“সবগুলো রাজনৈতিক দলই সরকারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে, সরকারকে নিজেদের সরকার বলে মনে করছেন” বলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
Published : 06 Oct 2024, 01:00 AM
রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ন্যূনতম ঐক্যমতের’ উপর নির্ভর করছে নির্বাচনের ‘টাইমলাইম’ বলে তৃতীয় দফা সংলাপ শেষে তুলে ধরেছেন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
শনিবার দলগুলোর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পৃথকভাবে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
সংলাপ শেষে রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম ও প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
এতে নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার বিষয়ে এক প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনি রোডম্যাপের ব্যাপারে সংস্কার কমিশন নিয়ে কথা হয়েছে। ছয়টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে পাঁচটি পূর্ণাঙ্গ হয়েছে। বাকিটা দুই একদিনের মধ্যে ঘোষণা হবে। এসব কমিশন তাদের তিন মাস সময়সীমার মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কথা বলবে।
তিনি বলেন, এরপর তাদের প্রতিবেদনগুলো নিয়ে আবার অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক দল, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে আবার কথা বলবে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর একটা ন্যূনতম ঐক্যমতে আসবে। এটির উপর নির্ভর করবে টাইমলাইনটা। কারণ যতটুকু সংস্কার করবেন সেটা কতটুকু সময় লাগছে সেটা দেখার বিষয়।
”এসময়ের মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজগুলো এগিয়ে যাবে, নির্বাচনের প্রস্তুতি, নির্বাচন কমিশন গঠনের কাজগুলো এগিয়ে যাবে। যখন রিফর্মের ব্যাপারে ঐক্যমতে উপস্থিত হলে, যাতে খুব দ্রুত একটা নির্বাচনটা দিয়ে দেওয়া যায়।”
প্রেস সচিব বলেন, ”এখনই আমরা টাইমটা বলতে পারছি না, কিন্তু নির্বাচনি প্রসিডিউরটা কীভাবে হবে, তা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংলাপ একটি চলমান প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক দলগুলো এই সরকারের একটি বড় ধরনের শরিক। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
”রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কনর্সান নিয়ে আসবেন, কথা হবে। এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে। উপদেষ্টামণ্ডলীর সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হবে “
সংলাপের বিষয়বস্তু তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজত, বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং বাম গণতন্ত্র মঞ্চ, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের দুটি ধারা অংশ নেয়। সবার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে ধারাবাহিক। এতে সংস্কার কমিশন নিয়ে তাদের প্রস্তাব বা অভিমত জানতে চাওয়া হয়েছে।
দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দুর্গাপূজা নিয়ে আলোচনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “হিন্দু ভাইদের গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, এই উৎসবের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে উৎসবের সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে যে উদ্যেগগুলো নেওয়ার কথা আছে সেসব নিয়েও সবগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা হয়েছে।
”সবগুলো রাজনৈতিক দলই সরকারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে, সরকারকে নিজেদের সরকার বলে মনে করছেন এবং সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগীতা দেবার ব্যাপারে দৃঢ় মত পোষণ করেছেন। নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে কথা এসেছে। কিন্তু সবগুলো বিষয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে কমিশনগুলোর প্রস্তাবনার ভিত্তিতে কীভাবে রাষ্ট্রের সংস্কারকে ঢেলে সাজানো হবে এবং সেটার সমান্তরালে কিভাবে নির্বাচনি কার্যক্রম বা প্রস্তুতি চলমান থাকবে, সেইসব নিয়েই আলোচনা আর্বতিত হয়েছে।“
এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুল বলেন, ”প্রশাসনের ভেতরে যারা ফ্যাসিবাদের দোসর তাদের ব্যাপারে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান আছে। সরকার এই ব্যাপারে যথেষ্ট সক্রিয় আছে। ফ্যাসিবাদের যারা দোসর ছিল তাদের কীভাবে শাস্তির আওতায় আনা যায়, তারা যে যে অপরাধ করেছে সেই অপরাধের শাস্তির আওতায় আনার ব্যাপারে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান আছে।”
দায়িত্ব গ্রহণের দ্বিতীয় মাস শেষে সরকার মূলত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং জনআকাঙ্খার বিষয়গুলোতে সংস্কারে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে তিনি তুলে ধরেন।
”একই সঙ্গে প্রশাসনের যেসব জায়গাতে ফ্যাসিবাদের দোসররা সক্রিয়া ছিলেন, এরই মধ্যেই অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অনেকের নামেই মামলা আছে। এসব ক্ষেত্রে পরবর্তী কার্যক্রম চলমান আছে। প্রশাসনের বা বাইরে দলীয়ভাবে গণগত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে ভূমিকা রেখেছিল সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে। ধীরে ধীরে সবাইকে সঠিক মামলা এবং তদন্তের ভিত্তিতে শাস্তির আওতায় আনা হবে। এটা আমাদের স্পষ্ট অবস্থান।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনাই নয় শুধু, যতজন গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন সবার বিচারের ব্যাপারে বিএনপি তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছে স্পষ্টভাবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট করেছি যে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে, ট্রাইব্যুনালে এরই মধ্যে অনেকগুলো মামলা চলমান আছে। এবং গুম যে কমিশন আছে অভিযোগগুলো পড়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আয়নাঘর পরিদর্শনে যাওয়া হয়েছে।
”এই কাজগুলো চলমান আছে। একেবারে তৃণমূলের কর্মী থেকে শুরু করে প্রধান যিনি ক্রীড়নক ছিলেন শেখ হাসিনা পর্যন্ত এর আওতায় আনা হবে। সবাইকে বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে যাচ্ছে।”
আরেক প্রশ্নের বিশেষ সহকারী মাহফুজ বলেন, ”আমাদের এখানে যে কথাটা বললেন যে কয়েকজন উপদেষ্টা এবং বিভিন্ন আমলার ব্যাপারে হয়তো কথা চলতেছে, জনরোষ বা অসন্তোষ থাকাটা স্বাভাবিক কিন্তু আমরা দেখতে চাই যে আসলে যে এরকম এডভাইজারদেরকে যে ধরনের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা এই কাজগুলো সঠিকভাবে যদি দায়িত্ব পালন করেন, আমরা মনে করি এই সময়টুকু তাদের দেওয়া উচিত।
”এবং দেখা উচিত যে জনগণের আকাঙ্খা অনুযায়ী কাজ করছেন কি না। আমরা আশা করি তারা জনগণের আকাঙ্খা অনুযায়ী কাজ করবেন।”
দ্রব্যমূল্য বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের পক্ষপাতি এবং প্রথম থেকেই সরকার সিন্ডিকেট এবং চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।
”আপনারা জানেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটা বেহাল দশা ছিল এবং ধীরে ধীরে মাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেদের অবস্থানে ফেরত আসছেন। আমরা আশা করি খুব স্বল্প সময়ের ভিতরে সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে এবং চাঁদাবাজি বন্ধ করার সুযোগ তৈরি হবে। এর পরবর্তীতে আশা করি দ্রব্যমূল্যের একটা সুরাহা আমরা করতে পারব।”
তিনি পণ্যমূল্যের দাম কমাতে নাগরিক সমাজসহ সংবাদমাধ্যমেরও পরামর্শ চান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
সংলাপ: অবিলম্বে ইসি গঠন ও 'নির্বাচনের রোডম্যাপ' চাইল বিএনপি
সংলাপ: নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি-জামায়াত 'বিপরীত মেরুতে'
সংলাপ: পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথাও প্রধান উপদেষ্টাকে জানাল গণতন্ত্র মঞ্চ