মির্জা আব্বাস বলেন, “সকলের বেদনা ক্লিষ্ট মুখ, বেদনা-বিধুর চেহারা, অনেক কষ্ট করে তারা কোরবানি দিচ্ছে।”
Published : 17 Jun 2024, 02:54 PM
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার মত মানসিকতা ‘জনগণ হারিয়ে ফেলেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
সোমবার ঈদের নামাজ শেষে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেন, “আজকে ঈদুল আজহা পালিত হচ্ছে, এখন থেকে ১৫ বছর আগে যদি আমরা ফিরে যাই, অর্থাৎ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের সময় যদি আমরা ফিরে যাই, বা তারও একটু আগে যদি ফিরে যাই, তখনকার ওই ঈদের আনন্দ আজকে আর জনগণের মধ্যে নেই।
“ঈদ শব্দের বাংলা অর্থ হল খুশি। এই খুশি এটাকে যে উপভোগ করার একটা ব্যাপার, সেই মনমানসিকতা এটা কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নেই।
“সকলের বেদনা ক্লিষ্ট মুখ, বেদনা-বিধুর চেহারা, অনেক কষ্ট করে তারা কোরবানি দিচ্ছে। আমার বাড়ির (শাহজাহানপুর) পাশে কোরবানির পশুর হাট ছিল। দেখলাম বেশ কিছু বেপারী তাদের গরু বিক্রি করতে পারেনি। অর্থাৎ টাকার অভাব লক্ষ্য করা গেছে।”
দেশের মানুষের ‘কষ্টের জন্য’ সরকারকে দায়ী করে আব্বাস বলেন, “যদি নির্বাচিত সরকার থাকত, তাহলে জনগণের এই কষ্ট হত না। এটা প্রমাণিত, যখন নির্বাচিত সরকার ছিল তখন কী অবস্থা ছিল আর আজকের কী অবস্থা।”
এসময় দলের হাজারো কারাবন্দি নেতাদের প্রতি সহমর্মিতা জানান এ বিএনপি নেতা।
সার্বভৌমত্ব ‘বিকিয়ে দিয়েছে’ সরকার
মির্জা আব্বাস বলেন, “অক্টোপাসের শুঁড় দিয়ে বন্দি করার মত আজকে দেশের মানুষকে চারিদিক থেকে আটকে ফেলা হয়েছে। কি রাজনৈতিক, কি অর্থনৈতিক, কি সামাজিক, কি ভৌগলিক। আমি যদি ভৌগলিক অবস্থার কথা বলি আমরা কিন্তু ভালো অবস্থানে নাই, শান্তিতে কিন্তু আমরা নাই।
“আপনি দেখেন সেন্ট মার্টিন একটা দ্বীপ নিয়ে যে দ্বীপ একেবারেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে, সেই দ্বীপে আজকে খাদ্য সংকট পড়েছে। সেই দ্বীপ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ওখানে খাদ্য সরবারহ করা যাচ্ছে না। কার ভয়ে? মিয়ানমার সৈন্যবাহিনীর ভয়ে।”
তিনি বলেন, “অথচ ১৯৭৮-৭৯ সালের দিকে এই মিয়ানমার নতজানু হয়ে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি (জিয়াউর রহমান) তার কাছ থেকে মাফ চেয়ে বিদায় নিয়েছিল। সেই মিয়ানমার আজকে কতটা উদ্ধত হয়ে গেছে যে, তারা আমাদের রাষ্ট্রকে রক্তচক্ষু দেখায়।”
মিয়ানমারের এ ধরনের আচরণের জন্যও সরকারকে দায়ী করে মির্জা আব্বাস বলেন, “কারণ এদেশে একটা অবৈধ সরকার, অনির্বাচিত সরকার যাদের দেশে ভেতরে ও বাইরে কারোই সমর্থন এই সরকারের প্রতি নাই। এই কারণেই আজকে তারা (মিয়ানমার) সুযোগ নিচ্ছে।”
সরকার বলছে, সেন্ট মার্টিন নিয়ে একটি মহল ‘গুজব’ ছড়াচ্ছে- এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মির্জা আব্বাস বলেন, “পত্রিকায় ছবিতে দেখা গেছে মিয়ারমার সেনাবাহিনীর সশস্ত্র তিনটি জাহাজ আমাদের সীমানায় অবস্থান করছে। এরপরও তারা (সরকার) এই কথা বলছে। এই চাপাবাজি তো সারাজীবন করেছে তারা। মিথ্যা কথা হল তাদের একটা পূঁজি। এই পূঁজি বিক্রি করেই তারা এই পর্যন্ত আছে।”
নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে সেন্ট মার্টিনগামী ট্রলারে মিয়ানমার অংশ থেকে গুলি করার একাধিক ঘটনার খবর গত সপ্তাহে সংবাদমাধ্যমে আসে। সেই সঙ্গে নাফ নদীর মিয়ানমার অংশে দেশটির বড় একটি জাহাজ দেখা যাওয়ার খবর এসেছে। সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণ ও ভারি গুলিবর্ষণের শব্দও এপার থেকে শোনা গেছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি গত এক মাস শান্ত থাকলেও নতুন করে গোলাগুলির এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
গুলির ঘটনার পর সেন্ট মার্টিনের সঙ্গে টেকনাফ ও কক্সবাজারের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিকল্প পথে পণ্য পরিবহন শুরু হয়। এছাড়া শনিবার সকাল থেকে নাফ নদীতে থাকা বড় সেই জাহাজও আর দেখতে পাওয়া যায়নি।
মির্জা আব্বাস বলেন, “বহু দেশ আছে তারা বাংলাদেশের ওপরে খবরদারি করছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব আজকে অন্যের হাতে বিকিয়ে দিয়ে এই সরকার নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে মির্জা আব্বাস বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তিনি আছেন। আল্লাহ জানেন কী অবস্থা। এই মুহূর্তে দেশনেত্রীর আরোগ্য কামনায় আমরা দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। ”
দলের কমিটি পুর্ণগঠন ‘চলমান প্রক্রিয়া’
সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে রদবদল আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণে কি না– সেই প্রশ্ন মির্জা আব্বাসকে করেন সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, “মোটেও না। এসব বাজে কথা। আমাদের দলের নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বরাবর যা হয়ে আসছে, চলমান একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে এটা আছে।
“এখন এসব কথা বলে কিছু কিছু লোক ফয়দা লুটতে চাচ্ছে। আমরা এর নিন্দা করি যারা বলে এসব কথা। এটা ঠিক না।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে বড় রদবদল করা হয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ পাঁচ যুগ্ম মহাসচিবকে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়েছে।
উপদেষ্টার তালিকায় আরও ছয় নেতা স্থান পেয়েছেন, যাদের মধ্যে আছেন সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বেবী নাজনীন।
এর বাইরে জাতীয় নির্বাহী কমিটির ৩৪ পদে রদবদল আনার কথা জানানো হয়েছে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
খালেদা জিয়ার ‘ঈদ মোবারক’
মির্জা আব্বাস সাংবাদিকদের বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে, জনগণকে ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক জানিয়েছেন। তিনি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।”
বেলা সাড়ে ১১টায় ঈদের কর্মসূচিতে মির্জা আব্বাস বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আহমেদ আজম খান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, রফিকুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, শাহ নেসারুল হকসহ আরো অনেককে সঙ্গে নিয়ে শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেন। এ সময় তারা ফাতেহা পাঠ করে দলের প্রতিষ্ঠাতার আত্মার মাগফেরাত কামনায় মোনাজাতে করেন।
মহানগর উত্তরের নেতা আমিনুল হক, যুব দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্র দল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, মতস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, জাসাসের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রোকনসহ কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও ঈদের দিন তাদের প্রয়াত নেতার কবরে শ্রদ্ধা জানান।
আগে প্রতি ঈদে খালেদা জিয়া তার স্বামী জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতেন। ২০১৮ সালে দুর্নীতি মামলার রায়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে, দলের নেতাকর্মীরা সেই ধারাবাহিকতা অনুসরণ করছে।
খালেদা জিয়া এখন সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্ত আছেন। রাত সাড়ে ৮টায় গুলশানে তার বাসা ‘ফিরোজায়’ তার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যাবেন দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা।
পুরনো খবর
খোকন, আলাল, দুলু বিএনপির উপদেষ্টামণ্ডলীতে
ঈদের সকালে জিয়ার কবরে, রাতে খালেদার বাসায় যাবেন বিএনপি নেতারা
সেন্ট মার্টিন নিয়ে গুজবে বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ আইএসপিআরের