Published : 18 Dec 2023, 04:51 PM
নির্বাচনে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে এবারের আসন সমঝোতাকে ‘নির্বাচনী কৌশল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, আগামী ২৭ ডিসেম্বর দলের সভাপতি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করবেন।
সোমবার প্রতীক বরাদ্দের দিনে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, "বিএনপি নির্বাচনে আসেনি। সেহেতু এখানে জোট করার প্রয়োজনীয়তা নেই। জাতীয় পার্টির সাথে আমাদের সমন্বয় হয়েছে। এটা আমাদের নির্বাচনী কৌশল। আমরা কৌশলটা এভাবেই ঠিক করেছি। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা রাজনৈতিকভাবে বেশি আলোচনা করেছি। সেজন্য আমরা আসন সমঝোতা করেছি।
"আজ দলীয় প্রার্থীসহ সব প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে। তারপর শুরু হচ্ছে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে চলার জন্য, আমাদের দলীয় কর্মীদের আহবান জানাচ্ছি।"
জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কাদের বলেন, “আমরা জাতীয় পার্টির জন্য ২৬ আসন থেকে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছি। শরিক দলের প্রার্থীরা ছয় আসনে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করবেন। সব মিলিয়ে ২৬৩ জন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ১৪ দলসহ নৌকার প্রতীকে থাকছে ২৭০ জন।"
মিত্র দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা যে ‘নতুন নয়’, সে কথা তুলে ধরে কাদের বলেন, "আওয়ামী লীগ থেকে তারা সাপোর্ট চেয়েছে। আরো বড় সংখ্যায় আসন চেয়েছিল। আমরা ২৬টি আসনে সমঝোতা করতে পেরেছি। সেজন্য আমরা নৌকা প্রত্যাহার করেছি। বাকি আসনগুলোতে তারা লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিযোগিতা করবে। সমঝোতা নতুন কিছু নয়। ২০১৪, ২০১৮ এর নির্বাচনেও এমন সমঝোতা হয়েছিল। তবে এবার আমরা খুব কমই সহযোগিতা করতে পেরেছি।"
যেসব আসন থেকে নৌকা প্রত্যাহার করা হয়েছে, সেই প্রার্থীদের জন্য দলের কোনো বার্তা আছে কী না জানতে চাইলে কাদের বলেন, "তাদেরকে আমরা কী বার্তা দেব এটা আমাদের ব্যাপার।"
এবার নিবন্ধিত ৪৪ দলের মধ্যে ভোটে আছে ২৮টি দল। অন্যদিকে বিএনপিসহ ১৫টি দল ভোট বর্জন করেছে। ভোটের লড়াইয়ে এবারে প্রার্থী ১ হাজার ৮৯৬ জন। তাদের সঙ্গে অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্ররা মিলে আছেন মোট ৩৪৭ জন।
এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে কাদের বলেন, “এই নির্বাচনে এত প্রার্থী এত দল, তারপরও এটাকে তারা (বিএনপি) একতরফা নির্বাচন বলছে। যা নির্লজ্জ মিথ্যাচার।"
দেশের মানুষ ভোট দিতে ‘উম্মুখ হয়ে আছে’ দাবি করে কাদের একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আশা করছেন।
তিনি বলেন, এবারও সিলেটের হযরত শাহজালাল ও হযরত শাহ পরানের মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচার শুরু করবেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারও তার প্রথম নির্বাচনি জনসভাটি হবে সিলেটে।
“আগামী ২০ ডিসেম্বরের সিলেটে এই সমাবেশ হবে, ২৭ ডিসেম্বর দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করবেন।“
সংসদ ভেঙে নির্বাচন দিতে দেশের ৪০ নাগরিকের দেওয়া বিবৃতির সমলোচনা করে কাদের বলেন, “আসলে এ বুদ্ধিজীবীরা বিএনপির রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। আমি তাদের বলব, তাদের এই বিবৃতি দেওয়া আগে উচিত ছিল, বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের আহ্বান জানানো।
"তাদের বিবৃতি যখন দেওয়া উচিত ছিল তখন তারা দেয়নি। তাদের উচিত ছিল বিএনপি নির্বাচন অংশগ্রহণ করছে না বলে তিরস্কার করা। আমি ৪০ জন নাগরিককে বলব, আপনারা কেন জ্বালাও পোড়াও এর বিরুদ্ধে বিবৃতিতে অপারগ। দেশে যে নাশকতা হচ্ছে, গাজীপুরের ট্রেন লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে... এসব ব্যাপারে চল্লিশ নাগরিক নীরব কেন?"
বিবৃতিদাতারা ‘হরতাল-অবরোধ’ সমর্থন করেন কি-না, সেই প্রশ্ন রেখে কাদের বলেন, “যেসব বুদ্ধিজীবী আজকে জ্বালা-পোড়াও, হরতাল-অবরোধ সাপোর্ট করছেন, তারা আসলে বিএনপির দালাল। এতগুলা দল অংশ নিচ্ছে তারপরও বলছেন একতরফা নির্বাচন। তারা কায়েম করতে চায় গোষ্ঠী স্বার্থ, বাংলাদেশের জন্মের চেতনাবিরোধী সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।"
‘নির্বাচনে আনতে বিএনপি নেতাদের মুক্তির প্রস্তাব বিষয়ে’ কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা তার ‘ব্যক্তিগত’ বলে মন্তব্য করেছেন কাদের।
এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, "আওয়ামী লীগ কোন দেউলিয়া দল নয়। আওয়ামী লীগ দলীয় নিয়ম নীতি ভঙ্গ করে এ ধরনের উদ্ভট প্রস্তাব বিএনপিকে দেবে- এটা সঠিক নয়। এ ধরনের কোনো প্রস্তাব আমাদের সরকারও দেয়নি, আমাদের দলও দেয়নি।“
কৃষিমন্ত্রীর ব্যাপারে দল কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা– এ প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, "দলই সিদ্ধান্ত নেবে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা। আর কীভাবে ব্যবস্থা নেবে সেটাও দলের ব্যাপার।"
বিএনপি ২০ হাজার নেতাকর্মীর কারাবন্দি থাকা সংখ্যাও ‘সত্য নয়’ বলে দাবি করে কাদের।
তিনি বলেন, “হিসাবটা আমি মির্জা ফখরুল ইসলামের কাছে অনেকবার চেয়েছি। একটা উদ্ভট সংখ্যা বলে দিল, সেটা সবাই বিশ্বাস করবে এমন নয়। এত লোক গ্রেপ্তার হয়নি। আর যারা পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করেছে, হাসপাতালে হামলা করেছে তাদেরকে তো আইনের আওতায় আসতেই হবে।“