এই ঘটনায় গণতন্ত্র মঞ্চ ও পুলিশ পরস্পরকে দোষারোপ করেছে।
Published : 28 Feb 2024, 12:51 PM
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ এবং ব্যাংক ‘লোপাট’ ও অর্থ পাচারের অভিযোগ এনে সচিবালয় অভিমুখে গণতন্ত্র মঞ্চের বিক্ষোভ পুলিশের লাঠিপেটায় পণ্ড হয়ে গেছে।
বুধবার দুপুরে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের কাছে এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মঞ্চের নেতা বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
এই ঘটনায় পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। তবে এই সংখ্যাটি নিশ্চিত করে জানানো হয়নি।
যা যা ঘটেছে
বেলা ১১টার পর মঞ্চের কর্মীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমবেত হয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সেখানে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের হাবিবুর রহমান রিজু, জেএসডির তানিয়া রব বক্তব্য দেন।
দুপুর ১২টা ৪৭ মিনিটে সমাবেশ শেষ করে সবাই মিছিল করে সচিবালয় অভিমুখে রওনা হন।
মিছিলটি তোপখানা রোড দিয়ে জিরো পয়েন্টের কাছে এসে সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেখানে সড়কের মুখে পুলিশের ব্যারিকেড বসিয়ে রাখে আগে থেকেই।
সেখানে গিয়ে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। তারা ব্যারিকেড ঠেলাঠেলি করে সরিয়ে দিতে গেলে পুলিশের মুখোমুখি অবস্থানে পড়েন।
এক পর্যায়ে পুলিশ হুইসেল বাজিয়ে কর্মীদের সরিয়ে দিতে চায়। তখন নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারতে থাকে। পুলিশ ব্যারিকেডের সামনে এসে এলোপাতাড়িভাবে লাঠিপেটা শুরু করে।
সে সময় জোনায়েদ সাকিসহ বেশ কয়েকজন রাস্তায় পড়ে যান।
পরে সাইফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “হামলা-আক্রমণ করে অতীতে যেমন কোনো স্বৈরাচারী শেষ রক্ষা করতে পারেনি। বর্তমান ‘ফ্যাসিবাদী ভোটবিহীন’ এই সরকারও হামলা-আক্রমণ করে গণতন্ত্র মঞ্চকে আক্রমণ করে শেষ রক্ষা করতে পারবে না।
“অনেক নেতাকর্মীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। জোনায়েদ সাকিকে আমরা এখন হাসপাতালে নিয়ে যাবে।”
পরস্পরকে দোষারোপ
এই ঘটনা নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ ও পুলিশের পক্ষ থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
সাইফুল হকের ভাষ্য, তাদের কর্মীরা এক পর্যায়ে ব্যারিকেড ভেঙে আগাতে চাইলে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। এতে মঞ্চের সমন্বয়ক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যারিকেড ভেঙে কেপিআই এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করলে আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি।”
এ সময় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে শাহ আলম জানান। তবে ঠিক কতজন আটক হয়েছেন, বা তাদের নাম পরিচয় কী, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু তিনি বলতে পারেননি।
এডিসি বলেন, “পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা লাঠিসোঁটা ছুড়ে মারে এবং পুলিশ সদস্যদের লাঞ্ছিত করে।”
কর্মসূচি পণ্ড হওয়ার পর সাইফুল হক জিরো পয়েন্টের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, “কোনো উসকানি ছাড়া পুলিশ আমাদের বিক্ষোভে হামলা চালিয়েছে, তারা লাঠিচার্জ করেছে, জোনায়েদ সাকিকে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে।”
যে পুলিশ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে এই ‘হামলা’ হয়েছে তাদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবিও জানান তিনি।
জোনায়েদ সাকি বলেন, “আমি পুলিশকে নিরস্ত্র করার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আমার ওপর লাঠিচার্জ করেছে।”
তবে এই ঘটনায় গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীদের ‘দোষারোপ’ করে পুলিশের রমনা জোনের এডিসি শাহ আলম মো আখতারুল ইসলাম বলেন, “তারা এসেছেন, আমাদের অনুমতি নেননি। প্রেস ক্লাবের সামনে একটা সমাবেশ করেছেন। আমরা বলেছি, ‘শেষ করে দিন’, উনার শুনেননি। বিক্ষোভ মিছিল করে এখানে (জিরো পয়েন্টের কাছে) এসেছেন।
“উনারা কথা দিয়েছিলেন যে, শান্তিপূর্ণভাবে এসে চলে যাবেন। কিন্তু আমাদের ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয়ের ঢোকার তারা চেষ্টা করেছেন। আমরা বারবার উনাদেরকে বলেছি, ব্যারিকেডের ভেতরে আপনারা প্রবেশ করতে পারবেন না।
“তখন আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্তরা তাদেরকে বুঝিয়েছে। কিন্তু তারা সেটা না শুনে পুলিশ সদস্যদের ওপরে চড়াও হয়েছেন।”
সচিবালয় কেপিআই এলাকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এখানে কোনোভাবেই অবস্থান করা বা প্রবেশ করা সম্ভব নয়। পরে আমরা তাদেরকে মিনিমাম শক্তি প্রয়োগ করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাদের কিছু লোক হাতে লাঠি নিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে আমরা তাদের প্রতিহত করেছি। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছি।”