তাদের মধ্যে ১৪ জনই প্রার্থী হয়েছেন। একজনের মেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
Published : 01 Dec 2023, 05:49 PM
দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটে আসায় এখন পর্যন্ত ১৫ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
তাদের মধ্যে আটজন কেন্দ্রীয় নেতা, বাকি সাতজন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নেতৃত্বে ছিলেন।
দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিভিন্ন সময়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এসব বহিষ্কারের কথা জানিয়েছেন।
সেসব বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। সে কারণে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ে থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি ভোট বর্জন করে আন্দোলনে আছে। তবে সরকার তাদের দাবি পাত্তা দেয়নি, ফলে ২০১৪ সালের মতোই বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের ট্রেন এগিয়ে চলছে।
এর মধ্যে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের দিন বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের পর দিন থেকে চলছে টানা হরতাল ও অবরোধ, কেবল প্রতি কর্মদিবসে একটি দিন বিরতি রাখছে বিএনপি। অক্টোবরের সেই দিন থেকে সমান্তরালে চলছে গ্রেপ্তার অভিযানও। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত আটক হয়েছেন কয়েক হাজার নেতাকর্মী।
নির্বাচন নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরে মতানৈক্যের মধ্যেই গত ১৫ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। সেই অনুযায়ী বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন থাকলেও বিএনপি তাতে সাড়া দেয়নি।
তবে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে শামিল হয়েছেন বিএনপির কমিটিতে থাকা অন্তত ১৪ জন নেতা। আছেন বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্যও।
বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় আট কেন্দ্রীয় নেতা হলেন: ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান, তাঁতী বিষয়ক সহসম্পাদক রাবেয়া সিরাজ, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, শাহ শহীদ সারোয়ার, মতিউর রহমান মন্টু, খন্দকার আহসান হাবিব ও এ কে এম ফখরুল ইসলাম।
তাদের মধ্যে শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে বৃহস্পতিবার ঝালকাঠি-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নিবন্ধিত দল বিএনএমে যোগ দিয়ে শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ফরিদপুর-৪ আসনে এবং মতিউর রহমান মন্টু রাজশাহী-৩ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
‘স্বতন্ত্র গণতন্ত্র মঞ্চ’ গঠন করে টাঙ্গাইল-৫ আসনে খন্দকার আহসান হাবিব এবং ঝালকাঠি-২ আসনে এ কে এম ফখরুল ইসলাম প্রার্থী হয়েছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ১ আসনে এবং শাহ শহীদ সারোয়ার ময়মনসিংহ-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
রাবেয়া সিরাজ বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান সিরাজের স্ত্রী। তিনি নন, টাঙ্গাইল-৪ আসনে প্রার্থী হয়েছেন তার মেয়ে শুল্কা সিরাজ। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মেয়ের পক্ষে কাজ করছেন রাবেয়া।
জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বহিষ্কৃত নেতারা হলেন- শেরপুর জেলার সহদপ্তর সম্পাদক জায়েদুর রশিদ শ্যামল, সদস্য আবদুল্লাহ, পঞ্চগড় জেলার সদস্য আব্দুল আজিজ, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সদস্য মাহবুবুল হাসান, ইসলামপুর বিএনপির সহসভাপতি হোসেন রেজা বাবু, ঢাকার ধামরাই পৌর বিএনপির সভাপতি দেওয়ান নাজিম উদ্দিন মঞ্জু ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আবদুল মতিন।
তাদের মধ্যে বিএনএম থেকে শেরপুর-১ আসনে আবদুল্লাহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে আবদুল মতিন, তৃণমূল বিএনপি থেকে শেরপুর-২ আসনে জায়েদুল রশিদ শ্যামল, পঞ্চগড়-২ আসনে আব্দুল আজিজ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জামালপুর-১ আসনে মাহবুবুল হাসান এবং ঢাকা-২০ আসনে দেওয়ান নাজিম উদ্দিন মঞ্জু স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
বিএনপির আরও বেশ কয়েজন সাবেক সংসদ সদস্য ভোটে প্রার্থী হয়েছেন।
তৃণমূল বিএনপিতে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে আছেন মৌলভীবাজার-২ আসনের এম এম শাহীন, লক্ষ্মীপুর-১ আসনের এম এ আউয়াল, সাতক্ষীরা-৪ আসনের এইচ এম গোলাম রেজা, ঝিনাইদহ-২ আসনে নুরুদ্দিন আহমেদ, মেহেরপুর-২ আসনে আবদুল গণি।
এছাড়া জামালপুরের ইসলামপুর বিএনপির সহসভাপতি হোসেন রেজা বাবু বাবু তৃণমূল বিএনপি থেকে জামালপুর-২ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
বিএনএমে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে শাহ আবু জাফর ছাড়াও আছেন বরগুনা-২ আসনের আবদুর রহমান, সাতক্ষীরা–৪ এইচ এম গোলাম রেজা, নীলফামারী–১ জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, জামালপুর–৪ মামুনুর রশিদ এবং সুনামগঞ্জ-৪ দেওয়ান শামসুল আবেদিন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে আছেন বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনে জিয়াউল হক মোল্লা, কুমিল্লা-৫ আসনে শওকত মাহমুদ, কিশোরগঞ্জ-২ আসনের আখতারুজ্জামান, ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে দেলোয়ার হোসেন খান দুলু।
এদের সঙ্গে বিএনপির সরাসরি সম্পর্ক অবশ্য এখন আর নেই। নানা সময় নানা কারণে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন তারা।