“আমরা বিশ্বাস করি, যারা এখানে রাজনীতি করে, তাদের অধিকার আছে রাজনীতি করার,” বলেন তিনি।
Published : 30 Jul 2024, 08:41 PM
জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের পেছনে সরকারের ‘অন্য কোনো উদ্দেশ্য’ দেখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, “সরকার একটা ইস্যু তৈরি করে সেই ইস্যুকে ডাইভারশনের দিকে নিয়ে যায়…এখন আবার এটাকে তারা…। এটি তাদের আরেকটি প্রজেক্ট। আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমাদের আদর্শ হচ্ছে বহুদলীয় গণতন্ত্র।”
কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে একথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। মঙ্গলবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন তিনি।
ফখরুল বলেন, “পাকিস্তান আমলে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বাম রাজনীতি যারা করতেন মির্জা গোলাম হাফিজ থেকে শুরু করে, হাজী মোহাম্মদ দানেশ থেকে শুরু করে তারা সবাই দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। প্রায় দুই বছর সেখানে থেকে তারা ফিরে আসেন। যখন উইথড্র (নিষেধাজ্ঞা) করা হল, তখন আবার তারা দেশে ফিরে এসেছিলেন। যারা স্বৈরাচারী, যারা ডিকটেটরস, যাদের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না, তারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত বহু নিয়েছে এবং এগুলো তাদের নিতে হয় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে।
“কেন এতদিন (সিদ্ধান্ত) নেয়নি তারা? আজকে এখন নিচ্ছে কেন? এগুলোর পেছনে তাদের অনেক যুক্তি থাকবে, অনেক কথা ওরা বলবে। আমরা যে কথাগুলো বলছি তার বিপক্ষে তারা অনেক কথা বলবে। তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলি যে, আমাদের বক্তব্যে আমরা খুব পরিষ্কার। আমরা বিশ্বাস করি বহুদলীয় গণতন্ত্রে, আমরা বিশ্বাস করি যারা এখানে রাজনীতি করে, তাদের অধিকার আছে রাজনীতি করার।”
গণভবনে সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আানিসুল হক সংবাদমাধ্যমকে জানান, সরকার নির্বাহী আদেশে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জনগণ কার রাজনীতি করবে তা জনগণেরই সিদ্ধান্ত মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “জনগণের দায়িত্ব হচ্ছে কার রাজনীতি সে গ্রহণ করবে, কার রাজনীতি সে গ্রহণ করবে না। এখন এখানে দরকার একটা সুষ্ঠু নির্বাচন, অবাধ নির্বাচন। আজকে যে এত ক্রাইসিস, এর মূলে হচ্ছে যে, এদেশে কোনো প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার নাই। প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার না হলে তো এই সমস্যার সমাধান হবে না।”
জঙ্গিবাদ নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এদেশে জঙ্গিবাদের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এই সরকার পরিকল্পিতভাবে এদেশে জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে। এর বেশি কিছু আমার বলার নেই।”
‘এটা গণহত্যা’
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতায় নিহতের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, “এই যে ঘটনাবলি ঘটে গেছে, মানুষের প্রাণ গেছে, এটাকে আমরা গণহত্যা বলি। অবশ্যই এটা গণহত্যা। আমার লিখিত বক্তব্যে আপনি দেখবেন এটাকে গণহত্যা বলা আছে।
“আমি মনে করি, এই গণহত্যার তদন্ত অবশ্যই জাতিসংঘের তদন্তে হওয়া উচিত। কারণ এই সরকারের কোনো তদন্তে আমরা বিশ্বাস করি না। এরা নিরপেক্ষ না তো, কীভাবে এদের বিশ্বাস করবেন।”
কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের অব্যাহত সমর্থন দেওয়ার কথা জানান বিএনপি মহাসচিব।
‘ডিবির খাবার নাটক’
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “পাঁচ সমন্বয়ককে ডিবি অফিসে হেফাজতে নিয়ে তাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ দিয়ে একটা বক্তব্য দেওয়া হয়েছিল। আপনারা দেখেছেন, একটা খাবার নাটক করা হয়েছে। ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে একটা খাবার নাটক তৈরি করা হয়েছে। ডিবি অফিসের একটা নামই হয়ে গেছে ‘ভাতের হোটেল’ হিসেবে।
“ডিবি সরকারের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের একমাত্র দায়িত্ব কি শুধু যারা আন্দোলন করছে, যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে, অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে, তাদেরকে গ্রেপ্তার-নির্যাতন করা এবং এই সমস্ত নাটক তৈরি করা? নিশ্চয়ই না। ডিবির সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব আছে। সেগুলো তাদের পালন করতে হয়।”
তার ভাষ্য, “এখানে এ ধরনের নাটক, তামাশা তৈরি করে তারা গোটা জাতিকে আমি মনে করি ছোট করেছে, একটা মশকরা সৃষ্টি করেছে। শেষ পর্যন্ত হাই কোর্টের যে মন্তব্য সেটা আপনারা শুনেছেন। হাই কোর্ট পরিষ্কার করে বলেছে, এটা জাতির সঙ্গে মশকরা করা হয়েছে।”