্জ-২ আসনে প্রার্থী পাল্টে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ময়েজ উদ্দিন শরিফ।
চট্টগ্রাম বিভাগ
এই বিভাগে প্রার্থী বদল হয়েছে ১৫টি আসনে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে ফয়জুর রহমান নতুন প্রার্থী।
কুমিল্লায় আসন পাল্টেছে দুটি। কুমিল্লা-১ আসনে আব্দুস সবুর ও কুমিল্লা-৮ আসনে আবু জাফর মো. শফিউদ্দিন নতুন প্রার্থী।
চাঁদপুর-১ আসনে সেলিম মাহমুদ ও চাঁদপুর-২ আসনের মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন না।
ফেনী-১ আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (আলাউদ্দিন নাসিম) ও ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী পাল্টে আবুল বাশারকে নৌকা দেওয়া হচ্ছে।
নোয়াখালী-৬ আসনে মোহাম্মদ আলী গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন না।
লক্ষ্মীপুর-৪ ফরিদুন্নাহার লাইলীও এবার ভোটে দাঁড়াচ্ছেন প্রথমবারের মতো।
চট্টগ্রাম-১ আসনে মাহবুব উর রহমান, চট্টগ্রাম-২ আসনে খাদিজাতুল আনোয়ার, চট্টগ্রাম-৪ আসনে এসএম আল মামুন, আসনে চট্টগ্রাম-৫ মো. আব্দুস সালাম ও চট্টগ্রাম-১২ আসনে প্রার্থী পাল্টে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে দেওয়া হয়েছে মনোনয়ন।
কক্সবাজার-১ আসনের সালাউদ্দিন আহমেদও গত নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি।