“এত ক্ষুধা রাজনীতিক নেতার? কিসের রাজনীতিক? তিন দিনও খাইনি আমরা একসাথে,” বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
Published : 31 Jul 2023, 01:39 PM
ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান থেকে আটক গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে খাওয়ানোর পর সেই ছবি সোশাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়ায় দোষের কিছু দেখছেন না আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার ভাষায়, গোয়েন্দাদের কাজই এরকম।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে গিয়ে ‘কেন খেলেন’, উল্টা সেই প্রশ্ন তুলেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সোমবার তিনি বলেন, “উনি কেন খাইলেন এটা জিজ্ঞেস করেন। এত ক্ষুধা রাজনীতিক নেতার? কিসের রাজনীতিক? তিন দিনও খাইনি আমরা একসাথে।”
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলে এক দফার আন্দোলনে নামা বিএনপি গত শনিবার ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থানের কর্মসূচি দিয়েছিল।
নয়া বাজারে সেই কর্মসূচি পালনে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল গয়েশ্বর রায়। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাধায় নয়া বাজারে দাঁড়াতে না পারার পর ধোলাইখালে তারা সড়কে নামলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে।
সংঘর্ষে আহত অবস্থায় গয়েশ্বরকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। চার ঘণ্টা পর তাকে নয়া পল্টনে দিয়ে আসে পুলিশ।
এর মধ্যেই ডিবি কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর রশীদের সঙ্গে গয়েশ্বরের মধ্যাহ্ন ভোজের একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে গাবতলীতে অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির মধ্যে সড়কে শুয়ে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি আমানউল্লাহ আমান।
সেখান থেকে পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আমানকে বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।
তার আগে আমানকে দেখতে প্রধানমন্ত্রী তার সহকারী একান্ত সচিব গাজী হাফিজুর রহমান লিকুকে পাঠান হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। তার মাধ্যমে আমানের জন্য ফল, জুস ও দুপুরের খাবার পাঠান সরকারপ্রধান। সেই ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।
কর্মসূচি থেকে উঠিয়ে নেওয়ার পর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে আপ্যায়িত হওয়ার ছবি-ভিডিও প্রকাশকে ‘নোংরা নাটক’, ‘নিম্ন মানের মশকরা’ আখ্যায়িত করে রোববার ক্ষোভ ঝাড়েন গয়েশ্বর।
সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হন ওবায়দুল কাদের।
মানবজমিন পত্রিকা ‘ভিডিও পলিটিক্স, সেকাল-একাল’ শিরোনামে সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে ওবায়দুল কাদের ও শেখ ফজলুল করিম সেলিমের পুরানো ছবি এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং আমান উল্লাহ আমানের গত শনিবারের ছবি পাশাপাশি ছাপানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাদের বলেন, “তো হয়েছে কি? যা সত্য সেটা আসছে, অসুবিধা কি? যেটা সত্য এটা আসছে, সেটা তো আর কিছু বলার নাই। কেউ সাজিয়ে দিয়েছে কিনা সেটা ভিন্ন খবর। উনি (গয়েশ্বর) তো রুই মাছ দিয়ে ভালো করেই খাইছেন।”
গোয়েন্দা প্রধানের দপ্তরে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দেওয়া রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে কিনা, এ প্রশ্নে কাদের বলেন, “আন্দোলনে হয়ত উনার ক্ষুধা লাগছে। ক্ষুধা লাগছে উনি খেয়েছেন। আমানরে (আমান উল্লাহ আমান) সৌজন্য, একজন রাজনৈতিক কর্মী তার কাছে নেত্রী কিছু ফল পাঠিয়েছেন, এটি পাঠাতেই পারে। সে একটু অসুস্থ হইছেন ফল পাঠানো নিয়ম, রাজনীতিতে সৌজন্যতা তো বিদায় নেবে না।”
সাংবাদিক আবারও জানতে চান, একজনকে খাওয়ানোর পর তার ভিডিও করে ছেড়ে দেওয়া রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে কিনা। জবাবে কাদের বলেন, “এটা কি রাজনৈতিক লোকেরা করছে? আরে গোয়েন্দার কাজেই তো। গোয়েন্দা গোয়েন্দাই। সে তো তথ্য নিয়ে বের করার জন্য বসে আছে। (মতবিনিময় সভায় নিজের দুই পাশে বসা দুই নেতাকে দেখিয়ে বলেন) বিপ্লব বড়ুয়া আর আরাফাত গিয়ে তো করে নাই।”
খাইয়ে ছবি তোলা ‘নিম্ন মানের মশকরা’, বললেন গয়েশ্বর