শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া নিয়ে মঙ্গলবার নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়েছিল জাতীয় পার্টির মহাসচিবের কথায়।
Published : 10 Jan 2024, 12:02 PM
একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত ১১ সংসদ সদস্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছেন।
বুধবার বেলা সোয়া ১২টায় সংসদ ভবনের নিচতলার শপথকক্ষে তাদের শপথ পড়ান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এই ১১ জন হলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের (রংপুর-৩), আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৫), এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার (পটুয়াখালী-১), মজিবুল হক চুন্নু (কিশোরগঞ্জ-৩), হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ (ঠাকুরগাঁও-৩), এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান (কুড়িগ্রাম-১), শরীফুল ইসলাম জিন্নাহ (বগুড়া-২), মো. আশরাফুজ্জামান (সাতক্ষীরা-২), গোলাম কিবরিয়া টিপু (বরিশাল-৩), এ কে এম সেলিম ওসমান (নারায়ণগঞ্জ-৫) ও মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী (ফেনী-৩)।
শপখ নেওয়ার পর সবাই শপথপত্রে নিজেদের আসনের নাম লিখে সই করেন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংসদ সচিব এ কে এম আবদুস সালাম। শপথ অনুষ্ঠান শেষে সংসদের ভিআইপি ক্যাফেটারিয়ায় নতুন এমপিদের জন্য ছিল চা-চক্রের আয়োজন।
এদিন বেলা ১০টায় শুরু হয় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। শুরুতেই একাদশ সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী দ্বাদশ সংসদের এমপি হিসেবে নিজের শপথ নেন। পরে তিনি সংখ্যগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ এবং শরিক দলের এমপিদের শপথ পড়ান। এরপর বেলা ১১টায় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের শপথ পড়ান তিনি।
দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে গত রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়, গোলযোগের কারণে ময়মনসিংহের একটি আসন স্থগিত রেখে ২৯৮টি আসনের ফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
পরে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর আবেদনে ঢাকা-৪ আসনের ফল হাই কোর্ট স্থগিত করলেও সেই আদেশ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আটকে যায়।
এবারের নির্বাচনে ২২২টি আসনে জয় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীরা। আর জোটগতভাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছেন মোট ২২৪ জন। এই নিরঙ্কুশ জয়ে টানা চতুর্থবারের মত সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ৬২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে, তাদের ৫৯ জনই আওয়ামী লীগের নেতা।
গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত ১১ আসনে জয় পেয়েছে। আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি এবং এক সময় বিএনপির জোটে থাকা কল্যাণ পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে।
সংরক্ষিত নারী আসন বাদে একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টির আসন ছিল ২৩টি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তাদের প্রার্থী ছিল ২৬৪ আসনে। এর মধ্যে ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগ তাদের ছাড় দিয়েছিল। অর্থাৎ, ওই ২৬ আসনে নৌকার কোনো প্রার্থী রাখা হয়নি।
কিন্তু বেশিরভাগ আসনে আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টক্কর দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া আসনের অর্ধেকেও জয় পায়নি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল। অধিকাংশ আসনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ভোটের পরদিন অভিযোগ করেন, “নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাসে আমরা ভোটে অংশ নিয়েছিলাম কিন্তু সরকার আমাদের যে কথা দিয়েছিল, সেই কথা রাখেনি।”
তিনি বলেন, “সরকারের নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন হয়েছে। সরকার যেখানে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চেয়েছে, সেখানে সুষ্ঠু করেছে। আর যেখানে তাদের লোকজনকে জেতাতে চেয়েছে, সেখানে তারা আমাদের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও জোর করে সিল মেরে হারিয়ে দিয়েছে। সার্বিকভাবে নির্বাচন ভালো হয়নি। আমাদের বিশ্বাস এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।”
মঙ্গলবার শপথের সময়সূচি ঘোষণা হওয়ার পর জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্ন বলেন, বুধবার তারা শপথ নিচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার বৈঠক ডাকা হয়েছে, সেদিন আলোচনা করে শপথের বিষয়টি ঠিক করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে জাতীয় পার্টি কী করতে যাচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। পরে রাতে পার্টির দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবারই শপথ নেবেন জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা।
এদিকে দলীয়ভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া জাতীয় পার্টির চেয়ে ছয়গুণ বেশি আসনে স্বতন্ত্ররা জয় পাওয়ায় দ্বাদশ সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে কারা বসবে, সেই আলোচনাও হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বতন্ত্ররা জোট করে বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচন করলে তাতে বাংলাদেশের আইনে কোনো বাধা নেই। আর সেরকম হলে গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি সেই তকমা হারাতেও পারে।
পুরনো খবর
সিদ্ধান্ত পাল্টে বুধবারই শপথ নিচ্ছেন জাতীয় পার্টির নির্বাচিতরা