Published : 31 Aug 2023, 05:34 PM
ঢাকায় কয়েক লাখ শিক্ষার্থী সমাগমের লক্ষ্য নিয়ে বিশাল সমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ করেছে ছাত্রলীগ।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। সামনে অতিথিদের জন্য সারি করে বসানো হয়েছে চেয়ার। এরপর বিস্তীর্ণ খোলা ময়দানে বাঁশের বেড়া দিয়ে স্থান ভাগ করে দেওয়া হয়েছে সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য।
শোকের অগাস্ট মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্মরণে শুক্রবার বিকাল ৩টায় শুরু হবে এই সমাবেশ, যাতে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
ছাত্রলীগের নেতারা জানান, মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান থাকবেন। মঞ্চের সামনে দেড় হাজার চেয়ার থাকবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের সাবেক নেতাসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য।
ব্যাপক শিক্ষার্থী সমাগম ঘটাতে মাইকিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার ও লিফলেট বিতরণ ছাড়াও ছাত্রলীগের ইউনিটগুলোকে ইতোমধ্যে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সমাবেশ উপলক্ষে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বাদে ২৯৮ সদস্যবিশিষ্ট ১৮টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে ১২৭টি সমন্বয় টিম গঠন করা হয়েছে।
সমাবেশের আগের দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে মঞ্চস্থল পরিদর্শন করেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
সেখানে সাদ্দাম সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন। আমাদের প্রস্তুতি এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এই ঐতিহাসিক ছাত্র সমাবেশের প্রস্তুতি গোটা বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইল ছুঁয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের ৫ কোটি শিক্ষার্থীকে ছুঁয়ে গেছে।
“আমাদের স্বপ্নের নিরাপত্তার জন্য, দেশের নিরাপত্তার জন্য, আমাদের উন্নত ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য এই ছাত্র সমাবেশে শিক্ষার্থীরা শামিল হবে। শুধু ছাত্রলীগের ৫ লাখ কর্মী অংশগ্রহণ ছাড়াও কয়েক লাখ সাধারণ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে।”
সমাবেশে অন্য কোনো সংগঠনকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে কি না- জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, “আমরা সকল ছাত্র সংগঠনকে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি এই অনুষ্ঠানে। যারা এদেশের যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গেয়েছে, এদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের পক্ষে যারা সাফাই গেয়েছে এবং যারা সামরিক স্বৈরশাসকের সেবাদাসের ভূমিকা পালন করেছে, তাদের ব্যতীত সকল সংগঠনকে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি।”
তিনি বলেন, “আগামীকালকের সমাবেশ রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি অবিশ্বাস্য পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এই ছাত্র সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা গোটা বাংলাদেশকে এই বার্তা দিতে চাই যে, আমরা যেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, জাতির পিতার আদর্শে বলিয়ান থাকব, একইসঙ্গে আমরা খুনি, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদীদের সাথে কম্প্রোমাইজ করার কোনো জায়গা ছাত্র সমাজে নেই।”
সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, “আগামী কালকের সমাবেশে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা উন্মুক্তভাবে শপথ নিতে চাই, দেশবিরোধী যে কোনো অপশক্তির অপতৎপরতাকে রুখে দিতে এদেশের তারুণ্য সদাপ্রস্তুত রয়েছে।”
নেতাকর্মীদের জন্য ছাত্রলীগের নির্দেশনা
সমাবেশে শৃঙ্খলা বজায়সহ বিভিন্ন দিকনির্দেশনা তুলে ধরেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
>> সর্বাবস্থায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। শৃঙ্খলার ব্যত্যয় ঘটে এমন যে কোনো কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হচ্ছে।
>> যে কোনো বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি/ইউনিটের প্রতি তাৎক্ষণিক, চূড়ান্ত ও স্থায়ী সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
>> সমাবেশে প্রবেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকদের নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
>> সমাবেশ স্থলে কোনোভাবেই ব্যানার নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না।
>> স্বেচ্ছাসেবকদের সরবরাহকৃত উপকরণ ব্যতীত পতাকা, ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে প্রবেশ করা যাবে না।
>> নির্ধারিত সময়ে গেট খুললে দ্রুততম সময়ে শৃঙ্খলার সঙ্গে প্রবেশ করতে হবে।
>> সমাবেশস্থলে একাধিকবার প্রবেশ ও বের হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
>> শারীরিক যে কোনো সমস্যার ক্ষেত্রে মেডিকেল ক্যাম্পে যোগাযোগ করতে হবে।
>> সমাবেশ স্থল ও এর আশেপাশে এলাকার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতে সতর্ক থাকতে হবে।
>> জনদুর্ভোগ পরিহার করতে হবে এবং অযথা যানজট সৃষ্টি না করার ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।
আরও পড়ুন-
১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ৫ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী সমাগমের ঘোষণা ছাত্রলীগের
সমাবেশস্থলে ওবায়দুল কাদের
ছাত্রলীগের সমাবেশের আগের দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেছেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি, বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার বিকালে মাঠ পরিদর্শনের সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “প্রতিবছরই ছাত্রলীগ ৩১ অগাস্ট এই প্রোগ্রামটি করে থাকে। এটা আরও ছোট পরিসরে হয়ে থাকে। এবার আমাদের দীর্ঘদিন ধরে কোনো বড় আকারে ছাত্রসমাবেশ করা হয়নি। তাছাড়া নেত্রীর সময়ের ব্যাপারও আছে।
“সারা বাংলাদেশে থেকে তারুণ্যের যে ঢল নামতে শুরু করেছে, তাতে এটা স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশে পরিণত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এটা আমাদের তারুণ্যের অভিযাত্রা হবে। দেশের সঙ্গে গণতন্ত্রের সঙ্গে যে শত্রুতা চলছে, দেশে বৈধ নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলছে, এর বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদের ধ্বনিও এখানে উচ্চারিত হবে। তারুণ্যই প্রতিবাদ করবে, লড়াই করবে।”
কয়েক মাস পর হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তরুণদের সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “দেশের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলছে, সরকারকে হটানোর যে চক্রান্ত, জঙ্গিবাদী-সাম্প্রদায়িক তৎপরতা চলছে, এর বিরুদ্ধে এই ছাত্রসমাবেশ হবে।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ শামীম, দক্ষিণের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি, সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডু এসময় উপস্থিত ছিলেন।