“সরকারের এই অল্প সময়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং কাজ সেগুলোর গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নষ্ট হওয়া, এটাই হচ্ছে বড় ক্ষতি।”
Published : 26 Dec 2024, 03:37 PM
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডকে ‘রহস্যজনক’ ও ‘আশ্চর্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ২টায় নুরুল হক সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। পরে দুপুর সোয়া ২টার দিকে বের হয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নুরুল হক বলেন, “পুরো ঘটনাটাই আশ্চর্যজনক এবং রহস্যজনক। গভীর রাতে এই আগুন যখন ধরল, সেটা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, আমাদের সিস্টেম কত দুর্বল। ফায়ার সিস্টেমও কত দুর্বল।
“সচিবালয়ের মতো জায়গায় আগুন নেভাতে যদি এত ঘণ্টা লাগে, দুই এক ঘণ্টার মধ্যে যদি নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারে, তাহলে তো বুঝতেই হবে যে তারা এখনও অ্যানালগ সিস্টেমে পড়ে আছে।”
বুধবার গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় দশ ঘণ্টা পর সেই আগুন নেভানো সম্ভব হয়।
দশ তলা ওই ভবনেই অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ; পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দপ্তর রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ৬, ৭, ৮, ৯ এই চারটি তলা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম তলায় ক্ষতি হয়েছে বেশি, সেখানকার অধিকাংশ নথি পুড়ে গেছে।
ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন) মোহাম্মদ খালেদ রহীমকে আহ্বায়ক করে গঠিত এই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
নূর বলেন, “ভেতরে কিছু কক্ষ পুড়ে গেছে এবং সবচেয়ে শঙ্কার যেটি, সেটি হল আমাদের উপদেষ্টারাও বলেছেন যে, তারা ইতোমধ্যেই বিগত সরকারের আমলের কিছু প্রকল্পে দুর্নীতি, লুটপাটের বেশ কিছু ঘটনা ছিল, সেগুলো নিয়ে তারা বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করেছিলেন।
“সেই সঙ্গে বর্তমান সরকারের এই অল্প সময়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং কাজ সেগুলোর গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নষ্ট হওয়া, এটাই হচ্ছে বড় ক্ষতি। কারণ, বিল্ডিং একটা নষ্ট হলেও, বিল্ডিং করতে পারবে। বিল্ডিংয়ে আর কয় টাকা যাবে। নথিগুলো এইভাবে পুড়ে গেছে, সেগুলো তো আর ফেরত পাওয়া যাবে না।”
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, “এই ঘটনা কিন্তু আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। এবং আমাদের শিক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে এই ফাইলগুলো আমরা যেভাবে অ্যানালগ পদ্ধতিতে হ্যান্ডেল করি, এখন সরকারি এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলোকে ডিজিটালাইজড করা এখন সময়ের দাবি।”
“সচিবালয়ে ফাইলের স্তুপ, কাগজের স্তুপ থাকা উচিত না। এখন অবশ্যই যেটা জেলা-উপজেলা থেকে আসবে বা কেউ একটা দরখাস্ত দিতে পারে। এগুলোর হার্ডকপি থাকতে পারে। একই সঙ্গে আমি মনে করি, এগুলো যদি এখন ডিজিটালাইজড ডকুমেন্টস থাকত, তাহলে কোনো না কোনোভাবে উদ্ধার করা যেত।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এখানে যেহেতু একাধিক মন্ত্রণালয় ছিল এবং এই সরকারের একটা অগ্রাধিকার যেটা আমরাও বলেছি, বিগত ১৬ বছরে যে দুর্নীতি এবং লুটপাট হয়েছে, সেগুলো তো ইতোমধ্যেই বের হয়ে আসছে, সেটা নিয়ে সরকার কাজ করছে।”
নুর বলেন, “বিভিন্ন উপদেষ্টার সঙ্গে অভ্যন্তরীণভাবে আলাপ আলোচনায় এবং প্রকাশ্যেও আমরা বলেছি, আপনারা অন্তত গত ১৬ বছরে প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ওয়ারী যেসব দুর্নীতি এবং লুটপাট হয়েছে, তার একটা শ্বেতপত্র বা ডকুমেন্ট আপনারা জাতির সামনে প্রকাশ করেন।
“সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি খাতের যে দুর্নীতির একটা শ্বেতপত্র সেটা সিপিডি প্রকাশ করেছে। কিন্তু, মন্ত্রণালয়গুলো যদি সুনির্দিষ্টভাবে তাদের মিনিস্ট্রি ধরে কাজ করে, তাহলে কিন্তু সেটা তারা ব্যাপক আকারে বের করে আনত পারত।”
সচিবালয়ে আগুন: কারণ খুঁজতে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি
সচিবালয়ে আগুন কীভাবে, যা বললেন ফায়ার সার্ভিসের ডিজি