গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বাতিলের দাবি জানিয়েছে এই মোর্চা।
Published : 08 Jul 2023, 04:42 PM
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনে আপত্তি তুলে গণতন্ত্র মঞ্চ বলছে, এর মধ্যে দিয়ে দিনে ‘ভোট ডাকাতি’র কৌশল করছে ক্ষমতাসীনরা।
নির্বাচনী ্আইন সংশোধনের প্রতিক্রিয়ায় শনিবার ঢাকার তোপখানা রোডে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিক্রিয়া জানায় সরকারবিরোধী এই রাজনৈতিক মোর্চা।
মঞ্চের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “ক্ষমতাসীন সরকার যখন আর একটি একটি সাজানো একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে, তখন ভোট বাতিলে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমানো যে পুরোপুরি দুরভিসন্ধিমূলক, তা স্পষ্ট বোঝা যায়।”
মঞ্চের নেতা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি তাদের আপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, “এখন তারা (ইসি) কী করতে পারবেন? যে কেন্দ্রটাতে তারা ভোট জালিয়াতি দেখছেন, সেই কেন্দ্রটাকে তারা বাতিল করতে পারবেন, পুরো নির্বাচন বাতিল করতে পারবেন না।
“এখন ধরুন ১০০ থেকে ১৪০ কেন্দ্র হয় একেকটি আসনে। এখন ইসি ১৪০টি কেন্দ্রের বুথ পরীক্ষা করতে পারবে? খেয়াল করে দেখেন ১৮০ গুণ ৩০০ … এটা কি সম্ভব? যে জনবল তাদের আছে তা দিয়ে সম্ভব নয়। “
সাকি বলেন, “তারা (ক্ষমতাসীনরা) যেটা চিন্তা করছেন যে, ১৪০টি কেন্দ্রে মধ্যে ১০ টি কেন্দ্র/৫টি কেন্দ্র ওখানে যদি জালিয়াতি, চুরি, ভোট ডাকাতি ধরা পড়ে যায়, তাহলে ওই কেন্দ্র গুলো বাতিল হবে বাকি সমস্ত কেন্দ্র গুলোতে যে ভোট ডাকাতি করলেন, সেটা জায়েজ হয়ে গেল। এর মাধ্যমে ভোট ডাকাতি করে তারা জয়লাভ করলেন।
“এই যে বুদ্ধি তারা বের করলেন, নির্বাচন কমিশনের লোকেরাই বলেন, আর সরকারের লোকেরাই বলেন অথবা বিভিন্ন রকম তাদের পরামর্শদাতারাই বলেন, তাদের জন্য বুদ্ধি বের করে দিয়েছে, কীভাবে দিনে ভোট ডাকাতি করা যায়।”
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের এই সংশোধনী প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে সাইফুল বলেন, “তা নাহলে এই সংশোধনী প্রত্যাহারসহ অবাধ গণতান্ত্রিক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিপন্থি যাবতীয় ধারা ও তৎপরতা বাতিলে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিতের দাবি আদায় করব।”
‘ওরা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করতে চায়’
মঞ্চের নেতা জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, “এখানে নির্বাচন কমিশনের যে ক্ষমতা ছিল, সেটাকে সম্পূর্ণরূপে দলীয়করণ করা হয়েছে। মানে সরকার ভোট ডাকাতি করার জন্য যে সুযোগটা নেওয়া দরকার, আপনারা লক্ষ্য করেছেন কি না, গাইবান্ধার উপ-নির্বাচন বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই সরকার এই সংশোধনীটা পাস করেছে।
“তারা বুঝতে পেরেছে যে, তারা যদি হেরে যায় কোথাও তাহলে নির্বাচন কমিশন এটাকে মেনে নেবে । অতএব সেটা যাতে না করতে পারে, আগামী দিনেও এই সরকার যাতে ভোট জোচ্চুরি, ভোট জালিয়াতি, ভোট ডাকাতি করতে পারে, সেটার জন্য এই সংশোধনী এনেছে। ওরা (সরকার) নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করতে চায়, তারা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।”
রব বলেন, “এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হতে পারে, এটা কোনো পাগলেও বিশ্বাস করতে পারে না। অতএব জনগন ওদেরকে নির্বাচন করতে দেবে না, আমরা দেব না।
“আমরা শুধু একা বলছি না, জনগণ বলছে। এখন ওদের (সরকার) মাথা খারাপ হয়ে গেছে। টেলিভিশনে দেখলাম সেদিন সংসদে বলছে, বাকশালের সময় নাকি বিএনপি গঠিত হয়েছে। ১৯৭৪ সালে কি বিএনপির জন্ম হয়েছিল? বিশেষ ক্ষমতা আইন ৫ মিনিটে করেছে, তখন কি বিএনপির জন্ম হয়েছিলো? পাগল না হলে এই ধরনের উল্টা-পাল্টা কথা বলতে পারে না।”
‘বংশবদ করেও সরকার আস্থা পাচ্ছে না’
মঞ্চের নেতা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “এমনিতেই যে নির্বাচন কমিশন আছে ,এই সরকারের দাসের মতোই… যা বলে তাই করে। আবার এবার যে পরিবর্তনটা করা হল, সেটার সাজেশন একভাবে এই ইসিই দিয়েছে।
“সংশোধনী আনতে হবে কেনো? তার মানে এই সরকার তারই বংশবদ দাস অনুগত দাস নির্বাচন কমিশনের উপরে ভরসা করতে পারছে না। মানে এখন পরিস্থিতিটা এমন হয়েছে যে, পুরো প্রশাসন যেটা পুলিশ বলেন, সিভিল বলেন, যেকোনো ধরনের বিভাগ বলেন কাকে যে সরকার বিশ্বাস করবে তাই বুঝতে পারছে না।”
সংবাদ সম্মেলনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রচার ও মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের দিদারুল ভুঁইয়া, ইমরান ইমন, ছাত্র ফেডারেশনের সৈকত আরিফ উপস্থিত ছিলেন।