Published : 01 May 2025, 09:53 PM
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষে ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়’ দাবি করে এ সরকারকে পদত্যাগ করে ‘চলে যেতে’ বলেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
তিনি বলেছেন, "যেহেতু আপনি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে পারছেন না, দয়া করে আপনি বিদায় হোন।"
মে দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে জাতীয় শ্রমিক পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় কথা বলছিলেন জিএম কাদের।
ইউনূসের উদ্দেশে তিনি বলেন, "আমরা চাই সরকারপ্রধান ও তার নিয়োগ কর্তারা ক্ষমতা ছেড়ে রাজনীতিতে আসুক। জনগণ যদি তাদের গ্রহণ করে, আমরা গ্রহণ করব। আবারো বলছি, এই মুহূর্তে অবাস্তব সংস্কার চাই না। নির্বাচিত সরকার ছাড়া কেউই সংস্কার করতে পারবে না। আমাদের কর্মসূচিতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে, নেতাকর্মীদের উপর হামলা, মামলা ও নির্যাতন চলছে।
"আমরা আর অন্যায় অত্যাচার সহ্য করব না। আপনারা দেশের অর্ধেক মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর ভোটাধিকার দিতে চান না, আমরা আপনাদের ওই চিন্তার ধার ধারি না। আমরা এদেশের সন্তান, এদেশের জন্য আমাদের ত্যাগ আছে। এদেশের জন্য আমরা কাজ করেছি, ভবিষ্যতেও কাজ করে যাব।”
সাবেক সামরিক শাসক এইচএম এরশাদের ভাই জি এম কাদের বলেন, “দেশের মানুষ যদি আমাদের গ্রহণ না করে আমরা মাথা পেতে নেব, কিন্তু আপনারা আপনাদের সুবিধার জন্য আমাদের রাজনীতি বাধাগ্রস্ত করবেন তা মেনে নেব না। কোনো ফ্যাসিবাদি সিদ্ধান্ত আমরা দেখতে চাই না। যতদিন পর্যন্ত নব্য ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত না হবে, ততদিন আমাদের সংগ্রাম চলবে।"
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, "মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের সম্মানের পাত্র, তিনি আমাদের মাথার মুকুট। আপনি যেখানে ছিলেন সেখানেই থাকেন। আপনি চলে যান, আপনাকে দিয়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব হবে না। আপনার দ্বারা কোনো সংস্কার আমরা বিশ্বাস করি না।
“যারা সংস্কার করছেন, তারা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট জানেন না। আপনারা সংস্কার প্রস্তাবগুলো টেবিলে রেখে যান, পরবর্তী নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় আসবে তারাই সংস্কার করবে। এই মুহূর্তে আমরা সংস্কার চাই না। সরকার প্রধান হিসেবে তার উপরে আমাদের কোন আস্থা নেই, আমরা তাকে চাই না। তারা যে সংস্কারের কথা বলছে, তা বাস্তবায়নযোগ্য নয়।”
জুলাই অভ্যুত্থানের নেতাদের সামনে রেখে গঠিত নতুন দল ‘পুরনো স্টাইলেই’ এগোচ্ছে মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, “চাঁদাবাজি ও শোডাউনের রাজনীতি করতে গিয়ে তারা কাকের গায়ে ময়ুয়ের পালক লাগিয়েছে। তারা দেশের পরিবর্তনের জন্য কোনো কাজ করছে না। যারা সরকারে থেকে দল করছেন, তারা সরকার থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতির মাঠে আসুন। দেশের জনগণ যাকে মেনে নেয়, আমরাও তাকেই গ্রহণ করব।”
সরকারের ক্ষমতা আর ‘মববাজি’ দিয়ে দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার আর চালাতে দেওয়া যাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, "আমরা তা মেনে নেব না।"
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, " সাংবাদিকদের চাকরি চলে যাবে, টিভি স্টেশন বন্ধ হয়ে যাবে এমন কালচার আমরা দেখতে চাই না। আমরা এক ফ্যাসিবাদকে বিদায় করেছি আরেক ফ্যাসিবাদকে গ্রহণ করতে নয়। আমরা এই নব্য ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।
“আমরা নব্য ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসরদের রুখে দেব। কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বের করে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। কোন আইনে রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখবেন?”
জিএম কাদের বলেন, "বাংলাদেশের লাখ লাখ বেকার হয়ে পড়েছে। আরো অনেকেই বেকার হওয়ার আশংকায় উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে অনেক কল কারখানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মিল কারখানা চালু করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে।
“মালিকপক্ষ যে দলই করুক, শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্ধ সমস্ত কলকারখানা চালু করার দাবি জানাচ্ছি। বেকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। কৃষকরা ফসল উৎপাদন করছে, দাম পাচ্ছে না। গেল রমজানে সরকার বাহাদুরি করে বলেছে, সব নিত্য পণ্যের দাম কম। কিন্তু, সরকার বোঝে নাই কৃষকদের কষ্ট। ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কৃষকরা ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে।
“এখন মালামালের দাম বেড়েছে, কিন্তু কৃষক ও শ্রমিকের হাতে টাকা নেই এবং ব্যবসায়ীদের হাতেও টাকা নেই। প্রতিদিন রপ্তানি কমে যাচ্ছে, দেশে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না এলে বিশ্বের কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে ঋণ দেবে না। বিদেশি সাহায্য পাওয়া যাবে না এবং দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি হবে না। এই সরকার দেশকে বিপদজনক ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।"
মে দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।