“আমি আগেও বলেছি, যত বাধা দেবেন, যত গ্রেপ্তার করবেন, তত নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হবে। তারা আরও বেশি দলে দলে সমাবেশ সাফল্যমণ্ডিত করার চেষ্টা করবেন,” বলেন রিজভী।
Published : 27 Jul 2023, 03:54 PM
বিএনপির মহাসমাবেশ সামনে রেখে গত এক দিনে ঢাকায় পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “আমি আগেও বলেছি, যত বাধা দেবেন, যত গ্রেপ্তার করবেন, তত নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হবে। তারা আরও বেশি দলে দলে সমাবেশ সাফল্যমণ্ডিত করার চেষ্টা করবেন।
“গত ২৪ ঘণ্টায় আমাদের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমি গ্রেপ্তারকৃত সকল নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।”
রিজভী বলেন, শুক্রবার দুপুর ২টায় নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই তাদের মহাসমাবেশ হবে। সেজন্য অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়াসহ ‘সকল প্রক্রিয়া’ সম্পন্ন করা হয়েছে।
“আর আমাদের মহাসমাবেশের প্রস্তুতি চলছে। এই যে মহানগর ঢাকা উত্তর-দক্ষিণের দুই আহ্বায়ক (ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম) এখানে আছেন। তাদের মূল দায়িত্ব এই সমাবেশ অনুষ্ঠানে। তারা মহাসমাবেশকে সাফল্যমণ্ডিত করতে যে কাজ করা দরকার সেটা তারা সার্বক্ষণিক তদারিক করছেন।”
বিএনপির এই মহাসমাবেশ হওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। সেজন্য নয়া পল্টন অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চেয়েছিল দলটি। এর পাল্টায় আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ বৃহস্পতিবার বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটেই শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল।
কিন্তু বৃহস্পতিবার কার্যদিবস হওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশ কোনো দলকেই অনুমতি দিচ্ছিল না। বিএনপিকে সমাবেশের জন্য গোলাপবাগ মাঠ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছিল পুলিশের তরফ থেকে।
এ পরিস্থিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কর্মসূচি এক দিন পেছানোর সিদ্ধান্ত হয়। বুধবার রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দেন, বৃহস্পতিবার নয়, তারা মহাসমাবেশ করবেন শুক্রবার বেলা ২টায়। আর সেটা নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই হবে।
তখন যুবলীগও জানায়, তাদের তিন সংগঠনের শান্তি সমাবেশ একদিন পিছিয়ে শুক্রবার বিকাল ৩টায় নেওয়া হয়েছে। শেরেবাংলা নগরে পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে সেই কর্মসূচি হবে।
তবে বৃহস্পতিবার আবারও সেই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনে যুবলীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান নিখিল বলেন, শুক্রবার বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইটে শান্তি সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চেয়েছেন তারা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, কাউকেই এখনও ঢাকায় সমাবেশ করতে অনুমতি দেওয়া হয়নি। অনুমতি দেওয়া হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নেবে ঢাকা মহানগর পুলিশ। আর অনুমতি দেওয়া হলে দুই দলের ক্ষেত্রেই একই শর্ত প্রযোজ্য হবে।
রাজনৈতিক কোনো দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে বাধা নেই মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, সমাবেশ থেকে সহিংসতা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
‘মহাসমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ’
রিজভী বলেন, “বিএনপি একটা বড় দল। আমাদের নেতা-কর্মীরা দলের যে কোনো আহ্বান, কর্মসূচিকে সফল করার জন্য তারা প্রস্তুত থাকে। এটা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ।
“সবাই এখানে যোগদান করবেন স্বতস্ফূর্তভাবে। আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুনবেন এবং বক্তব্য শুনে আবার ফিরে যাবেন নিজ নিজ এলাকায়।”
ডিএমপি অনুমতির বিষয়ে কী বলেছে জানতে চাইলে রিজভী বলেন, “আমরা মহাসমাবেশে বিষয়টি তাদেরকে জানিয়েছি এবং তারা… । আমাদের কাজ আমরা করেছি। ইনশাল্লাহ আগামীকাল সমাবেশ হবে।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, রফিকুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
‘এখানে অশান্তি কী হয়েছে?
শুক্রবার দুপুরে মহাসমাবেশের কর্মসূচি থাকলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার সকালেই নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ভিড় করতে শুরু করেন; পরিস্থিতি সামাল দিতে কার্যালয়ের দুই পাশে অবস্থান নেয় পুলিশ।
পুলিশের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, বৃহস্পতিবার কর্মদিবসে সড়কে কোনো জটলা সৃষ্টি করা যাবে না।
সকালে আদালতে হাজিরা দিয়ে দুপুরে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন রিজভী। সেখানে পুলিশের অবস্থান দেখে নেতা-কর্মীদের ভিড় না করে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
পরে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, “পুলিশের প্রস্তুতি… এখানে অশান্তি কী হয়েছে। একটা বড় সমাবেশ হলে নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা উৎসাহ জন্ম নেয়, তারা একটা উৎসবের আমেজের মধ্যে থাকে। তারা দলীয় কার্যালয়ের সামনে আসে এবং খোঁজ-খবর নেয় সমাবেশ বিষয়ে। নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করে, কথা বলে … এটাতে তারা আনন্দিত বোধ করে, গর্বিত বোধ করে।
“কিন্তু আপনারা দেখেছেন এই শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে পায়ে পাড়া দিয়ে, এই পরিবেশকে নস্যাত করার উসকানির আশ্রয় নিচ্ছে সরকার। গতকাল থেকে আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করছেন, হয়রানি করছেন। হোটেলে হোটেলে তল্লাশি করছেন। আমার প্রশ্ন এরা কি বেআইনি লোক? এরা কি অপরাধী? এরা বিভিন্ন এলাকার গণমান্য ব্যক্তি, জেলার অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।”
রিজভী বলেন, “আপনারা শুনেছেন, দলীয় কার্যালয়ের আশে-পাশের হোটেলগুলোতে পুলিশ গতরাতে হানা দিয়েছে, গ্রেপ্তার করেছে অনেককে। এটা কি কোনো গণতান্ত্রিক আচরণ হল? এটা কি কোনো সভ্য আচরণ হতে পারে?”
বৃহস্পতিবার রাতে লালমাটিয়ার বাসা থেকে বিএনপি সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কুদ্দুসুর রহমান আকন, ধানমণ্ডির একটি বাসা থেকে ত্রাণ ও পূনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিলন, রাজশাহী যুব দলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জল, তানোর পৌর সভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমানসহ নয়জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার মীর আশরাফ আলী আজম ও তার ছেলে ব্যারিস্টার মুরতার আলীকে বাসা থেকে ‘পিটিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করে’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে তথ্য দেন রিজভী।
তবে পুলিশের তরফ থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
থানা পুলিশ থেকে বলা হচ্ছে, মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ এসব অভিযান চালাচ্ছে। আর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি অসুস্থ। কোথায় অভিযান হচ্ছে তা তিনি জানেন না, তিনি জেনে জানাবেন।
সকালে রিজভীর সাক্ষরে এক ইংরেজি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার রাতে বিএনপির ঢাকা মহানগরের নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর আশরাফ আলীর বাসায় অভিযান চালিয়ে ছেলেসহ তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের সময় আশরাফ আলী গুরুতর আহত হন, তার একটি পা ‘ভেঙে গেছে’ বলে দাবি করে সেখানে বলা হয়, তাকে পুলিশ হেফাজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তবে দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালের পুরনো ভবনের দোতলায় ২০১ নম্বর ওয়ার্ডের ২১১ নম্বর পেয়িং বেডে নিউরো সার্জারি বিভাগের অধীনে ভর্তি রয়েছেন আশরাফ আলী। তার ছেলে মুনতাহা আলীসহ অন্য স্বজনেরাও সেখানে রয়েছেন। তার শয্যাপাশে সাদা পোশা দাঁড়ানো মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের দুজন কর্মকর্তা।
জিজ্ঞেস করা হলে আশরাফ আলীর শয্যাপাশে দাড়িয়ে থাকা ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, “আশরাফ আলীকে গ্রেপ্তার করাই হয়নি।”
তাহলে তারা কেন দাঁড়িয়ে আছেন সেখানে এ প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন, “আপনারা আমাদের স্যারদের সাথে কথা বলেন।”
সেখানে আশরাফ আলীর ছেলে ব্যারিস্টার মুনতাহা আলী বলেন, বুধবার রাত ৩টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল তাদের বাসায় যায়। তার বাবাকে গ্রেপ্তার করতে চাইলে তার মা ও স্ত্রী বাধা দেন। এসময় ডিবির দলটির সঙ্গে তাদের বাগবিতণ্ডা হয়। ডিবির লোকেরা তাকে (মুনতাহা আলীকে) টেনে-হিঁচড়ে মাইক্রোবাসে তোলে। পরে তার বাবাকে রিকশায় করে নিয়ে এসে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে ডিবি সদস্যরা।
“ধস্তাধস্তির সময় পড়ে গিয়ে বাবা কোমরে ব্যাথা পান। চিকিৎসকেরা তার কোমরের এমআরআই করতে দিয়েছেন।”