দশ বছর আগে তার বার্ষিক আয়ের প্রায় পুরোটাই ছিল ব্যবসা থেকে। এবার ব্যবসা থেকে কোনো আয় দেখানো হয়নি; সর্বোচ্চ আয় হয়েছে এফডিআরের সুদ থেকে।
Published : 07 Dec 2023, 06:49 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের বার্ষিক আয়, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দশ বছরের ব্যবধানে বৃদ্ধির সঙ্গে তার দেনার পরিমাণও বেড়েছে।
সেইসঙ্গে এই প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের আয়ও বাড়ার তথ্য মিলেছে নির্বাচনী হলফনামায়।
এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তার আসনে এবার বাহাউদ্দিন নাছিমকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা গেছে, নাছিমের বার্ষিক আয় ২ কোটি ৫৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৮১ টাকা।
২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বোচনে হলফনামায় তার আয় দেখানো হয়েছিল ১ কোটি ৮৯ লাখ ১৪ হাজার ৩৩৯ টাকা। অর্থাৎ দশ বছরে তার আয় বেড়েছে ৩৪ শতাংশ।
তবে ২০১৪ সালে তার বার্ষিক আয়ের প্রায় পুরোটাই ছিল ব্যবসা থেকে। কিন্তু ২০২৩ সালে ব্যবসা থেকে তার কোনো আয় দেখানো হয়নি হলফনামায়। বরং এবারের হিসাবে সর্বোচ্চ ৮৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা আয় দেখানো হয়েছে এফডিআর এর সুদ থেকে।
বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে বাহাউদ্দিন নাছিম আয় করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ৬০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। কোম্পানি থেকে পারিতোষিক পান ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এছাড়া ডিভিডেন্ড থেকে তার বছরে ৫০ লাখ টাকা, বাস ভাড়া বাবদ ৩৯ হাজার টাকা, ব্যাংক সুদ হিসেবে ৮ হাজার ৪৮৬ টাকা এবং কৃষি থেকে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা আয় হয়।
অপরদিকে নাছিমের ওপর নির্ভরশীলদের আয় দেখানো হয়েছে বছরে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৮৭ টাকা। দশ বছর আগে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ টাকা। অর্থাৎ আয় বেড়ে প্রায় তিনগুণ হয়েছে।
বেড়েছে নগদ টাকা ও এফডিআর
দশ বছরের ব্যবধানে এই রাজনীতিবিদের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২০ কোটি টাকার বেশি।
২০১৪ সালের হলফনামার ৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছিল নাছিমের। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
আর তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ দশ বছর আগের ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬ কোটি ৩ লাখ টাকা।
দশ বছর আগে বাহাউদ্দিন নাছিমের হাতে নগদ ৪৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ছিল। এবার তা বেড়ে হয়েছে ৭ কোটি ৬৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ আগে দেখানো হয়েছিল ১ কোটি ৫২ লাখ ৪৫ হাজার ২৩৫ টাকা। এবার তা বেড়ে ৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা হয়েছে।
দশ বছর আগে আওয়ামী লীগের এ প্রার্থীর হলফনামায় ১ কোটি ২২ লাখ ৫৩ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছিল, যার মধ্যে ছিল ২.৪৭ একর কৃষি জমি, ১৪৯. ১৭ শতাংশ অকৃষি জমি, এবং উত্তরায় দলান।
বর্তমানে এ প্রার্থীর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়ে ৯ কোটি ৭২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার উত্তরায় ৫ কাঠা জমিতে সাততলা ভবনের সঙ্গে উত্তরায় আরো দুটি বাড়ি এবং রাজধানীর কাফরুলে একটি ফ্ল্যাট যোগ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের এই প্রার্থীর স্ত্রীর নামে স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ধানমন্ডিতে একটি ফ্ল্যাট, ২৫ একরের বন জমি এবং ১ দশমিক ৮৮ একর নাল জমি। সবমিলে নাছিমের স্ত্রীর স্থাবর-সম্পদের টাকার পরিমাণ ২৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।
আয়, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাড়ার পাশাপাশি ১০ বছরের ব্যবধানে নাছিমের দায় বেড়েছে ২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
সাবেক এই এপি এবার মোট দায় দেখিয়েছেন মোট ৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে মো. সাইফুল ইসলামের কাছ থেকে ব্যবসায়িক ঋণ হিসেবে নিয়েছেন ২ কোটি টাকা এবং বিএনবি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের বকেয়া মূলধনের দায় ২ কোটি টাকা।
২০১৪ সালে নাছিমের দায় ছিল ১ কোটি ২১ লাখ টাকার মত।
অতীতের বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে সাতটি মামলা থাকলেও এখন সব মামলা থেকে তিনি মুক্ত বলে হলফনামায় জানিয়েছেন।
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমার সময় শেষ হয়েছে গত ৩০ নভেম্বর। ঢাকা-৮ আসনে নৌকার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে বাছাইয়ে।
আরও পড়ুন-