“আমার ছেলে নির্দোষ, তাকে মুক্তি দেওয়া হোক,” বলেন ইয়ামিনের মা হাসিনা বেগম।
Published : 08 Aug 2023, 08:59 PM
পুলিশের উপর হামলার মামলায় রিমান্ডে পাঠানো বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লার মুক্তি চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার মা-বাবা।
মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
ইয়ামিনের বাবা রফিকুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ২ অগাস্ট রাত ২টায় ডিবি পুলিশ গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে ইয়ামিনকে ‘অন্যায়ভাবে মিথ্যা, বানোয়াট ভিত্তিহীন মামলায়’ গ্রেপ্তার করে।
“ইয়ামিনকে গ্রেপ্তারের আগে তারা আমাকে মোহাম্মদপুর থেকে আটক করে ৮ ঘণ্টা গাড়িতে বসিয়ে রেখে বিন ইয়ামিনকে খুঁজতে থাকে।"
ওই রাতে ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসানকে ৬ ঘণ্টা আটকে রেখে ‘মানসিক নির্যাতন করা হয়’ বলেও অভিযোগ করেন রফিকুল।
“নাজমুল ও আমাকে একই গাড়িতে বসিয়ে ডিবি পুলিশ ইয়ামিনকে খুঁজতে থাকে। ইয়ামিনকে আটকের পর তারা ভোরের দিকে আমাকে ও নাজমুলকে ছেড়ে দেয়।”
রফিকুল ইসলাম বলেন, "বাবাকে ধরে তার সন্তানকে খুঁজতে থাকা, বাবার চোখের সামনে সন্তানকে গ্রেপ্তার করা, এ যেন পাকিস্তান আমলের বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা।
"পাকিস্তান আমলে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানকে ধরার জন্য যেমন বাবা-মাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আটক করে নিয়ে যেত, ঠিক বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথিত অপরাধে বাবাকে ধরে নিয়ে তার সন্তানকে খোঁজা হচ্ছে।"
তবে ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার রাজীব আল মাসুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “সেদিন এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।”
ইয়ামিনের বাবা রফিকুল অভিযোগ করেন, ‘বিরাজনীতিকরণে ভয়ের সংস্কৃতি’ তৈরি করা হচ্ছে।
“শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যাতে ত্বরান্বিত না হয়, সে কারণেই আমার সন্তানকে আটক করা হয়েছে। আমার সন্তান নাকি জঙ্গি। ধিক্কার জানাই পুলিশের এই ভাষ্যের। আমার ছেলে মেধাবী শিক্ষার্থী। কুড়িগ্রামের মত জেলা থেকে সে মেধার জোরে ঢাবিতে চান্স পেয়েছে।
“পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের মেধাবী ছাত্র সে। বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবারারকে যেমন হত্যার আগে শিবির-জঙ্গি তকমা দেওয়া হয়েছিল, ঠিক আমার ছেলেকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এমন নাটক সাজানো হয়েছে।”
গত ১ অগাস্ট গভীররাতে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে ইয়ামিনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
গত ২১ জুলাই গণঅধিকার পরিষদের অফিস ভাঙচুরের ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর পল্টন থানায় মামলা করেন ভবন মালিক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মিয়া মশিউজ্জামান। সেই মামলায় ২ অগাস্ট জামিন পান ইয়ামিন।
তবে বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনের সময় বিক্ষোভের ঘটনায় মতিঝিল থানার মামলায় বিন ইয়ামিনকে গ্রেপ্তার দেখানোসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন ডিবির এসআই খান মনিরুজ্জামান।
সেই আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার ইয়ামিনের ১ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেয় আদালত।
রফিকুল বলেন, “আমার সন্তানের অপরাধ যদি হয় রাজনীতি করা, তবে এমন অপরাধ আমি বাবা হিসেবে মেনে নিচ্ছি। দেশ ও দশের তরে, দেশে সুষ্ঠু রাজনীতি বিনির্মাণের জন্য আমি বাবা হিসেবে আমার ছেলেকে উৎসর্গ করলাম।"
সংবাদ সম্মেলনে কাঁদতে কাঁদতে ইয়ামিনের মা হাসিনা বেগম বলেন, “কী বলব? আমার ছেলে নির্দোষ, তাকে মুক্তি দেওয়া হোক।”