রাজবন্দিদের মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের ‘অনুকূল পরিবেশ’ তৈরিরও দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ।
Published : 24 Nov 2023, 01:51 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ‘একতরফা’ তফসিল বাতিল করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি সমর্থক সংগঠন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ।
শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের নেতা রুহুল আমিন গাজী এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “আমি পেশাজীবীদের পক্ষ থেকে সরকারকে বলতে চাই, সকল রাজবন্দিদের মুক্ত করে দিন, এই নাটক, সাজা দেওয়া বন্ধ করুন। একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সকল দলের সাথে উন্মুক্ত আলোচনা করুন। এই সংলাপের মধ্য দিয়ে তফসিল পেছান, এই তফসিলের দরকার নেই।”
আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের তারিখ রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দল প্রার্থী মনোনয়নের প্রস্তুতি নিলেও বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে।
গত ২৮ অক্টোবর সংঘর্ষের মধ্যে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর থেকে দফায় দফায় হরতাল-অবরোধের মত কর্মসূচি দিচ্ছে দলটি। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন, বাকিরা বেশিরভাগই আত্মগোপনে।
এ পরিস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের ‘উপযুক্ত পরিবেশ’ তৈরি করার আহ্বান রেখে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, “নতুন তফসিলের মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করুন। পেশাজীবীদের ওপর হামলা বন্ধ করুন, বন্দি রাজনীতিবিদদের মুক্তি দিন।”
গত দুটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, “সরকারকে বলতে চাই, আপনি যদি ভেবে থাকেন, ২০১৪ অথবা ২০১৮ সালের মত নির্বাচন করবেন, আপনি সরকার পরিচালনা করবেন সেকথা আপনি ভুলে যান। সেরকম নির্বাচন মানুষ হতে দেবে না।
“দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়তসহ সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। এভাবে হঠাৎ সাজা দেওয়া বন্ধ করতে হবে। আপনি সবাইকে জেলে পুরে নির্বাচন করবেন আর নির্বাচনী খেলা করবেন এটা চলতে পারে না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম বলেন, “আজকের এই পরিস্থিতিতে জনগণ হতাশ। তারা চায় ভোট দিতে, তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়, তারা চায় গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে।
“যেখানে সমস্ত রাজনীতিবিদরা বেরিয়ে আসবেন, মুক্ত হয়ে আসবেন, একটা প্রতিযোগিতামূলক ইনক্লুসিভ ইলেকশন হবে। এরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে হলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, তাহলেই জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।”
জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দস বলেন, “কীসের জন্য আজকে এই অবস্থা? ১৫ বছরের নির্বাচন নিয়ে যে জাতীয় সমস্যা, এটা আজকে প্রতিটা মানুষ অনুভব করে। একপেশে নির্বাচন করে কোনো অবস্থাতেই সরকার পার পাবে না।
“যেভাবে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর মানুষকে লগি-বৈঠা দিয়ে হত্যা করেছিল, ঠিক সেইভাবে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপির শান্তিপূর্ণ একটি মহাসমাবেশে গোলমাল করেছে, পুলিশ ভাইকে হত্যা করেছে, বিএনপির বহু ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে, সর্বোপরি বিএনপির নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় অফিসসহ বিভাগ, জেলা, উপজেলা, থানা, মহল্লার অফিসে তালা মেরে রেখেছে।
“আর আপনি সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাহেব নির্বাচন করবেন, আর শেখ হাসিনার আপনি একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসবেন, অসম্ভব। দেশের মানুষ কোনো অবস্থাতেই একতরফা নির্বাচনে যাবে না।”
পেশাজীবীদের ‘গ্রেপ্তার ও নির্যাতন’ বন্ধ করা, পেশাজীবীসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের এই সমাবেশ হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, কৃষিবিদ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা তাতে অংশ নেন।
সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকায় সমাবেশে আসতে পারেননি বলে পরিষদের সদস্য সচিব জানান। সমাবেশে শেষে পেশাজীবীরা প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে মিছিল করেন।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় এই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুতফুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক কামরুল আহসান, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাশিদুল হাসান হারুন, জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক আবদুস সেলিম, ডা. শহীদ হাসান, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, শহীদুল ইসলাম, খুরশীদ আলম, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের জাহানারা বেগম, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাখাওয়াত হোসেন, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম সমাবেশে অংশ নেন।