বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, তাদের নেত্রীর ‘মুক্তির’ জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
Published : 25 Jun 2024, 03:46 PM
হৃদযন্ত্রে ‘পেসমেকার’ বসানোর পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘স্থিতিশীল’ বলে জানিয়েছেন দলের মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সাংবাদিকদের জানান।
ফখরুল বলেন, “সকাল পর্যন্ত আমি যতটুকু জানি, গতকালকে তাকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে… তা করার কথা না। তিনি সিসিইউতে ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা অ্যাডজাস্ট করতে পারেন না, সে কারণে সিসিইউর ফ্যাসিলিটিজগুলো কেবিনে নিয়ে তাকে শিফট করা হয়েছে। সেখানে তিনি এখন পর্যন্ত স্টেবেল আছেন।”
হঠাৎ অসুস্থতা বেড়ে গেলে শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে খালেদা জিয়াকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে রোববার তার হৃদযন্ত্রে ‘পেসমেকার’ বসানো হয়।
খালেদা জিয়ার হৃদরোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। হার্টে তিনটি ব্লক থাকায় আগে একটি রিং পরানো হয়েছিল। পরে বিদেশি চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তার পেসমেকার বসানো হল।
৭৯ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।
দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে যেতে হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুতে তার পরিবারের আবেদনে সরকার নির্বাহী আদেশে দুই শর্তে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। শর্ত হল, তাকে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
গত তিন বছরে পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে কয়েক দফা অনুমতি চাইলেও ওই শর্তের যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবারই তা নাকচ করেছে সরকার।
‘নির্মমতা’
মির্জা ফখরুল বলেন, “এই সরকারের মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া। সে কারণেই তাকে একেবারে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে…. তার এতে কোনো সম্পৃক্ততা নেই্… তাকে সাজা দিয়ে এবং পরবর্তীকালে হাই কোর্টে আরও বেশি সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে।
“আপনারা জানেন, দুই বছর একটা পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে ছিলেন। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বার বার চেষ্টা করার পরেও সেখানে ভালো চিকিৎসক পাঠানো হয়নি। বহু চেষ্টার পর যখন তাকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে আসা হল, সেখানেও তিনি সুষ্ঠু চিকিৎসা পাননি।”
ফখরুল বলেন, “যখন তাকে বাসায় নিয়ে আসা হল, সেটাও আবার শর্ত সাপেক্ষে যে, তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না, দেশেই চিকিৎসা নিতে হবে। তখনই তার ধরা পড়ল লিভার সিরোসিস। এটা ছোটখাটো রোগ নয়, সিরোসিস… ইটস আ মেজর ডিজিজ। তখন ডাক্তাররা আমাদেরকে বলেছিলেন যে, লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়া তার কোনো পথ নেই। এটা বাংলাদেশে সম্ভব নয়।
“আপনারা জানেন, আমরা কম চেষ্টা করিনি। সরকারের এখানে কোনো কৃতিত্ব নাই। আমরা এখন পর্যন্ত যেটুকু করেছি সেটুকু তার পরিবার এবং দলের চেষ্টাতেই হয়েছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তারদের নিয়ে এসেছি। তারা যে প্রসিডিউর করেছেন, সেই প্রসিডিউরে তিনি এখন পর্যন্ত টিকে আছেন।”
তবে এটা কোনো সমাধান নয় মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “একমাত্র সমাধান হচ্ছে তার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা। তার যে অনেকগুলো অসুখ আছে, সেই অসুখের জন্য তাকে এমন চিকিৎসা সেন্টারে পাঠাতে হবে সেখানে তার সঠিক চিকিৎসা করতে হবে অন্য অসুখগুলো কন্ট্রোল করে। এটাই আমরা বার বার করে বলছি।”
প্রধানমন্ত্রীকে দোষারোপ
মির্জা ফখরুল বলেন, “অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, তাকে (খালেদা জিয়া) বাইরে পাঠানোর জন্য সব ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিল প্রায়, তার পরিবার আবেদন করেছিল। ফাইনালি যখন এটা (আবেদন) প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেছে, প্রধানমন্ত্রী এটা রিজেক্ট করেছেন।
“শুধু এটা নয়, আমরা বিভিন্ন মিশনগুলোর কাছেও চিঠি দিয়েছিলাম। তার চেষ্টা করেছেন, তারা বার বার চেষ্টা করেছেন… ফেরত এসেছেন। তারা বলেছেন যে, স্যরি ভাই, উনি শুনলেন না। শি ইজ ভেরি ভিনডিক্টিভ…. এই উচ্চারণটা করেছেন।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “উদ্দেশ্যটা হচ্ছে, রাজনীতি থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখা। দেখেন ২০১৮ সালের নির্বাচনের ঠিক আগে আগে তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হল এবং তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হল। এই যে বিষয়টা। তারপর থেকে তিনি যাতে কোনোমতেই মুক্তি না পান, তা চলছে এখন পর্যন্ত।”
‘কর্মসূচি হবে’
গত ২৪ জুন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবণতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, “শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও সংবিধানবিরোধী। অবৈধ সরকার তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে দেশনেত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছে।
“দলের স্থায়ী কমিটির সভায় অনতিবিলম্বে দেশনেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়, একই সঙ্গে তার মুক্তির আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়।”