আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলের টিকে থাকা নিয়ে সংশয়ে জি এম কাদের

গত ৭ জানুয়ারি দেশে ‘তিন ধরনের নির্বাচন’ হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2024, 04:55 PM
Updated : 5 March 2024, 04:55 PM

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতলেও রাজনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

মঙ্গলবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

জাতীয় পার্টির নেতা বলেন, “আওয়ামী লীগ ছাড়া জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে এমন অন্য সব রাজনৈতিক দল নিজস্ব নীতি আদর্শ নিয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে কি না, এ বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

“এখন স্বাভাবিক রাজনীতি একটি সংকটময় অনিশ্চয়তার ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে আমাদের আশঙ্কা।”

নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে, জেলে বন্দি করে হুলিয়া দিয়ে ঘর ছাড়া করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “তাদের রাস্তায় দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। ধান ক্ষেতে, বনে জঙ্গলে তাদের পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। তাদের পক্ষে এমন পরিবেশ ছিল না যেখানে স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারবে। …সরকার এ বিষয়ে সংযত আচরণ করবেন বলে আশা করি।”

দুর্নীতিতে বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দুর্নীতিতে দেশ সয়লাব হয়ে গেছে। এটা সকলে স্বীকার করবেন।

তিনি বলেন, “দুর্নীতি ছাড়া কোনো কাজ হয় না। দুর্নীতির কারণে ভোগান্তি হয় এবং প্রতিদিন তা বাড়তেই থাকে।

“সরকার সাধারণত দুর্নীতির কথা স্বীকার করে না। তবে একটা ব্যতিক্রম হয়েছে এবার। সরকারের একজন মন্ত্রী দুর্নীতির ব্যাপকতা স্বীকার করেছেন।”

টিআইবির নানা উপাত্ত তুলে ধরেন তিনি। 

‘তিন ধরনের’ নির্বাচন

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সংবিধান ও আইন অনুযায়ী নির্বাচন বৈধ হলেও তাতে জনমতের সঠিক প্রতিফলন হয়নি বলেও মনে করেন জি এম কাদের।

তিন ধরনের নির্বাচন হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “কোনো কোনো এলাকায় ইলেকশন সম্পূর্ণ সুষ্ঠু হয়েছে, সেখানে কোনো রকম ডিস্টার্বেন্স করা হয়নি।

“আরেকটা হচ্ছে ফ্রি স্টাইল। সেখানে মাসল-পাওয়ার অ্যান্ড মানি অবাধে ব্যবহার হয়েছে। সেভাবে ভোটকেন্দ্র দখল করছে। এখানে বেশিরভাগ সময় সরকারি দল, তাদের বিদ্রোহী প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী বা আমাদের প্রার্থী, অনেক জায়গায় আমাদের প্রার্থী ছিল না।

“আরেকটা হচ্ছে-নির্বাচন যেভাবেই হোক ফলাফল পূর্ব নির্ধারিত ছিল। এটা নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ব্যাপক অভিযোগ। ফলাফল শিট পাল্টিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

৪১.৮% ভোট পড়েছে উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, “খুব গ্রহণযোগ্য হয়েছে সপ্তম, অষ্টম নবম সংসদ নির্বাচনে; ৭৫ থেকে ৮২ শতাংশ ভোট পড়েছে। এবার ভোটের সংখ্যা কম ছিল।”

বিরোধীদলীয় নেতার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা কয়েক দফা হৈ চৈ করেন। একজন সদস্যকে বলতে শোনা যায়, “জামায়াত, বিএনপি, তারেক রহমান বক্তব্য দিচ্ছে আজকে।”

এক পর্যায়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “মাননীয় সদস্যবৃন্দ উনাকে (জিএম কাদের) বলতে দিন।”

জাতীয় পার্টির নেতা বলেন, “আমরা যখন বিরোধী দলে আছি আমাদের দায়িত্ব সরকারের নানা ব্যর্থতা তুলে ধরা। এ সংসদে ৩৫০ জনের মধ্যে ৩৪০ জনই সরকারি দলের। কিছু কিছু জিনিস যেটা ভুল ত্রুটি রয়েছে, তা তুলে ধরতে চাই। কিছু কথা হয়ত পছন্দ হবে না। তারপরও রেকর্ডের জন্য তুলে ধরব।”

রাষ্ট্রপতির ভাষণের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন বিরোধী দলীয় নেতা।

তিনি বলেন, “ভালো নির্বাচন হলে সঠিক নির্বাচন হলে যে নির্বাচনে জনগণের মতামতের প্রতিফলন হয়। সেটা সম্ভব হয় যখন নিরপেক্ষ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়। এর যে কোনো একটি ব্যাহত হলে জনগণের মতামতের সঠিক প্রতিফলন হয় না। সে নির্বাচনও মানুষের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা পায় না। অতীতে এর প্রমাণ পেয়েছি।

“এবার যেহেতু সকল দল আসতে পারেনি, সরকারের পক্ষ থেকে একটু মুভ নেওয়া হয়েছিল, বলা হয়েছিল বেশি ভোটার এলে অংশগ্রহণমূলক বলতে পারি।  তবেসব দল না এলে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত হয় না।”

বায়ু দূষণ, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যার তদন্তসহ নানা বিষয়েও কথা বলেন জি এম কাদের।