“দেশে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করবেন না। বেগম খালেদা জিয়া পালিয়ে যাওয়ার মানুষ না,” বলেন তিনি।
Published : 22 Oct 2023, 10:01 AM
খালেদা জিয়ার কিছু হলে ‘জনগণের হৃদয়ের আগুনে সরকার পুড়ে যাবে’ বলে হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
সরকার হটানোর এক দফা দাবিতে রোববার ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ অভিমুখে রোডমার্চ শেষে লতিফাবাদ চক্ষু হাসপাতাল মাঠে এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাসপাতালে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে সরকারের অনুমতি চেয়েছিল তার পরিবার। আইন মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে, যেসব শর্তে তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্ত আছেন, তাতে আগের আদেশ চলমান থাকা অবস্থায় তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া সম্ভব না।
সরকারের ওই সিদ্ধান্ত আসার পর সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের সমাবেশে নজরুল ইসলাম খান বলেন, “শর্ত যদি শিথিল করা হয়, তাহলেই দেশনেত্রী বিদেশে যেতে পারেন। কিন্তু তারা (সরকার) করবে না, করতে চায় না। তারা ভয় পায়, তারা ভয় পায় বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা নিয়ে।
“কিন্তু আমরা বলি, ভয়ের তো কিছু নাই। বেগম খালেদা জিয়াকে আমরা হৃদয়ে ধারণ করি। বাংলাদেশে বেগম খালেদা জিয়ার লক্ষ-কোটি সন্তান আছে… তিনি শুধু আমাদের নেত্রী নন, তিনি আমাদের মা। এই যে এই লক্ষ-কোটি সন্তানের মা, খোদা না করুক কোনো কারণে তার যদি কোনো ক্ষতি হয়, এসব সন্তানের হৃদয়ে যে আগুন জ্বলবে, সেই আগুনে এই সরকার পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে।”
সরকারের উদ্দেশে নজরুল বলেন, “অনুরোধ করব, দেশে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করবেন না। বেগম খালেদা জিয়া পালিয়ে যাওয়ার মানুষ না। যে দেশে তার চিকিৎসা সম্ভব, সেখানে চিকিৎসা নিয়ে আবার তিনি ফিরে আসবেন। রেখে দিয়েন আপনারা, সরকারে যদি থাকেন… তাকে জেলখানায় রাখেন, কোনো অসুবিধা নাই।”
কোনো আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর নজির নাই, সরকারের এই বক্তব্য খণ্ডন করে নজরুল বলেন, “আমি দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরোত্তম জাসদের সাধারণ সম্পাদক আসম আবদুর রবকে দণ্ডপ্রাপ্ত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।এই কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের এমপি হাজী সেলিম, সে দণ্ডপ্রাপ্ত হলেন, বিদেশে গেলেন আবার ফিরে এলেন।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, কোভিড মহামারীর আগে যখন তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েছিলেন, তখনও সরকার বলেছিল তাকে মুক্তি দেয়ার ক্ষমতা সরকারের নাই। সেজন্য আদালতে যেতে হবে। কিন্তু পরে সরকারই নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাকে মুক্তি দিয়েছে।
“তার মানে, আইন মন্ত্রী বেআইনি কথা বলেছেন, মিছা কথা বলেছেন। উনি বেআইনি মন্ত্রী হয়ে গেছেন। এবারও একই রকম। এবারও বলছেন, সরকারের কিছু করার নাই। আদালতে যেতে হবে। অথচ আইন বলে যে, সরকার যে কোনো সময়ে কোনো শর্ত দিয়ে কিংবা শর্ত ছাড়া যে কোনো দণ্ডিত ব্যক্তিকে দণ্ড স্থগিত করে বাইরে থাকার সুযোগ দিতে পারে।
“এই যে ক্ষমতা, সরকারের সেই ক্ষমতা বলেই বেগম জিয়াকে দুইটা শর্ত দিয়ে বাসায় থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বিদেশে যাওয়ার ওপর শর্ত তুলে নিলেই উনি বিদেশে যেতে পারেন। আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।”
দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীখালেদাজিয়াকে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়া এবং দেশের বাইরে না যাওয়ার শর্তে ২০২০ সালের মার্চে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়।
৭৮ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি, লিভার জটিলতায় ভুগছেন। গত ৯ অগাস্ট থেকে তিনি বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের বরাতে বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, তাদের নেত্রীর অবস্থা ‘সঙ্কটজনক’। লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে পাঠানো ‘জরুরি’।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান সমাবেশে বলেন, “বাকশালের মোড়কে এই সরকার, যে সরকার মানুষের অধিকারে বিশ্বাস করেনি, যে সরকার মানবাধিকারে বিশ্বাস করেনি, যে সরকার সংবিধানে কোনোদিন বিশ্বাস করেনি, যে সরকার ভোটের অধিকার কোনোদিন বিশ্বাস করে না। সেই সরকার বাংলাদেশ থেকে বিদায় না নেওয়া পর্যন্ত আমদের এই শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক কর্মসূচি চলতেই থাকবে। আমরা ঘরে ফিরে যাব না।”
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা পাওয়ার যে সাংবিধানিক অধিকার, তা থেকে সরকার তাকে ‘বঞ্চিত করছে’ বলে অভিযোগ করেনেএই বিএনপি নেতা।
সরকার পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও খালেদা জিয়ার মুক্তির ‘এক দফা’র দাবিতে সকাল সাড়ে ১১টায় ময়মনসিংহের ত্রিশালের বগার বাজার থেকে রোড মার্চ শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭টায় কিশোরগঞ্জে পৌঁছায়।
গত ২১ সেপ্টেম্বর সিলেট বিভাগ, ২৩ মার্চ বরিশাল বিভাগ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগে বিএনপির রোড মার্চ হয়। ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জে হল চতুর্থ রোড মার্চ।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা ওয়ারেছ আলী মামুন, আবদুল বারী ড্যানি, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, ছাত্র দলের রাশেদ ইকবাল খান, সাইফ মাহমুদ জুয়েল বক্তব্য রাখেন।
(প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ১ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)