সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অগ্রভাগে দেখা যায় সংগঠনটির শীর্ষ পর্যায়ের ছাত্রনেতাদের।
Published : 14 Sep 2024, 08:47 PM
শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণে গড়ে ওঠা ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ এর সব কার্যক্রম ও কমিটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
শুক্রবার শেষ রাতের দিকে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির অফিসিয়াল ফেইসবুক পেজে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সব কমিটি ও কর্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ অন্যতম নেতা আখতার হোসেনের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর ছাত্রশক্তি আত্মপ্রকাশ করে।
এবার সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে এবং সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্বে দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অগ্রভাগে দেখা যায় সংগঠনটির শীর্ষ পর্যায়ের ছাত্রনেতাদের।
তাদের মধ্যে দুজন নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ক্ষমতার পালাবদলে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হয়েছেন।
হঠাৎ করে সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা ছাত্রশক্তির ফেইসবুক পেইজে পোস্ট করে দেওয়া হলেও তার কারণ স্পষ্ট করা হয়নি।
তবে পরে এ বিষয়ে সংগঠনের আহ্ববায়ক আখতার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদের মধ্য থেকে দুইজন উপদেষ্টা হয়েছেন এবং ছাত্র রাজনীতির রূপরেখা কেমন হবে, তা নিয়ে ক্যাম্পাস, শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনের মধ্যে এক ধরনের অস্পষ্টতা দেখা দিয়েছে।
“নীতি নির্ধারণের বিষয়েও নতুন অনেক কিছু তৈরি হয়েছে। এসব কারণেই আমরা ছাত্রশক্তির সব কমিটি ভেঙে কার্যক্রম স্থগিত করেছি।”
পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই ছাত্রশক্তি অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে বলে মনে করেন আখতার হোসেন। ফলে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির ব্যানারে কোনো আয়োজন বা তাদের ফেইসবুক পেইজেও কোনো কার্যক্রম না থাকার কথা তুলে ধরেন তিনি।
সামনের দিনে ছাত্রশক্তি কীভাবে চলবে বা পুনর্গঠন করা হবে কি না, তা এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্তরাই নির্ধারণ করবেন বলে মত দেন আখতার।
তিনি বলেন, “নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ যেহেতু উপদেষ্টা হয়েছেন এবং আমি জাতীয় নাগরিক কমিটিতে এসেছি, আমরা আর গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার বা পুনর্গঠন পক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকছি না।”
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়কদের মধ্যে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতাদের আধিক্যের তথ্য সামনে আসে।
সমন্বয়কদের কমিটির তালিকায় ২৩ জনের মধ্যে ৯ জনই ছিলেন ছাত্রশক্তির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। সহসমন্বয়ক হিসেবে যারা সামনে আসেন, তাদেরও অনেকে ছাত্রশক্তির বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্বে ছিলেন।
আরও পড়ুন...
গৎবাঁধা রাজনীতি আর চায় না তরুণ প্রজন্ম: আখতার হোসেন
'গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি' গঠনের ঘোষণা দিলেন ডাকসুর সাবেক নেতা
‘ছাত্রশক্তির’ নেত্বত্বে ছিলেন ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ অন্যতম নেতা আখতার হোসেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হন।
সরকারের দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ ছাত্রশক্তির কমিটির দায়িত্বশীল পদে ছিলেন। নাহিদ ছিলেন কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আলোচিত সমন্বয়কদের দুজন ছিলেন।
ছাত্রশক্তির সদস্য সচিব ছিলেন মো. আবু বাকের মজুমদার ও যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন আব্দুল কাদের। যুগ্ম সদস্য সচিব ছিলেন আসাদুল্লাহ আল গালিব, নুসরাত তাবাসসুম, রাফিয়া রেহনুমা হৃদি, সদস্য সোহাগ মিয়া ও আব্দুল হান্নান মাসউদ। এরা সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সহসমন্বয়ক রিফাত রশীদ, হাসিব আল ইসলাম, আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন, নিশিতা জামান নিহা গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সদস্য ছিলেন।