মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানেই চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন আ জ ম নাছির উদ্দিন।
Published : 11 May 2015, 07:16 PM
নাছিরকে সংবর্ধনা দিতে সোমবার নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে দল পুনর্গঠনের ঘোষণা দেন সাধারণ সম্পাদক নাছির।
তিনি বলেন, “থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের বলতে চাই, যারা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন তারাই পদ অলঙ্কৃত করবেন। যারা পদে থেকে নিজের কাজ করবেন কিন্তু দলের স্বার্থে কিছু করবেন না, তারা পদ থেকে সরে দাঁড়ান।”
তা না হলে সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ নগর কমিটির নেতাদের নিয়ে সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন নাছির।
“অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এখানে এসেছি। আমাকে অনেকভাবে আপনারা দেখেছেন। ২০১৩ সালে এক কঠিন সময়ে নেত্রী আমাকে সাধারণ সম্পাদকের পদ দেন। তখন অনেকে আমার সম্পর্কে অনেক ধারণা পোষণ করেছিলেন। সব ধারণা মিথ্যে প্রমাণ করে সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করেছি।”
মেয়রের দায়িত্বও দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে নগরবাসী ও চট্টগ্রামের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
১৯৯১ সালের নগর আওয়ামী লীগের সদস্য থাকলেও ২০১৩ সাল পর্যন্ত দলের কোনো পদে ছিলেন না নাছির। তবে পদে না থাকলেও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও পেশাজীবী সংগঠনে নাছির সক্রিয় ছিলেন।
নগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে মহিউদ্দিন ও নাছিরের অনুসারীদের বিরোধ ছিল প্রকাশ্য। পাল্টাপাল্টি কমিটিও গঠিত হয় নগরীর কয়েকটি থানা ও ওয়ার্ডে।
২০১৩ সালের নভেম্বরে কেন্দ্র ঘোষিত কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের পদ পান নাছির। একই সাথে কমিটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ পান নাছিরের অনুসারী নেতারা।
সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পাওয়ার পর কয়েকটি ওয়ার্ড ও থানার নেতাদের সঙ্গে বসে সমন্বয় সাধনের চেষ্টাও করেন নাছির।
সোমবারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শুরুর দিকে উপস্থিত ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। তবে শুরুতে বক্তব্য দিয়েই চিকিৎসকের কাছে যাবেন জানিয়ে চলে যান তিনি।
মহিউদ্দিনের চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর অনেকটা নীরবে মঞ্চ থেকে নেমে যান নগর কমিটির সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও জহিরুল আলম দোভাষ। তবে মঞ্চে ছিলেন মহিউদ্দিনের স্ত্রী নগর মহিলা লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন।
অনুষ্ঠানে আসেননি নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসি ও আফসারুল আমিন এবং কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম।
সংবর্ধনায় নাছির বলেন, “আমার বিজয় একার বিজয় নয়। এটা আওয়ামী পরিবারের, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার বিজয়।
“আমার সাফল্য ব্যর্থতার সাথে দল ও নেত্রীর সুনাম জড়িত। আমাদের এমন কিছু করা উচিত হবে না যাতে সংগঠন প্রশ্নবিদ্ধ হয়।”
অনুষ্ঠানে মহিউদ্দিন বলেন, “নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদের নাছির ভাইকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তাকে ভোটে জয়ী করেছি। তিনি শপথ নিয়ে চট্টগ্রামে এসেছেন।
“কৌতূহল ও আগ্রহ নিয়ে তাকে সংবর্ধিত করছি। বক্তব্য নয়, আমাদের বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। বাস্তব পদক্ষেপ না নিলে আমরা জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলব।”
মহিউদ্দিন চৌধুরী চলে যাওয়ার পর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করা নগর কমিটির সহ-সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “২৭ এপ্রিলের নাছির আর আজকের নাছির এক নয়। তিনি কঠিন দায়িত্ব নিয়েছেন।
“আগে অনেক মেয়রের অপবাদের ভাগি আমরা হয়েছি। উনি ওয়াদা যদি পালন করতে না পারেন তাহলে মানুষ ধিক্কার দেবে। নগরবাসীর পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।”
নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এম এ রশিদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ইসহাক মিয়া, উত্তর জেলার সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহম, সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চু প্রমুখ।