Published : 01 May 2025, 04:20 PM
বৈষম্য দূর করার কথা বলে গত বছর যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, শ্রমিকদের ভাগ্যে তার প্রতিফলন দেখছেন না বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
তার ভাষ্যে, “গত জুলাই মাসে দেশে একটা গণঅভ্যুত্থান হলো, নাম দেওয়া হলো ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান। বলা হলো, বৈষম্য দূরীকরণের জন্য এই গণঅভ্যুত্থান। আপনারা যদি দাবি করেন বৈষম্যবিরোধী, তাহলে কেন জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, শ্রমিকের বেতন বাড়ে না?
“বেতন বাড়ে ৫ টাকা, জিনিসের দাম বাড়ে ১০ টাকা। সুতরাং শ্রমিকের বেতন বাড়াবেন না, এই বৈষম্য আর চলতে দেওয়া যেতে পারে না। এই দেশের শ্রমজীবী মানুষের জন্য বৈষম্যহীন দেশ গড়ার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি; ‘কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না’- এই স্লোগান দিয়ে আসছি।”
বৃহস্পতিবার পল্টনের মুক্তি ভবনের সামনে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র আয়োজিত মে দিবসের সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছিলেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
সরকার প্রধানের উদ্দেশে সেলিম বলেন, “মে মাসের মধ্যে আমাদের দেশে ন্যূনতম মজুরি আইন করার পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা দাবি করেছিলাম, ন্যূনতম জাতীয় মজুরি ২০ হাজার টাকা করতে হবে, সেই দাবি ছিল পাঁচ বছর আগে। এই পাঁচ বছরে জিনিসের দাম বেড়েছে, এখন জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ৩০ হাজার টাকা করতে হবে।
“ইউনূসকে বলতে চাই, আপনি যদি সত্যিকারের বৈষম্যবিরোধী হয়ে থাকেন, তাহলে মে মাসের মধ্যে ন্যূনতম জাতীয় মজুরি ৩০ হাজার টাকা ঘোষণা করুন। দেরি করলে মনে করবেন না- ভুলে যাব; প্রতি বছর ন্যূনতম মজুরির দাবিও বেড়ে ৩৫ হাজার টাকায় চলে যাবে।”
প্রয়োজনে ‘শ্রমিক গণঅভ্যুত্থান’ করার ঘোষণাও দেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
তিনি বলেন, “মজুরি নিয়ে দর কষাকষি করবেন, নেতাদের চাকরিচ্যুত করবেন- এগুলো চলবে না। সংস্কার সংস্কার করে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন আর বেতন নিয়ে কথা বলেন না। এ সরকার কার পক্ষে?
“শ্রমিকদের পক্ষে না মালিকদের পক্ষে? যদি বলেন নিরপেক্ষ- তাহলে শিল্প পুলিশের নামে শ্রমিকদের উপর আক্রমণ করা হয়, হত্যা করা হয়, জেলে নেওয়া হয়; কিন্তু ছয় মাস বেতন বন্ধ রয়েছে, সেই মালিকদের তো আপনারা গ্রেপ্তার করেন না?”
সিপিবির সাবেক সভাপতি সেলিম বলেন, “মনে করতে পারেন- শ্রমিকরা কিছু করতে পারে না, ছাত্র বিপ্লব দেখেছেন, শ্রমিক বিপ্লব হবে। এই সমাজ থেকে চিরতরে শোষক গোষ্ঠীকে উৎখাত করবে শ্রমিক বিপ্লব, শ্রমিক আন্দোলন।
“শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, লড়াই করবে, আপনারা প্রস্তুতি নিন। আরেকটা শ্রমিক গণঅভ্যুত্থানের জন্য। আমরা ঘরে ফিরে যাব না।”
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ বলেন, “গার্মেন্ট শ্রমিক যখন লড়াই করে, আর্মি দিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। তার পরেও গার্মেন্ট শ্রমিক লড়াইয়ের পর লড়াই করে। এক ভাইয়ের লড়াইয়ে আরেক ভাই পাশে দাঁড়ায়।
“কিছুদিন আগে এখানে সাতদিন টানা আন্দোলন করে দাবি আদায় করেছে, আগামী ৭ তারিখ তাদের টাকা দেওয়ার কথা। মালিক ৫৮ কোটি টাকা ঋণী তাদের কাছে। আগামী ৭ তারিখ যদি না দেয়, সকল শ্রমিক ভাইদের এখনই মাথায় রাখতে হবে, সকলকে লড়াইয়ের সংবাদ রাখতে হবে। সকলে মিলে লড়াই গড়ে তুলতে পারলে আমরা কার্যকর করতে পারব।”
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে দেশে যেভাবে সরকারি ছুটি শুরু হয়, সেই ঘটনা তুলে ধরেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান।
“১৯৭২ সালে আমি বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করি, উনি বললেন, ‘মনজু, আমি আরও বেশি কিছু দেব’, বললাম, কী দেবেন? উনি বললেন, ‘মে দিবসে সরকারি ছুটি ঘোষণা দেব। সেই থেকে সরকারি ছুটি শুরু হলো। এর সুফল ভোগ করছে- সেনাবাহিনী, পুলিশ, সরকারি চাকরিজীবীরা আর কিছু সংখ্যক শ্রমিক; অধিকাংশ শ্রমিক মে দিবসের ছুটি পায় না।”
মনজুরুল আহসান বলেন, “শ্রমিক শ্রেণিকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে হবে। আজকে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে, বিচ্ছিন্নভাবে নয়। আমরা সবাই মিলে একসাথে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে শ্রমিকদের সকল দাবি দাওয়া আদায় করা সম্ভব।
“সকল শ্রেণি-পেশার শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে হবে। আসুন সংগ্রাম গড়ে তুলি।”
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ কাফি রতন, সহ-সভাপতি জলি তালুকদারসহ অন্যরা সমাবেশে বক্তব্য দেন।