“সরকারপতনের পর আওয়ামী লীগের যে মন্ত্রী-এমপিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সাবের হোসেনই জামিন পেলেন। আর এমন দ্রুততায় মুক্তি দেওয়ার ঘটনাও বিরল।”
Published : 08 Oct 2024, 06:54 PM
হত্যা মামলায় রিমান্ডে পাঠানোর পরদিনই ছয় মামলায় জামিন দিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দেওয়া হয়েছে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীকে।
মঙ্গলবার বিকালে শুনানি করে সাবেক এই এমপিকে ছয় মামলায় জামিন দেন ঢাকা মহানগরের দুইজন হাকিম। সন্ধ্যায় আদালতের হাজতখানা থেকেই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
সে সময় সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করলেও সাবের হোসেন কোনো উত্তর দেননি। তার আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন পাশ থেকে শুধু বলেন, “উনি অসুস্থ”। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কালো রঙের একটি গাড়িতে করে সাবের আদালত এলাকা ছাড়েন।
একজন আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সরকারপতনের পর আওয়ামী লীগের যে মন্ত্রী-এমপিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সাবের হোসেনই জামিন পেলেন। আর এমন ত্বরিৎ গতিতে মুক্তি দেওয়ার ঘটনাও বিরল।”
ঢাকা-৯ আসনের সাবেক এমপি সাবের হোসেনকে গত রোববার রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সবশেষ মন্ত্রিসভায় তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন।
সোমবার আদালতে হাজির করা হলে বিএনপি কর্মী মকবুল হত্যা মামলায় তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন বিচারক। পাশাপাশি খিলগাঁও থানার দুই হত্যা মামলা এবং হত্যাচেষ্টার আরও দুই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
সেদিন শুনানি শেষে আদালত কক্ষ থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে পুলিশ বেষ্টনী ভেঙে সাবের হোসেনের ওপর হামলা চালিয়েছিল একদল ব্যক্তি।
এরপর ‘শারীরিক অসুস্থতার কারণে’ জিজ্ঞাসাবাদ না করেই মঙ্গলবার সাবের হোসেনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। তখন খিলগাঁও থানার চার মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করেন সাবেরের আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন।
রাষ্ট্রপক্ষে সহায়তা করার জন্য ওই আবেদনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন বিএনপিপন্থি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী। শুনানি নিয়ে ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম মেহেদী হাসান।
এদিকে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর বিএনপি কর্মী মকবুল হত্যা মামলায় সাবের হোসেনকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড ফেরত প্রতিবেদন জমা দিয়ে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন পল্টন মডেল থানার এসআই নাজমুল হাচান।
রিমান্ড ফেরত প্রতিবেদনে বলা হয়, “আসামির রিমান্ড আদেশ মঞ্জুর হওয়ার পরে বিধি মোতাবেক তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তিনি কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারছেন না। কথোপকথনে জানা গেছে, তিনি আগে থেকে শারীরিকভাবে অসুস্থ, তার হার্টে তিনটি রিং পরানো হয়েছে।
“আসামির বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতিতে পুলিশ হেফাজতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আশানুরুপ তথ্য পাওয়া যাবে না। বিধায় বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ০৫ (পাঁচ) দিনের পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ না করে অদ্যই আপনার বরাবর প্রেরণ করা হল।”
এদিন পল্টন থানার আরেকটি হত্যা চেষ্টা মামলায় সাবেরকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ পারভেজ ভুঁইয়া। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পর উভয় মামলায় তার জামিন আবেদন করে শুনানি করেন আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন।
শুনানি শেষে নথি পর্যালোচনা করে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমান।
এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হাজতখানা থেকে মুক্তি পেয়ে গাড়িতে চড়ে বেরিয়ে যান সাবেক এই মন্ত্রী।
পুরনো খবর
আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশ বেষ্টনী ভেঙে সাবের হোসেনকে মারধর
৬ মামলায় জামিন সাবের হোসেনের, মুক্তিতে 'বাধা নেই'