“সরকার বলুক যে, নির্বাচনের দরকার নাই, আমরাই ক্ষমতায় থাকব, দেখি বুকের পাঠা আছে কি না, সাহস আছে কিনা,” বলেন তিনি।
Published : 15 Mar 2025, 08:19 PM
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে তিনি নিজে আশাবাদী হলেও ‘অনেকে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
শনিবার বিকালে বিএনপির এক কর্মশালায় তিনি বলেন, “আমাকে অনেকে বলেন, ভাই নির্বাচন কি হবে.. নির্বাচন কি হবে?”
“আমি রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বলি, আমি আশাবাদী নির্বাচন হবে। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি ভাবি, অনেকে নির্বাচনকে বানচাল করার চেষ্টা করছে।”
মির্জা আব্বাস বলেন, “আমরা তো বার বার বলেছি, নির্বাচন হলে আমাদের মাঠে থাকতে হবে। আমরা মাঠে থাকব। জনগণ যদি আমাদের ভোট দেয় আমরা সরকারে যাব। জনগণ যদি আমাদের ভোট না দেয়, যাকে দেবে তাকে আমরা মেনে নেব।”
অন্তর্বর্তী সরকারকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সংস্কার নিয়ে সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি নির্বাচন গড়িমসির কথা তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচনের কথা শুনলে অনেকেরই ‘মাথা খারাপ’ হয়ে যায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে বিএনপি দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচন দাবি করে আসছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের পক্ষে। আর সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, অল্প সংস্কার হলে এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন, আর সংস্কার শেষ করে নির্বাচন হলে সেটা আগামী বছরের জুনের মধ্যে হবে।
‘সংস্কার সংস্কার বলে মুখে ফেনা তুলা হচ্ছে’
মির্জা আব্বাস বলেন, “আজকে এই সরকার সংস্কার সংস্কার করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলল। কিন্তু সংস্কার কী হল, এটা কিন্তু আমি এখনো দেখি নাই, আমার নজরে আসে নাই কী সংস্কার হইছে, আপনাদের নজরে আসছে কি না জানি না।”
তিনি বলেন, “আপনারা দেখবেন এখানে আপনাদের সামনে যে পোস্টার আছে এই পোস্টারের মধ্যে ১১ দফায় আছে প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন। এটা আড়াই বছর আগে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব বলেছেন। আজকে এই সরকার এর উপরে কাজ করতেছে।
“আমাদের ৩১ দফা নিয়ে যদি সরকার কাজ করা শুরু করতো তাহলে কোনো অবস্থাতেই সংস্কার সংস্কার করে মুখে ফেলা তুলতে হত না।”
রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে ২০২২ সালে বিএনপির তরফে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
সে বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “আড়াই বছর আগে তারেক রহমান সাহেব তার অন্যান্য সহকর্মীদের নিয়ে এই ৩১ দফা প্রণয়ন করেছেন। এই ৩১ দফা প্রণয়নে অনেক সময় লেগেছে। ৬২টি রাজনৈতিক দল এতে মতামত দিয়েছে। তাদের মতামত সন্নিবেশিত করে, দেশের জনগণের জন্য যেটা প্রয়োজন সেটা এখানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।”
‘আপনাদের সাথে মাটি ও মানুষের সম্পর্ক নাই’
মির্জা আব্বাস বলেন, “আজকে যারা সংস্কারের জন্য মাঠে নেমেছেন, সংস্কারের কাজ করছেন, সবাই যার যার অবস্থানে, স্ব স্ব ক্ষেত্রে তারা অত্যন্ত জ্ঞানী-গুণী-বুদ্ধিমান। আমি তাদের সবাইকে সন্মান করি। কিন্তু সন্মানের সঙ্গে এটাও বলতে চাই, আপনাদের সঙ্গে তো এদেশের মাটি ও মানুষের কোনো সম্পর্ক নাই। ছিল না।
“আপনি হঠাৎ করে এসে কী করে বুঝবেন.. এ দেশের মানুষ কী চায়? কী করে বুঝবেন এদেশের মানুষের মনে কথা? কী করে বুঝবেন ১৭ বছর আমরা যে রাস্তায় আন্দোলন করেছি, ১৭ বছর আমাদের নেতা-কর্মীরা যে কষ্ট সহ্য করেছে- এটা কীভাবে অনুভব করবেন?
“আমাদের মনে ব্যথা ও কষ্ট আপনারা কখনোই বুঝতে পারবেন না। তাই সংস্কার সংস্কার করে সময় নষ্ট করবেন না। যথা সম্ভব শিগগির নির্বাচনটা দেন।”
‘নির্বাচন শুনলে অনেকের মাথা খারাপ হয়ে যায়’
বিএনপির এই নেতা বলেন, “আমাদের অনেক ভাই আছেন, ঢাকায় আছেন যারা ইউটিউবে অনেক কথা বলেন। মাঝে মাঝে আমার নজরে পড়ে, তাদের মনে হয় নির্বাচনের কথা শুনলে মাথাটা খারাপ হয়ে যায়। কিছু কিছু রাজনৈতিক দলও আছে নির্বাচনের কথা শুনলে মাথা খারাপ হয়ে যায়। কারণ ওরা কখনো নির্বাচন করবেও না, করেও নাই।”
দ্রুত নির্বাচন চাওয়ার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “নির্বাচন একটা দেশের মানুষকে স্থিরতা দিতে পারে, নির্বাচন একটা দেশকে স্থিতিশীল করতে পারে। দেশের মানুষের অস্থিরতা কমাতে পারে। কিন্তু এই বিষয়গুলো তারা বোঝার চেষ্টা করেন না। তারা শুধু বলেন বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়, নির্বাচন চায়। এ দেশের মানুষের মনে যে অস্থিরতা কাজ করতেছে এটা কি আপনারা বোঝেন না।”
তিনি বলেন, “আমি খুব কঠিন ভাষায় বলতে চাই না, রোজার দিন। কঠিন ভাষায় বললে বলতাম, আরে ভাই ১৭ বছর যে আমরা জেল খাটলাম, ৫ হাজার লোক জান দিল, এত লোকের রক্ত গেল…৩০ হাজার লোক পঙ্গু হল…বাতাস খাওয়ার জন্য।
“এই ত্যাগ হয়েছে নির্বাচনের জন্য, কথা বলার জন্য, অধিকারের জন্য। আরে ভাই, আমি যদি ছেড়েও দেই, চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, নির্বাচন ছাড়া এই সরকার টিকে থাকতে পারবে না। এই সরকার বলুক যে, নির্বাচনের দরকার নাই, আমরাই ক্ষমতায় থাকবো। দেখি বুকের পাঠা আছে কিনা, সাহস আছে কিনা।”
নির্বাচন নিয়ে অনেকেরই ভয় আছে মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, “হ্যাঁ ভয় আছে, কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের ভয় আছে, নতুন রাজনৈতিক দলের ভয় আছে।
“অনেক পুরনো রাজনৈতিক দলের ভয় আছে। তারা নির্বাচনে ক্ষমতায় যেতে পারবে না।”
‘বিশেষ বিশেষ গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা’
মির্জা আব্বাস বলেন, “বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে বিএনপির বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে।
খেয়াল করে দেখবেন পত্র-পত্রিকায় ইদানিং ভালো কিছু লেখতে চায় না, লেখে না বিশেষ বিশেষ কিছু পত্রিকা। আবার বিশেষ বিশেষ কিছু পত্রিকা আছে তারা বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক দলকে নিয়ে অনেক ভালো লেখে।”
বিএনপিকে মাটি ও মানুষের দল হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিএনপি দেশনেত্রীর হাতে পালিত একটি দল, বিএনপি জিয়াউর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠিত একটি দল এই দলকে অনেকের মানতে কষ্ট হয়।”
‘একজন আলেমের মিথ্যাচার’
মির্জা আব্বাস বলেন, “কালকে দেখলাম, বাংলাদেশের একজন শ্রদ্ধেয় আলেম… আজকে তাকে আলেম বলব, তবে শ্রদ্ধেয় বলব না। কারণ তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সম্বন্ধে উদ্ভট কথা বলেছেন ফেসবুকে। উনার বলেছেন, বিএনপির সময়ে দেশে অনেক চাঁদাবাজি, লুটপাট হয়েছে।”
“আমি অবাক হয়ে যাই একজন আলেম লোক… উনি বরাবর আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছেন। ফেসবুকে যেটা (পোস্ট দিয়েছেন) আছে সেখানেও তিনি আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছেন। আমি উনাকে চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই, ওই সময়ে যারা বিএনপি সম্পর্কে লম্বা লম্বা বাজে বাজে কথা বলছেন, আপনি যার সঙ্গে সুর তুলে গতকাল যে কথা বলেছেন, ওই সময়ে আপনারা কনসার্টেটেডওয়েতে বাজনার তালে তালে সবাই মিলে বিএনপিকে কুলষিত করার চেষ্টা করেছিলেন।”
তিনি বলেন, “তার ফলশ্রুতিতে এক এগারো হয়েছিল। আওয়ামী লীগ বলেছিল- আমরাই এনেছি এক এগারো। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই, বিএনপি সম্পর্কে যে সমস্ত কথা-বার্তা বলা হয়েছিল, লেখা হয়েছিলো তা যে একশ ভাগ মিথ্যা ছিল, এটা বাংলাদেশের কোর্ট থেকে প্রমাণিত হয়ে গেছে।
উদাহরণ দিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সকল অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। জিয়াউর রহমানের সকল কার্য্ক্রম স্বীকৃতি পেয়েছে, সেইদিন স্বাধীনতা পুরস্কার ফেরত দেওয়া হয়েছে।
তিনি দাবি করেন “মাওলানা ফয়জুল করিম সাহেবের (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর সিনিয়র নায়েবে আমির) মুখে বিদ্বেষমূলক কথা, অর্থাৎ বিএনপিকে তারা দেখতে চান না।”
অপপ্রচার, গীবত এসব না করার জন্য তিনি ফয়জুল করিমের প্রতি আহ্বান জানান।
রাজধানীর বাসাবো এলাকায় মাদারটেক আব্দুল আজিজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে সবুজবাগ থানা বিএনপির উদ্যোগে দলের ‘৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি ও জনসম্পৃক্তি’ বিষয়ে এই কর্মশালা হয়।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনু। সঞ্চালনা করে সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন।