বিএনপি বলেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের কথা বলাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সামিল।
Published : 11 Nov 2023, 05:47 PM
‘সংবিধান অনুযায়ী’ বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চীনের অবস্থানে ‘অসন্তোষ’ জানিয়ে বিএনপি দাবি করেছে, এটি ‘জনগণের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নয়।’
নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার সংশোধনীটিকে ‘বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে দলটি বলেছে, বিএনপি সেই সংবিধান মেনে চলে যেটি ‘জনগণ দ্বারা অনুমোদিত ও গৃহীত’।
ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের বক্তব্য আসার দুই দিন পর শনিবার বিএনপির অবস্থান তুলে বিবৃতি আসে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে।
গত ৯ নভেম্বর ঢাকায় এক সেমিনারে চীনা রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য বিএনপি ও ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা’ জনগণের দৃষ্টিগোচর হয়েছে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, “চীন বাংলাদেশের ‘সংবিধান অনুযায়ী’ আসন্ন নির্বাচন দেখতে চায় বলে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন যে মন্তব্য করেছেন, তা জনগণের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নয়।”
‘জনগণের একটি সুবিশাল অংশ গত ১০ বছরে ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ পাননি’ অভিযোগ করে বিএনপি বলেছে, “রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন সমগ্র জাতি গণতন্ত্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের ভোটের অধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুনরুদ্ধারের প্রয়াসে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানাচ্ছে।”
উচ্চ আদালত নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণার পর ২০১১ সালে নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনে সংসদ। বিএনপি সেই সংশোধনী মেনে না নিয়ে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি ভোট প্রতিহত করতে আন্দোলনে নামে।
সহিংসতার মধ্য দিয়ে ভোট হয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টেকে পাঁচ বছর। ২০১৮ সালের পরের নির্বাচনে আবার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিলেও শেষ পর্যন্ত ভোটে আসে বিরোধীরা।
সেই নির্বাচনে আগের রাতেই ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে ফিরে এবার নির্বাচনের আগে আগে টানা অবরোধের কর্মসূচিতে ফিরেছে দলটি।
এবার যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যে অবস্থান নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি ও তার মিত্ররা। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে যারা বাধা দেবে, তারা এবং তাদের স্বজনদের ভিসা দেওয়া হবে না। পাশাপাশি তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশাও করছে।
তবে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। রাশিয়া আগেই বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে’।
নানা ঘটনাপ্রবাহের শুক্রবার নয়াদিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে পর ভারত বলেছে, ‘নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের জনগণই তাদের ভবিষ্যতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’
তার আগের দিন ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত তার দেশের অবস্থান তুলে ধরেন, যে দেশটি আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বিরোধিতা করে আসছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইয়াও ওয়েন সেমিনারে বলেছেন, বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ীই নির্বাচন দেখতে চায় তার দেশ।
তিনি এও বলেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চীন বাইরের কারও হস্তক্ষেপ চায় না। চীন নিজেও অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না।
এর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপ না করবার জন্য চীনের রাষ্ট্রদূত যে বক্তব্য দিয়েছিলেন সেটির সঙ্গে তার নিজের বক্তব্যই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ, তিনিই আবার বলছেন বর্তমান সংবিধানের আওতায় নির্বাচন সম্পন্ন করা উচিত।”
বিএনপিকে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনকারী দল’ উল্লেখ করে এতে বলা হয়, “বিএনপি সবসময় সেই সংবিধানের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ যা জনগণ দ্বারা অনুমোদিত ও গৃহীত।“
নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের বিধান নিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “দুঃখজনকভাবে ‘ভোট ডাকাতির অপসংস্কৃতির ধারক’ হিসেবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার অপপ্রয়াসে, বিতর্কিত সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করেছে ‘অবৈধ’ আওয়ামী লীগ সরকার।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে শেখ হাসিনা সরকার ‘হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ বাতিল করেছে বলেও মন্তব্য করা হয় বিএনপির বিবৃতিতে।
২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের কথা তুলে ধরে বিএনপি বলেছে, “প্রমাণ হয়েছে যে, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সম্ভব নয়।”
চীনকে দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে বিএনপি। বিবৃতিতে বলা হয়, “বিএনপি বিশ্বাস করে, দুই দেশের জনগণের মাঝে সম্পর্ক স্থাপনেই কূটনৈতিক সাফল্য নিহিত।
“বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি চীনকে আহ্বান করছে, বাংলাদেশের জনগণের অভিপ্রায় ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদির প্রতি আলোকপাত করবার জন্য।”