“আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি একটি সমঝোতা, সমাধানের দিকে যেতে পারে”, বলেন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান
Published : 18 Oct 2023, 04:50 PM
পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘জনগণ ও দেশের কথা ভেবে’ সমঝোতায় আসার আহ্বান করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান।
প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সমঝোতারা আশা ছাড়ছেন না তিনি।
অবশ্য সমঝোতা হোক বা না হোক, জানুয়ারির মধ্যে ভোটের আয়োজন করতেই হবে জানিয়ে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতির কথাও বলেছেন তিনি।
বুধবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন এই নির্বাচন কমিশনার।
আনিছুর বলেন, “দলগুলোরও জনগণ ও দেশের কথা বিবেচনা করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা উচিত।”
তফসিল ঘোষণার আগের মাসেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউ কাউকে ছাড় না দেওয়ার ইঙ্গিত দিলেও আশা না হারানোর কথাও জানিয়েছেন তিনি। বলেন, “রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হবে না হবে, তা কেউ বলতে পারছি না। কাজেই আমরা চাই- আশা করি যে, একটা ভালো পরিবেশ হবে।
“আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি একটি সমঝোতা, সমাধানের দিকে যেতে পারে। যদি না যায় তখন পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে আমরা ব্যবস্থা নেব।”
অতীতে সংলাপে সুফল মেলেনি, রাজনৈতিক বিরোধের মীমাংসা হয়েছে সংঘাতে। এই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, “আমরা কেউ পেছনের দিকে যেতে চাই না। আমরা এগিয়ে যেতে চাই।
“এগিয়ে যাওয়ার জন্য যে পরিবেশ সৃষ্টি করা, তা সবারই দায়িত্ব। আমাদের যেমন দায়িত্ব আছে, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব আরও বেশি। কারণ, তারাই ভোটের মাঠে থাকবে। কাজেই তাদের জনগণ ও দেশের কথা চিন্তা করা উচিত।”
নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে, সেটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি ও সমমনারা নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জোরাল আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দুর্গা পূজা শেষে।
একই দাবিতে ২০১৪ সালেও আন্দোলনে গিয়েও ভোট ঠেকাতে না পারা বিরোধীরা বলছে, ‘এবার সরকার আর সফল হতে পারবে না।’
তবে সরকার বলছে, ভোট কীভাবে হবে, সেটি সংবিধানে বলা আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার থাকবে ভোটের সময়। কেউ চাইলে ভোটে না আসতে পারে। তবে বাধা দিতে পারবে না কেউ।
দুই পক্ষের এই অবস্থানের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ নানা পক্ষ সমঝোতার চেষ্টায় আছে। তারা সংলাপে বসে মিটমাট করার পরামর্শ দিচ্ছে।
সংলাপের সম্ভাবনা নিয়েও দুই পক্ষ আছে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে। বিএনপি দাবি করছে, আলোচনার আগেই তাদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা আসতে হবে, প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়তে হবে শেখ হাসিনাকে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, সংলাপ হতে পারে, তবে সে জন্য বিএনপিকে শর্ত ছাড়তে হবে।
তবে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে ভোটের আয়োজন করা। তারা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই তা করতে চায়। সে জন্য নভেম্বরে তফসিল দেওয়ার কথা বলেছে একাধিকবার।
নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, “যদি সমঝোতা হয় তাহলে পরিস্থিতি এক রকম হবে। আর সমঝোতা না হলে পরিস্থিতি অন্য রকম হবে। সেটি নির্ভর করবে তখনকার পরিস্থিতির উপর। তফসিলের যথেষ্ট সময় আছে। আমরা যথাসময়ে তফসিল দেব।”
পরিস্থিতি যাই হোক না কেন ভোটের আয়োজন করতেই হবে, সেটিও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করা ছাড়া আমাদের কোনো গত্যন্তর নেই। যখন নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি হবে তখনই আমরা সেটি সম্পর্কে বলতে পারব। এই মুহূর্তে কিছু বলার নেই।”
ভোটার উপস্থিতি, ভোটারদের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, “পরিস্থিতি যদি ভালো থাকে তাহলে এক রকমের, আর পরিস্থিতি ভালো না থাকে তখন নিরাপত্তারই একটা ব্যবস্থা করতে হবে। ভোটার, নির্বাচনী সামগ্রী, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাসহ সামগ্রিক বিষয়ে একটা ব্যবস্থার মধ্যে আসতে হবে।
“আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচনী সামগ্রী পাঠানো থেকে শুরু করে নির্বাচনের সবকিছু এগিয়ে রাখছি।”