গণতন্ত্র আছে বলেই উন্নয়ন হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে জানিয়ে কক্সবাজারের জনসভায় নৌকার জন্য ভোট চেয়েছেন শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2022, 11:37 AM
Updated : 7 Dec 2022, 11:37 AM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত এক দশক ধরে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে বলেই উন্নয়ন হয়েছে।

বুধবার বিকালে কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায়েএকথা বলেন তিনি।

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে তিনি আহ্বান জানান।

এক দিনের সফরে এদিন কক্সবাজারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইনানী সমুদ্র সৈকতে ২৮ দেশের নৌবাহিনীর অংশগ্রহণে নৌ মহড়া উদ্বোধন করেন। পরে যোগ দেন জনসভায়।

শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা ২০১৮ তে ভোট দিয়েছেন নৌকা মার্কায়। আমরা তাই এই কক্সবাজারের উন্নয়ন করেছি। পরপর তিনবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছি।

“২০০৯ সাল থেকে এই ২০২২ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি আছে বলেই এদেশে উন্নয়ন হচ্ছে, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।”

এক বছর পর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনেও নৌকায় ভোট দিতে কক্সবাজারবাসীর প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।

তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচন ২০২৩ এর পরই ২০২৪ এর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে। সেই নির্বাচনেও আমি আজকে আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।”

নৌকার আদলে গড়া মঞ্চে দাঁড়িয়ে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা সমবেতদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন- “আপনারা কি নৌকায় ভোট দেবেন?” জনসভায় উপস্থিত মানুষ হাত তুলে তার কথায় সায় দেয়।

তখন শেখ হাসিনা আবার বলেন, “আপনারা হাত তুলে আবার বলেন, দেবেন আপনারা?” উপস্থিত জনতা হাত তুলে তার কথায় সায় দিলে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”

কক্সবাজারের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এই পর্যটন নগরীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে বিমান চালুর কথা তিনি বলেন। কক্সবাজারকে রেলপথে সংযুক্ত করতে কাজ চলার কথাও বলেন তিনি, বলেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার কথা। 

মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য কক্সবাজারবাসীকে ধন্যবাদ জানান সরকার প্রধান। তিনি সেই সঙ্গে কক্সবাজারের উপর শরণার্থীর চাপ কমাতে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের কথাও বলেন।

তিনি বলেন, কক্সবাজারে আটটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দেওয়া হবে, যাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ এসে এই এলাকায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।

সমাবেশের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ১৯৬৩.৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ের ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং চারটি প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “কক্সবাজার জাতির পিতার অত্যন্ত প্রিয় জায়গা ছিল। যখনই কারাগার থেকে মুক্তি পেতেন, আমাদের নিয়ে কক্সবাজার আসতেন। তাই কক্সবাজারের মানুষ সব সময় আমাদের হৃদয়ে আছে।”

করোনাভাইরাস মহামারীর রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে তিনি এই সময়ে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান।

সরকার প্রধান বলেন, “অনেক উন্নত দেশ এখন নিজেদেরকে অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সেখানে এখানও আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী আছে।

“ব্যাংকে টাকা আছে। রিজার্ভ আছে ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে খালেদা জিয়ার আমলে ছিল মাত্র ২.৫ বিলিয়ন।”

বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “অগ্নিসন্ত্রাস, খুন, হত্যা, লুটপাট, মানি লন্ডারিং, দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে যাওয়া, চোরাকারবারি এইগুলোই তারা পারে।”

২০০৪ সালের একুশে অগাস্টের গ্রেনেড হামলাসহ নিজের জীবনের উপর বার বার আঘাত আসার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই বিএনপি, তারেক জিয়া, খালেদা জিয়ারা …. তাদের আন্দোলন হচ্ছে মানুষ পুড়িয়ে মারা। রেলে আগুন, বাসে আগুন, গাড়িতে আগুন, লঞ্চে আগুন, কোথায় না আগুন দিয়েছে? ৭৫ এর পরে ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল। দেশকে কী দিয়েছে? জিয়া সরকার, এরশাদ সরকার, খালেদা জিয়া সরকার কিছুই দেয়নি। বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ লুটে খেয়েছে।”

নিজের জীবনে আর কোনো ‘চাওয়া-পাওয়া নেই’ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “হারাবার বেদনা কী কঠিন, আপনজন যারা হারায়, তারাই জানে। আমি বাবা, মা ও ভাই সকলকে হারিয়েছি। নতুন করে হারানোর কিছু নেই।

“আপনারা আমার পরিবার। আপনারা আমাকে আগলে রেখেছেন। আমার একমাত্র চাওয়া আমি যতক্ষণ ক্ষমতায় থাকব, দেশের মানুষের আহার সংস্থান করা আমার কাজ। এদেশের একজন মানুষও অভুক্ত থাকবে না।”

জনসভার শেষে সবার কাছ থেকে নৌকায় ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আবার আসিব ফিরে, এই সৈকতের তীরে।”

এই জনসভায় জনসমাগম স্টেডিয়াম ছাড়িয়ে বিজয় সরণীর হলিডে মোড় থেকে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে আসার পর কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীকে নৌকা উপহার দেন। প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেওয়ার আগে পরিবেশন করা হয় কক্সবাজারের একটি জনপ্রিয় আঞ্চলিক গান।