বিএনপির হাজিরায় তো কড়া পাহারা, জঙ্গিদের বেলায় কই? প্রশ্ন ফখরুলের

“জনগণের কাছে প্রশ্ন জেগেছে, আবার সেই জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে কি না,” বললেন বিএনপি মহাসচিব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2022, 05:06 PM
Updated : 21 Nov 2022, 05:06 PM

আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা কড়া পুলিশ পাহারার মধ্যে পড়লেও জঙ্গিদের ক্ষেত্রে তা ঢিলেঢালা রাখা হয় কি না, সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, “আপনারা গুলি করে (বিএনপিকর্মী) নয়ন মিয়াকে হত্যা করতে পারেন, (বিএনপিকর্মী) শাওনকে হত্যা করতে পারেন। আর আদালতে আপনাদের জঙ্গি উধাও হয়ে যায়, তখন আপনারা কিছুই করতে পারেন না। আমরা তো আদালতে যাই নিয়মিত, হাজিরা দিতে হয় আমাদের। আমরা তো দেখি চতুর্দিকে পুলিশ; সেখানে এন্ট্রি, এক্সিট- সবই নিয়ন্ত্রিত।” 

সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আগের দিন ভরদুপুরে পুরান ঢাকার জনাকীর্ণ আদালত থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) নেতা মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের সহযোগীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীর ভাষ্য অনুযায়ী, সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল শুনানি শেষে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশের দিকে ‘স্প্রে মেরে’ তাদেরকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

এই ঘটনাকে ক্ষমতাসীনদের টিকে থাকার কৌশল হিসেবে দেখছেন ফখরুল। তার বর্ণনায়, “কী খোঁড়া যুক্তি, স্প্রে করে আপনার জঙ্গি, কনভিক্টেড জঙ্গি। তাকে একজন নাকি পুলিশ সদস্য নিয়ে আসতেছিল। এটা কেমন করে হতে পারে? অসম্ভব ব্যাপার। সেই ক্ষেত্রে জনগণের কাছে প্রশ্ন জেগেছে আবার যে, আবার সেই জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে কি না; যাতে করে তাদের আবার ক্ষমতায় টিকে থাকা স্থায়ী হতে পারে, কিছুটা সময় পায়।“

ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গি শামীম ও সিদ্দিক দুজনই জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলাতেও আবু সিদ্দিক সোহেলের ফাঁসির রায় হয়েছে।

ক্ষমতা টিকে রাখতে সরকার একের পর এক তত্ত্ব হাজিরের চেষ্টা করছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, “আরেকটা শুরু করেছিলো অগ্নিসন্ত্রাস। খুব একটা হালে পানি পায়নি। এটা খুব বেশি নেয়নি মিডিয়া। যে কারণে সেটাকে তারা জোর দিয়ে ইয়ে করতে পারছে না।

“কিছুদিন হলো জঙ্গি জঙ্গি শুরু করেছে। তারপর উধাও করে দিলো। তাও আবার কারা? অভিজিত হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, যাদের শাস্তি হয়েছে, মার্কিন নাগরিক... বিষয়টাকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। এটা হতেই পারে না। আজকে জনগণের কাছে এই প্রশ্নটা এসেছে, কিভাবে আদালত থেকে আসামি ছিনতাই হয়ে যেতে পারে; তাও অভিযুক্ত সাজাপ্রাপ্ত আসামি।”

এ সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তারের ঘটনা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

‘১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নয়া পল্টনেই হবে’

কুমিল্লা, রাজশাহী ও ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ ঘোষিত স্থানেই হবে বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে করার অনুমতি চেয়ে গত সপ্তাহে দলটি ডিএমপিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, “একটা কথা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই- কুমিল্লায় ২৬ নভেম্বর, রাজশাহীতে ৩ ডিসেম্বর এবং ১০ তারিখ ঢাকায়। এই বিভাগীয় সমাবেশগুলো প্রত্যেকটি- একই (ঘোষিত) দিনে একই সময়ে ঘোষিত স্থানেই হবে।

“সরকারের উচিত হবে যদি ন্যূনতম শুভবুদ্ধির উদয় হয়, এই সমাবেশগুলোতে বাধা প্রদান না করা এবং নিজেদেরকে এভাবে একেবারে হাস্যকর অবস্থায় না নিয়ে যাওয়া। যখন তারা বলেন যে, আমরা সুন্দর ব্যবস্থা করছি, সমাবেশকে সমর্থন করছি, সহযোগিতা করছি; তখন লোকে হাসে। মানুষজন তো প্রতিটা খবর রাখে।“

বিএনপি মহাসচিব জানান, গত ২২ অগাস্ট থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৯৬টি মামলা হয়েছে। ৪ হাজার ৪১২ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে, এর বাইরে ১০ হাজার ৬৬৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৪৫ জনকে।

সাতটি সমাবেশে জনস্রোত দেখে সরকার ‘ভীতসন্ত্রস্ত’ হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে গোটা দেশে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। যেসব বিভাগে সমাবেশ হয়ে গেছে, সেখানে হয়রানি করছে; মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।

“বাকি তিনটা সমাবেশে যাতে লোকগম না হয়, সেজন্য তারা মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করার কৌশল হিসেবে এখন মহানগরীতে আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। নেতারা কেউ বাসায় থাকতে পারছেন না।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, দুই সদস্য সচিব আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্য সচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ দফতর তাইফুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ।