‘বিদেশিরা আমাদের কাছে জানতে চান যে দেশে কী হচ্ছে? তোমরা কী করছ?”
Published : 18 Jun 2023, 06:08 PM
বিএনপি নালিশ জানাতে বিদেশিদের দুয়ারে ধরনা দেয়- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্য উড়িয়ে দিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি মহাসচিব দাবি করেছেন, দেশের পরিস্থিতি জানতে বিদেশিরাই তাদের ডাকেন।
বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনে ঘনিয়ে আসার মধ্যে বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতাও বাড়তে দেখা যাচ্ছে। দুই প্রধান দলের নেতারাই দেখা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে। বিএনপি নেতারা ইইউ ও জাপানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন।
এর মধ্যেই রোববার সকালে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপি দাওয়াত ছাড়াই বিদেশিদের কাছে যায়, নালিশ করতে।”
এরপর গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদেরকে বলে যে আমরা নাকি বিদেশিদের কাছে যাই। আমরা বিদেশিদের কাছে যাই না।
“মাঝে মধ্যে বিদেশিরা আমাদের ডাকেন। জানতে চান যে, দেশে কী হচ্ছে? তোমরা কী করছ? এটা স্বাভাবিক যে কোনো দেশ তারা এগুলো জানতে চাইবে আর যারা গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে তারা জানতে চাইবে।”
দুপুরে ওই কার্যালয়ে ‘চির ভাস্বর শহীদ জিয়া, জ্যোতির্ময় খালেদা জিয়া, দীপ্তিমান তারেক রহমান’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন মির্জা ফখরুল। এই গ্রন্থের লেখক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম মতিনুর রহমান এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল হাসনাম মো. শামীম।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা নীতির প্রসঙ্গ টেনে সরকারের সমলোচনা করে জনগণের কাছে সরকারে জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের ওবায়দুল কাদের সাহেব বলছেন যে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি করেছে, করুক, আমাদের কিছু যায় আসে না। ভিসা নীতি আমরাও করতে পারি।
“উত্তর কী দেব বলেন? এখন আপনারাও ভিসা নীতি করেন না দেখি। প্রশ্নটা সেটা না। এটা ভিসা নীতিরও প্রশ্ন না। প্রশ্ন হচ্ছে যে, আপনার বিবেকের প্রশ্ন, জাতির বিবেকের প্রশ্ন… ‘আই একাউন্টেবল টু ইউএসএ না’, ‘আই একাউন্টেবল টু মাই পিপল’। আমার জনগণের কাছে একাউন্টেবল কি না বলেন.. এটাই যথেষ্ট।”
গণতন্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ঘোষিত নীতি হচ্ছে যে, পৃথিবীতে তিনি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে চান। সুতরাং তারা তাদের কাজ করছে। যেখানে গণতন্ত্র নাই, সেকথা বলে দেন, তাদেরকে গণতন্ত্রের সম্মেলনে ডাকেন না, তাদের স্যাংশন-ট্যাংশন কীসব দেন।”
বিএনপি মহাসচিবের ভাষ্যে, “জনগণ কী বলছে? আমি ভোট দিতে পারছি না। আমার উপর অত্যাচার হচ্ছে-নির্যাতন হচ্ছে, অন্যায়ভাবে আমার কাছ থেকে ট্যাক্স আরোপ করে টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে, কোর্টে গেলে আমি ন্যায়বিচার পাই না… এ বিষয়গুলো আমাদের আজকে বড় সমস্যা করছে।”
‘আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কোনো দল নয়’ দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “এরা কী করে গণতন্ত্র দেবে? মানুষ বিশ্বাসই করে না যে এই দলটি নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারে।”
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করে আসা ফখরুল বলেন, “কোনো দিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে ভালো নির্বাচন করেছে? কোনো দিন না। দেখুন প্রত্যেকটা নির্বাচন… ইভেন কি ’৭৩ সালে তারা একই ঘটনা ঘটিয়েছে। ”
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা মনে করি যে, এখানে জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, এখানে ভোটের অধিকার দেওয়া হচ্ছে না, মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
“আজকে দেখেন পত্রিকায় আছে, একজনকে নিয়ে গেছে, নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে ডিবি। এখন হাসপাতালে দিয়ে এসেছে।”
চট্টগ্রামে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ থেকে ফেরার পথে ছাত্রলীগ-যুবলীগ এবং পুলিশের হাতে ছাত্রদলের এক নারীকর্মী হেনস্তার অভিযোগও করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “‘চট্টগ্রামে তারুণ্যের সমাবেশে এসেছিলো ছাত্রদলের একটা মেয়ে। সমাবেশে শেষে ওখানে থেকে সে ফিরে যাচ্ছিল মিরসরাইতে, পথে তাকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে একটা বাসায় নিয়ে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে অত্যাচার চালায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ছেলেরা। এরপর তার মা খোঁজ পাওয়ার পর যখন তাকে উদ্ধার তাকে থানায় নিয়ে গেছে। তখন থানাওয়ালা করেছে কী? তারা একটা পুরনো মামলায় তাকে আসামি করে জেল হাজতে আটকিয়ে রেখেছে, পরেরদিন কোর্টে দিয়েছে। আর আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। এটাই হচ্ছে বিচার ব্যবস্থা! এই রাষ্ট্রে কী করে গণতন্ত্রের কথা বলবেন? কী করে এখানে নিজের অধিকারের কথা বলবেন?”
জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক খুনের প্রসঙ্গ ধরে বিএনপি নেতা বলেন, “আজকে বড় বড় ছবি বেরিয়েছে পত্রিকায়… যে চেয়ারম্যান বাবু (মাহমুদুল আলম বাবু ) তার যে সিহাংসন … এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতা।
“যারা এই সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে, তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। এই বিষয়গুলো আমরা বলছি, আমাদের মিডিয়া-সাংবাদিক ভাইয়েরা বলছেন, সবাই বলছে, কিন্তু তাদের (সরকারের) কানে যাচ্ছে না।”
“আজকের এই সংকট শুধু বিএনপির না, এই সংকট শুধু তারেক রহমান বা বেগম খালেদা জিয়ার না। এই সংকট গোটা জাতির… ফয়সালা রাজপথেই হবে,” বলেন তিনি।
বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম। অধ্যাপক আবদুল হাসনাত শামীমের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, গ্রন্থের লেখক অধ্যাপক মতিনুর রহমানও বক্তব্য রাখেন।