সরকার কীভাবে আন্দোলন দমাতে চায়, ভোলায় দেখিয়েছে: ফখরুল

ভোলায় আবদুর রহিমের মৃত্যুর শোককে ‘শক্তিতে পরিণত করতে’ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2022, 11:50 AM
Updated : 1 August 2022, 11:50 AM

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার যে পুলিশ দিয়ে ‘আন্দোলন দমানোর পাঁয়তারা’ করছে, ভোলায় তার ‘প্রমাণ’ মিলেছে

ভোলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আবদুর রহিমের মৃত্যুর ঘটনায় সোমবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গায়েবানা জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার পুলিশ দিয়ে গুলিবর্ষণ করে জানান দিয়ে দিয়েছে যে, তারা পুলিশ দিয়ে নির্যাতন করে এই আন্দোলনকে দমন করতে চায়। কিন্তু ভোলার মানু্ষের রক্তের মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এদেশের মানুষ কখনও ফ্যাসিবাদী সরকার, আওয়ামী লীগ সরকারের দমননীতিকে মেনে নেবে না।

“তারা দেশকে মুক্তি করবার জন্য, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবার জন্য- তারা জীবন দিয়ে হলেও, রক্ত দিয়ে হলেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। আমরা আবদুর রহিমের রক্তকে বৃথা যেতে দিতে পারি না। তাই এই শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে।”

বিদ্যুতের লোড শেডিং ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে রোববার দুপুরে ভোলা জেলা বিএনপি সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সে সময় গুলিতে নিহত হন আবদুর রহিম।

তার এই ‘আত্মত্যাগকে’ ধারণ করে নেতাকর্মীদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “পুলিশের গুলিতে আমার গণতান্ত্রিক ভাইদের রক্ত ঝরেছে, রক্ত ঝরেছে ভোলায়। ভোলায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ গুলিবর্ষণ করেছে। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের ভাই আবদুর রহিমকে হত্যা করেছে। কেন্দ্রীয় নেতা এ বি এম মোশাররফ হোসেনসহ একশ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গুলিবর্ষণ করে আহত করা হয়েছে।

“এটা ছিল একটা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। বিদ্যুতের দাবিতে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ছিল। সেই সমাবেশে আজকে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পুলিশ দিয়ে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে।”

ভোলার ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সারাদেশে গায়েবানা জানাজার পর মঙ্গলবার বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।

সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ১১টায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে রহিমের স্মরণে গায়েবানা জানাজা হয়। বিএনপি মহানগর, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, কৃষক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মী তাতে অংশ নেন।

জানাজার আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে আজকে গুম-খুন-হত্যার রাজনীতির মাধ্যমে এরা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় থাকতে চায়, যেতে চায় এবং অব্যাহতভাবে থাকার আর কোনো সুযোগ নাই।

“দেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ঘুরে দাঁড়াবে। এদেশের মানুষ অতীতে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে, এবারও স্বৈরাচার মুক্ত করবে।”

দলের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “ভোলা একটি শান্তিপূর্ণ জেলা। কিন্তু গতকাল বিনা উসকানিতে পুলিশ নিরীহ শান্তিপূর্ণ কর্মীদের ওপরে আক্রমণ চালিয়েছে। পার্টি অফিস থেকে বেরনো মাত্রই যে মিছিল শুরু হয়নি, তখন তারা অতর্কিত গুলিবর্ষণ করেছে। এভাবে গুলিবর্ষণ অনাকাঙ্ক্ষিত এবং এটিই কেবলমাত্র নির্লজ্জ পেশীশক্তি প্রদর্শনের জন্যে, জনতার কণ্ঠস্বরকে দাবিয়ে রাখার জন্য ন্যাক্কারজনকভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে।

“এভাবে দমনপীড়ন করে বুটের নিচে পিষ্ট করে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করা যাবে না- ভোলাতে এটা প্রমাণ হয়েছে।”

অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, হারুনুর রশীদ, আমিরুজ্জামান শিমুল, আকরামুল হাসান মিন্টু, শায়রুল কবির খান, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি, মহানগর বিএনপির আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, হাবিবুর রশীদ হাবিব, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, যুবদলের মামুন আহমেদ, মোনায়েম মুন্না, কৃষকদলের হাসান জাফির তুহিন গায়েবানা জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির বাইরে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান, এনডিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।